১ মে ২০২০, শুক্রবার, ৪:৫১

সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে গার্মেন্টস

তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজার ধরে রাখতে করোনাভাইরাস ঝুকির মধ্যেই ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণঞ্জজের কয়েক হাজার গ্রার্মেন্টস চালু করা হয়েছে। গত বুধবার হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক কাজে যোগদান করেছেন। এতে করে দ্রুত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরার আশংকা বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, অন্তত আরো ১৫ দিন কঠোর লকডাউন কার্যকর করা উচিত ছিল।

জানা যায়, সারাদেশের সাত হাজার ৬০২টি পোশাক কারখানার মধ্যে গত বুধবার কাজ শুরু করে দুই হাজার ৩৫৬টি। শিল্প পুলিশ জানায়, এর মধ্যে ঢাকার ৪৪৩টি, গাজীপুরে ৬৩৮টি, চট্টগ্রামে ৬০৫টি, নারায়ণগঞ্জে ৩০১টি, ময়মনসিংহে ৮০টি এবং খুলনার ২৮৯টি কারখানা চালু হয়। গতকাল গার্মেন্টস চালুর এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। আগামী কাল ২ মে সবগুলো গার্মেন্টস চালু করার কথা রয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তৈরি পোশাকশিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ঢাকার আশপাশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো সীমিত আকারে চালু করা হয়েছে।

প্রথমে বলা হয়, করোনার মধ্যে বিদেশের অর্ডারের মালামাল দেয়ার জন্য গার্মেন্টস পর্যায়ক্রমে চালু করা হচ্ছে। পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পাওয়া গার্মেন্টস কারখানাগুলো চলবে ঢাকায় থাকা শ্রমিকদের নিয়ে। বাইওে থেকে কোনো শ্রমিককে আসতে দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই ঘোষণা দেন। আবার শ্রম ও কর্মসংস্থার প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের যারা এপ্রিল মাসের দু’চার দিন কাজ করেছেন তারা পুরো মাসের বেতন পাবেন। আর যারা কাজে যোগদান করতে পারেননি তাদের শতকতা ৬০ শতাংশ বেতন দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সারাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা পিঁপিলিকার মতো ঢাকামুখী হয়েছেন।

গণপরিবহনের অভাবে তারা পিকআপ ভ্যান এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়, বাইকে করে ফিরেছেন। নিদারুণ কষ্ট করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কর্মস্থলে এলেও তাদের গুনতে হয়েছে সাধারণ ভাড়ার চেয়ে দিনগুন চারগুন টাকা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার হয়তো সিদ্ধান্তটি নিয়েছে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে। তবে শ্রমিকদের সুরক্ষা নির্দেশিকা তৈরি করার আগে কারখানা চালু করতে দেওয়া উচিত হয়নি। গার্মেন্টস চালু এবং শ্রমিকদের যাতায়াতের পথে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করায় গার্মেন্টসগুলোর শ্রকিদের মধ্যে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, করোনা ঝুকির মধ্যেই গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। এটা গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। এটা লকডাউন নীতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। লকডাউনের অর্থ মানুষ ঘরে থাকবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে। গার্মেন্টস চালু করায় সংক্রমণের হার বাড়বে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল দিপু সাংবাদিকদের জানান, এ পর্যন্ত অর্ধেক শ্রমিক কাজে যোগদান করেছেন। এদের বেশিরভাগই ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার। ঢাকার বাইরে থেকে যারা এসেছেন আমরা তাদের আসতে বলিনি। কারখানা আবার চালু হচ্ছে জেনে তারা ফিরে এসেছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/288283/