৩ মে ২০২০, রবিবার, ৬:০৭

বিশেষজ্ঞদের মতামত

এখনই লকডাউন তুলে নেয়া উচিত নয়

ট্রেসিং টেস্টিং চিকিৎসার আওতা বাড়াতে হবে

লকডাউন তুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশ উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, চলতি মে মাসটা দেশের জন্য এলার্মিং। বলা হচ্ছে এ মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হতে পারে। এই মাসটা সাবধানে না থাকলে করোনার মহামারী দেশকে বিপর্যস্ত করে দেবে।

গত কয়েক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য ওঠানামা করলেও এখন আর তিনশ’র নিচে নামছে না। প্রতিদিনই চারশ’ থেকে ছয়শ’র মধ্যে থাকছে আক্রান্তের সংখ্যা। ঠিক এ অবস্থায় বাংলাদেশের অধিকাংশ গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের চলাচলের জন্য কিছু গাড়ি চলাচল করছে। আবার রাজধানীর বাইরে থেকে কিছু গার্মেন্ট কর্মী ঢাকায় এসেছে। দোকান খোলা রাখার সময়ও বাড়ানো হয়েছে। ইফতারির সামগ্রী কেনা-বেচার জন্য দোকান খুলে দেয়া হয়েছে। ইফতারি সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাস্তায় আগের চেয়ে অনেক বেশি গাড়ি চলাচল করছে। আবার সরকারি কিছু অফিসও চালু করা হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের লকডাউন অবস্থা তুলে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এটা ‘এলার্মিং’ বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লকডাউন তুলে নেয়ার কিছু শর্ত দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এ শর্তগুলো পূরণ হলেই লকডাউন তুলে নেয়া যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, রোগের বিস্তৃতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা থাকতে হবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। প্রতিটি আক্রান্তকে চিহ্নিত করে পরীক্ষা করা, আইসোলেট করে (অন্যের সংস্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা) সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনা এবং তার সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করার সামর্থ্য থাকতে হবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের ঝুঁকি সর্বনি¤œ পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থানে কোভিড-১৯ প্রতিরোধক ব্যবস্থা রাখার ক্ষমতা অর্জন করতে পারলেই সেই এলাকা থেকে লকডাউন তুলে নেয়া যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লকডাউন তুলে নেয়ার শর্ত হিসেবে আরো বলেছে, নতুন কোনো কেস দেখা দিলে তা ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা থাকতে হবে সে এলাকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের।

এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ভারতের মতো দেশেও লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ লকডাউন শিথিল করে কারখানা বিশেষত শ্রমঘন পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট ও রেস্টুরেন্টের মতো প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শর্ত ও নীতির সাথে সঙ্গতিপুর্ণ নয়। এতে সংক্রমণ বাড়াবে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তিনি বাংলাদেশ এখনো করোনা সংক্রমণের পিক সময়টিতে পৌঁছেনি। আমাদের উচিত পুরো মে মাসটা লকডাউন অব্যাহত রাখা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) সাবেক পরিচালক বলেছেন, আমাদের জন্য ভালো হবে লকডাউনটা পুরো মে মাস পর্যন্ত চালিয়ে গেলে। একই সাথে ট্রেসিং, টেস্টিং এবং ট্রিটমেন্ট (কার সাথে কে মিশেছে তাদের খুঁজে বের করা, পরীক্ষা করা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসা করা) আরো জোরদার করা। লকডাউন প্রত্যাহার করে নেয়ায় রোগী বেড়ে গেলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। আমরা দেখেছি দেশে যে ক’টা করোনা হাসপাতাল বা ইউনিট চালু করেছি সেখানে রোগী যদি আরো বেড়ে যায় তাহলে সেখানে রোগীর চাপ বেড়ে যাবে, সমস্যা বাড়বে। আমরা সে হাসপাতালগুলোতে এখনই বেশ কিছু সমস্যা প্রত্যক্ষ করছি। হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকেরা স্ট্রেস অনুভব করলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় জনসংখ্যা তাত্ত্বিক এভিডেন্সের ভিত্তিতে এবং বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

বিশিষ্ট অনকোলজিস্ট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক জাতীয় পরামর্শক অধ্যাপক ডা: সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেইন বলেন, এখন যে হারে টেস্ট হচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে না যে আমাদের দেশে কি হারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আছে। দেশে কমপক্ষে দৈনিক ২০ হাজার মানুষকে টেস্ট করাতে পারলে আরো বেশি আক্রান্ত পাওয়া যেতে এবং বুঝা যেতে কি হারে করোনা আক্রান্ত রয়েছে দেশে। তখনই বলা যাবে লকডাউন তুলে নেয়া উচিত কি না। এখনই এ মুহূর্তে লকডাউন তুলে নেয়ার যে তৎপরতা দেখছি তা মনে হচ্ছে করা উচিত হচ্ছে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/499515/