৬ মে ২০২০, বুধবার, ২:২১

১০ বছরে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে যাচ্ছে এবার

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.২%; আগামী অর্থবছরে প্রাক্কলন ৮.২%; জিডিপি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক হিসাব

বিগত ১০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে যাচ্ছে। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ধরা হয়েছিল আট দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু করোনার কারণে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা তো দূরে থাক, এর ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছে সরকার। তাই এখন এই প্রবৃদ্ধি অনেকখানি কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে। আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে জিডিপি হবে বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই প্রাথমিক প্রাক্কলন গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় উপস্থাপন করা হয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমলেও জুলাই থেকে শুরু হওয়া আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে ওপরে রাখতে চায় সরকার। এই বাস্তবতায় আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময়ে মূল্যস্ফীতিও সাড়ে ৫ শতাংশের ঘরে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চলতি মাসেই দু’টি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে দু’টি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধস নামবে। চলতি বড়জোর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ থেকে ৩ শতাংশ। সংস্থাটি আরো আশঙ্কা ব্যক্ত করে পূর্বাভাস দিয়েছে এই প্রবৃদ্ধি আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আরো কমে হবে ১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ মাসে বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু সংস্থাটি আশবাদী হয়ে উল্লেখ করে যে, ঠিকভাবে করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশ মোকাবেলা করতে পারলে দেশটির আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। একইভাবে লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’ একই সময়ে বলেছে এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার একমাত্র কারণ করোনা। করোনাভাইরাসের কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব ধরনের বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্থবিরতা নেমে এসেছে। এই কর্মকাণ্ড চলতি মে ও জুন মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। করোনার কারণে রেমিট্যান্স, আমদানি, রফতানি, রাজস্ব আয়Ñ সব কিছুই নেতিবাচক হয়ে গেছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে আনতে হয়েছে। এটি পুরোপুরি প্রাথমিক একটি প্রাক্কলন বছর শেষে তা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করছি, আগামী জুলাই থেকে দেশে ব্যবসা বাণিজ্য পুরোদমে চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের ওপরে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আইএমএফের পক্ষ থেকেও একই ধরনের প্রক্ষেপণ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, এর পরের অর্থবছরে (২০০৯-২০১০) তা বেড়ে হয় ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ২০১৩-১৪-তে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, ২০১৪-২০১৫তে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ২০১৫-১৬তে ৭ দশমিক ১১, ২০১৬-১৭ তে ৭ দশমিক ১৮, ২০১৭-১৮ তে ৭ দশমিক ৮৬ এবং গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয় ৮ দশমিক ১ শতাংশ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/500154/