৭ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার, ২:৪৫

সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউ, আবারো ঢাকার চিরচেনা রূপ

এতসব প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও সামাজিক দূরত্ব মানছে না রাজধানীতে বসবাসরত নাগরিকরা। সরকারের লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্তে বাসা থেকে বের হয়ে পড়েছেন তারা। ধীরে ধীরে খোলা হচ্ছে মার্কেটগুলো। রাস্তায় গণপরিবহণ বাস ছাড়া চলছে সবই। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে চিরচেনা যানজট। এক মাস আগে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর রাজধানীর অলিগলি আর রাজপথগুলো অনেকটা সুনসান নীরব নিস্তব্দ হয়ে গেলেও গতকাল থেকে মিলেছে ভিন্ন চিত্র। রিকশা-প্রাইভেট গাড়ি সবই চলেছে। দোকান গুলো খুলে দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারীতে দুশ্চিন্তার কোনো চিহ্ন মিলছে না নাগরিকদের মধ্যে।

গতকাল দুপুর ১২টায় রাজধানীর বাসাবোর বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় দেখা যায়, দুই পাশের ফুটপাথে মাছ, সবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের হাট বসেছে। তার পাশেই বিভিন্ন আইটেমের ছোট-বড় দোকান। বৌদ্ধ মন্দির থেকে কদমতলামুখী রাস্তার দু’ধারে ভ্যানে পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রতিটি দোকানের সামনে ভিড় জমিয়ে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। যাদের অধিকাংশের হাতে নেই গ্লাভস। মুখে নেই মাস্ক। একই দৃশ্য দেখা যায় খিলগাঁও রেলগেট এলাকায়।

সংশ্লিøষ্ট সূত্র জানায়, ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর কয়েক দিন স্থিতিশীল থাকার পর যখন সংক্রমণ বাড়তে থাকে, তখন মার্চের শেষের দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। বন্ধ করা হয় মানুষের জমায়েত, চলাচল, কলকারখানা, গণপরিবহন, দোকানপাট-শপিংমল। মূলত ২৫ মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউনের দিকে চলে যায় বাংলাদেশ।

এখনো সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। গতকাল আক্রান্ত হয়েছে ৭৯০ জন। এমন পরিস্থিতিতে অঘোষিত লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। কলকারখানা খুলে দেয়ার পর এখন দোকানপাট-শপিংমলও খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কারখানা-শপিংমল খুলে দেয়ার পরই বিতর্ক উঠেছে সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে। চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। অনেকে বলছে, সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে লকডাউন শিথিল করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। অবশ্য সরকারের মন্ত্রীদের অনেকের মুখে দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ইউরোপের দেশগুলোর সাথে তুলনা করে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলতে দেখা যাচ্ছে। লকডাউন শিথিলে তাদের অনেকের মন্তব্য ‘জীবন এবং জীবিকা’ দুটোই দেখতে হচ্ছে সরকারকে।

ক’দিন আগে একসাথে গার্মেন্ট কারখানাগুলো চালু করায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকায় ফিরেছেন। এখন ফিরছেন দোকান ও শপিংমলগুলোর মালিক-শ্রমিকরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলছি লকডাউন করতে। আবার যারা ব্যবসাবাণিজ্য করে, তারা চাপ দিচ্ছে যে, না খুলে দিলে আমাদের ক্ষতি হবে। এসব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই মানুষের অবাধে বিচরণ। বেপরোয়াভাবে রাস্তায় নামছেন নাগরিকরা। শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি দেখলে বোঝার উপায় নেই গতকালই ছিল সবচেয়ে বেশি শনাক্ত। অর্থাৎ সারা দেশে ৭৯০ জন নতুন করে আক্রান্ত। সব রাস্তায় যানবাহনও চলছে সমানতালে। কিছু কিছু এলাকায় মিলেছে চিরচেনা যানজটের দৃশ্যও। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমন ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে পালন করা উচিত। কিন্তু তা না মেনে অবাধে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে মানুষ। শপিংমল খুলে দিলে কেনাকাটা করার জন্য মানুষ দলবেঁধে শপিংমলগুলোতে ভিড় করবে। এতে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে। রাজধানীর কাপড়ের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ১০ মে দোকান খোলার যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা দোকানের মালামাল সংগ্রহ ও দোকান গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে ঢাকার পরিস্থিতি। দীর্ঘ দিন দোকান বন্ধ থাকায় ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে ভালো ব্যবসার মাধ্যমে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/500361