৫ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ২:০৬

করোনায় আক্রান্ত ৩৫ গণমাধ্যমের ৫৮ সাংবাদিক

প্রাণ হারিয়েছেন একজন

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবী, নিরাপত্তাকর্মীদের মতো পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন সংবাদকর্মীরাও। করোনাযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন একজন সাংবাদিক। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫টি গণমাধ্যমের ৫৮ জন সংবাদকর্মী।

করোনা প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে যেমন মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে যাওয়া সংবাদকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, একইভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন সংবাদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সাংবাদিকরাও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংবাদপত্র প্রকাশনা ও টেলিভিশনের সম্প্রচার। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে দুই সপ্তাহের জন্য। সংবাদকর্মীদের ঝুঁকি কমাতে পালাক্রমে অফিস করা, বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। সংবাদ ব্যবস্থাপনা ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।

‘আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের অধিকার’ নামের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী একটি গ্রুপের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৬টি সংবাদপত্র, ১৫টি টেলিভিশন, দুটি রেডিও, দুটি অনলাইন পোর্টালসহ মোট ৩৫টি গণমাধ্যমের ৫৮ জন সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন একজন ও সুস্থ হয়েছেন ১১ জন। সংবাদকর্মীদের মধ্যে ৪৭ জন ঢাকা আর ১১ জন ঢাকার বাইরের। সবচেয়ে বেশি ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে।

করোনাযুদ্ধে প্রাণ হারানো দেশের প্রথম সাংবাদিক হলেন সময়ের আলো পত্রিকার নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবীর খোকন। তিনি গত মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) রাতে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর স্ত্রী ও সন্তান এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরার তালার সংবাদকর্মী আব্দুস সালামের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রচারিত হলেও পরে তাঁর করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। লিভার সিরোসিসের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আক্রান্ত শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক নাট্যকার এস এম হারুন অর রশীদ। তাঁর স্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে কালের কণ্ঠ’র একজন ফটো সাংবাদিকও রয়েছেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী জানান, এ পর্যন্ত ডিআরইউর ১২ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন এখনো চিকিৎসাধীন।

করোনা পরিস্থিতিতে টেলিভিশন সাংবাদিকদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠান অলওয়েল ডিডি ডট কমের মেডিক্যাল কনসালট্যান্ট ডা. সালেহউদ্দিন জানিয়েছেন, গত ১৬ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৮ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পজিটিভ পাওয়া গেছে ২৪ জনের। তাঁদের মধ্যে ১১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুছ আফ্রাদ বলেন, ‘করোনাযুদ্ধে সাংবাদিকরা সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে লড়ছেন। প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও সর্বসাধারণকে প্রকৃত তথ্য জানানোর জন্য সংবাদকর্মীদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা ও ঝুঁকি ভাতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি দাবি জানিয়েছি। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের জন্য রাষ্ট্রের কাছেও আর্থিক সহায়তা এবং রেশন প্রদানের দাবি জানিয়েছি।’ তিনি জানান, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ তাঁদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের দাবির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। শিগগিরই আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে বলে তথ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2020/05/05/907512