ফাইল ছবি
৪ মে ২০২০, সোমবার, ২:৩১

করোনা সংক্রমণ রোধ: আরও আড়াই হাজার কারাবন্দি মুক্তি পাচ্ছে

মহামারী করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে দেশের কারাগারগুলো থেকে আরও আড়াই হাজার বন্দিকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে তাদের মুক্তি দেয়া হতে পারে। সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত দণ্ডিত এবং যারা ইতোমধ্যে তিন মাস পর্যন্ত সাজা ভোগ করেছেন তাদের মুক্তি দেয়া হবে।

এদিকে রোববার মুক্তি পেয়েছেন ৩৮৫ জন কারাবন্দি। ইতোমধ্যে যারা তিন মাসের বেশি থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাভোগ করেছেন, তারা মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে শনিবার মুক্তি পেয়েছেন ১৭০ জন।

ছয় মাসের বেশি থেকে এক বছর পর্যন্ত তারা সাজা ভোগ করেছেন। রোববার বিকালে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজি কর্নেল আবরাব হোসেন যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, কারা অধিদফতরের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রোববার পর্যন্ত কারা সংশ্লিষ্ট ২০ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। এ ছাড়া সন্দেহজনক অবস্থায় ৭০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, সারা দেশে ৬৮টি কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার। রোববার কারাগারগুলোয় বন্দি ছিল ৮৮ হাজার ৭৭১ জন। যা ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাস কারাগারগুলোয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বন্দিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল আবরাব হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে তিন দফায় পৌনে তিন হাজারের বেশি কারাবন্দিকে মুক্তি দিতে ২৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী রোববার দ্বিতীয় দফায় কারাগারগুলো থেকে ৩৮৫ বন্দি মুক্তি পেয়েছে। জরিমানা পরিশোধ না করায় কয়েকজনের মুক্তি ঝুলে আছে। শনিবার ১৭০ বন্দি ছাড়া পেয়েছে।

কারা অধিদফতরের এআইজি মঞ্জুর হোসেন যুগান্তরকে জানান, দুই হাজার ৩২৯ বন্দিকে শিগগির মুক্তি দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রক্রিয়াগত কারণ এবং নির্ভুল মুক্তির জন্য কিছু সময় লেগেছে। কিন্তু এখন আর বেশি সময় লাগবে না।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ডিআইজি (প্রিজন্স) অফিসের মাধ্যমে কারাগারগুলো থেকে বন্দিদের তালিকা নেয়া হয়। এরপর সেই তালিকা অধিদফতর হয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা আবার অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট ডিআইজি অফিসের মাধ্যমে কারাগারগুলোয় পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে রোববার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রায় আড়াই হাজার কারাবন্দির মধ্যে এ কারাগারের ২৭১ জন রয়েছে। ১৭০ জনের তালিকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১০ জন ছিল।

১০ জনের মধ্যে ছয়জন এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছে। জরিমানা পরিশোধ না করায় চারজনকে এখনও মুক্তি দেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ২৭১ জনের বিষয়ে কারা অধিদফতর বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ময়মনসিংহ বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির বলেন, প্রথম ধাপের তালিকায় ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি কারাগারের চারজন বন্দি ছিল। দ্বিতীয় দফায় দুই বন্দির নাম আছে। দুই দফায় বন্দি মুক্তি দেয়া হয়েছে। তৃতীয় দফার তালিকা আসেনি।

কারা সূত্র জানায়, রোববার পর্যন্ত কারাসংশ্লিষ্ট ২০ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে একজন বন্দি এবং ১৯ জন কারারক্ষী। বিনাশ্রম সাজাপ্রাপ্ত আসামি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

১৯ কারারক্ষীর সবাই কেরানীগঞ্জ কারাগারের স্টাফ। তারা ঢাকা মেডিকেলে ডিউটিতে ছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জন জিনজিরা ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে, আটজন মিরপুর ম্যাটারনিটিতে এবং অপর নয়জন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, রোববার পর্যন্ত কারা সংশ্লিষ্ট ৭০ জন কোয়ারেন্টিনে আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩৩ জন কারারক্ষী ও ২৭ জন বন্দি। সিলেট বিভাগে এক কারারক্ষী ও এক হিসাবরক্ষক এবং চট্টগাম বিভাগে দু’জন কারারক্ষী ও আটজন বন্দি আছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/303920