ফাইল ছবি
৪ মে ২০২০, সোমবার, ২:৩০

চমেক ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় অনিশ্চয়তা

জেনারেল হাসপাতালে ৮ আইসিইউ বেড বসানো শুরু আজ * পৃথক ‘করোনা হাসপাতাল’ পরিচালনায় মাসে তিন কোটি টাকা চান উদ্যোক্তারা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থাপিত করোনা ল্যাব চালু নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় ‘আরটি-পিসিআর’ মেশিনে বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ায় মেশিনটি খুলে নেয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, মেরামতের পর বা নতুন মেশিন এনে লাগানো হবে। তবে কখন লাগানো হবে, সে সম্পর্কে তথ্য দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে নমুনা পরীক্ষায় দেরির কারণে ছাড়পত্র পাচ্ছেন না জেনারেল হাসপাতালে থাকা সুস্থ রোগীরাও। সিআরবিতে রেলওয়ে হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করার কথা থাকলেও, তা করা হয়নি।

হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ১০০ শয্যার পৃথক ‘করোনা হাসপাতাল’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, অর্থ জোগান জটিলতায় তা থমকে আছে। এটি পরিচালনার জন্য মাসে তিন কোটি টাকা চেয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

তবে চট্টগ্রামবাসীর জন্য সুখবর, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আরও ৮টি আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) বেড স্থাপনের অনুমতি মিলেছে। তিন বছর পড়ে থাকা এসব বেড স্থাপনে আজ থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে কাজ শুরু করবেন।

চমেক হাসপাতালে করোনা ল্যাব স্থাপনের জন্য ২০ এপ্রিল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ‘আরটি-পিসিআর মেশিন।’

এর আগেই গণপূর্ত বিভাগ চমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে তৈরি করে দেয় বায়োসেপটিক ল্যাব এবং চিকিৎসক ও রোগীদের বসার ও নমুনা সংগ্রহের আলাদা কক্ষসহ অবকাঠামো। পিসিআর মেশিন আসার পর পাঠানো হয় নমুনা পরীক্ষার জন্য তিন হাজার কিটও।

কাল থেকে এই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে-এমন সুসংবাদ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শামীম হাসান। এতে নমুনা-জট থেকে চট্টগ্রামের রোগীরা কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন-এমন আশার সঞ্চার হয়েছিল।

ত্রুটি ধরা পড়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশন মেশিনটি খুলে নিয়ে গেছে।

সীতাকুণ্ডে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে করোনার পরীক্ষা শুরু হয় ২৬ মার্চ থেকে। ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।

কিন্তু প্রতিদিন চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা থেকে যে পরিমাণ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, এই দুটি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে তার এক-তৃতীয়াংশ।

ফলে দিনদিন তৈরি হচ্ছে নমুনা-জট। এতে রোগী শনাক্তে যেমন দেরি হচ্ছে, তেমনি আক্রান্তদের যারা সুস্থ হচ্ছেন অতিরিক্ত সময় তাদের থাকতে হচ্ছে চট্টগ্রাম আইসোলেশন ওয়ার্ডে। এতে দিনদিন ঝুঁকি বাড়ছে।

জাকির হোসেন রোডে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যার (২০ বেডের আইসিইউসহ) হাসপাতালে রূপান্তর করে সেখানে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য এটি প্রস্তুত করে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন।

এই হাসপাতালে আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর স্থাপনসহ অবকাঠামো মেরামত কাজ শেষ। কিন্তু এর পরিচালন ব্যয় হিসেবে মাসে তিন কোটি টাকার মতো প্রয়োজন জানিয়ে সরকারের কাছে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এত টাকা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম করোনা সেলের প্রধান ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি নিয়ে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। দেড় মাস সময় পাওয়ার পরও চট্টগ্রামের যে প্রস্তুতি, তা হতাশাব্যঞ্জক।

এ হাসপাতালটির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি রোববার যুগান্তরকে বলেন, পৃথক ‘করোনা হাসপাতাল’-এর পরিচালন ব্যয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। রোগীর চাপ বাড়লে যে কোনো মুহূর্তে এই হাসপাতাল চালু করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কেনাকাটায় দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় আটকে ছিল ৮ আইসিইউ বেড স্থাপন। তিন বছর ভেন্টিলেটরসহ মূল্যবান সামগ্রী পড়ে ছিল স্টোররুমে। অনেক দাবি-দাওয়া ও লেখালেখির পর এসব বেড স্থাপনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া গেছে।

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ রোববার যুগান্তরকে বলেন, অনুমতি পাওয়ার পর আমি পড়ে থাকা আইসিইউ বেডগুলো স্থাপনে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি লিখেছি।

তারা সোমবার এসে কাজ শুরুর কথা। এই ৮টি বেড স্থাপন হলে চট্টগ্রামে ভালো মানের (এর আগে স্থাপিত ১০টিসহ) ১৮ শয্যার আইসিইউ হবে। যেখানে শ্বাসকষ্টের রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হবে। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ ইউনিট স্থাপনের জন্য তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোববার পর্যন্ত ৪৭ রোগী ভর্তি ছিল জানিয়ে তত্ত্বাধায়ক অসীম কুমার নাথ যুগান্তরকে বলেন, এর মধ্যে ৮০ ভাগ রোগীই সুস্থ। মূলত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে তাদের ছাড়পত্র দেয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, যারা ভর্তি আছেন তাদের অনেকে চাইলে বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিতে পারতেন। এতে হাসপাতালে চাপ পড়ত না। অন্যরাও ঝুঁকিতে থাকতেন না। করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া বা পজিটিভ রিপোর্ট আসা রোগীরা সামাজিক বিরোধিতার কারণে বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/303916