২৭ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৪:১২

চাকরি বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই কাজে শ্রমিকরা

চট্টগ্রামে তিন ইপিজেডের ১৩৫টিসহ পৌনে ২০০ কারখানা চালু

চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, কর্ণফুলী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) অর্ধেক এবং বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেড’র সব কারখানা করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের সাধারণ ছুটির মাঝেই চালু হয়েছে। তিন ইপিজেড মিলে ১৩৫টি কারখানা এবং বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রায় ৩০টি কারখানা গতকাল রোববার চালু হয়। এসব কারখানার সোয়া লাখ শ্রমিক চাকরি বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। কর্মস্থলে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও কর্মস্থলে পৌঁছার ক্ষেত্রে এসবের যেন বালাই নেই। এতে বন্দরনগরীর সাধারণ নাগরিকরাও উৎকণ্ঠায় পড়েছেন।

ইপিজেড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশী ক্রেতাদের কার্যাদেশ থাকায় এবং রফতানি খাতকে সচল রাখতে কারখানাগুলো চালু হয়েছে। ‘সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই’ সীমিত পরিসরে এসব কারখানা চালু হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের পরিস্থিতিতে এতে অবশ্যই চরম ঝুঁকি তৈরি হবে। তা ছাড়া কারখানার বাইরে এসব শ্রমিক করোনা ঝুঁকিমুক্ত কি না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে, এমন প্রশ্ন তোলেন তারা।

জানা গেছে, সিইপিজেডে মোট কারখানা রয়েছে ১৫৭টি। গতকাল রোববার সেখানে ৯৩টি কারখানা চালু ছিল। ইপিজেড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব কারখানায় অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। চাকরি হারানোর ভয়েই জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজে যোগ দিয়েছেন বলে একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারাস্থ কেইপিজেডের ২২টি রফতানিমুখী কারখানা গতকাল খুলেছে। এসব কারখানায় প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক কাজে যোগ দেয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের ২০টি কারখানায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজে যোগ দেয়। এর বাইরে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রায় ৩০টি কারখানা চালু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, বৈশ্বিক বাজার হারাতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে গার্মেন্ট কারখানাসহ রফতানিমুখী শিল্প চালু রাখার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান নমনীয়। এই অবস্থানের সুযোগে গতকাল থেকে দেশের রফতানিমুখী কারখানাগুলো সচল হয়। ইপিজেডগুলোতে এবং এর বাইরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা চালু হয়েছে এবং ঝুঁকি নিয়ে এসব কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের সাধারণ ছুটি ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার মাঝে কাজে ফিরছেন এসব শ্রমিক। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানা চালু হয়েছে। কিন্তু এসব শ্রমিক কারখানায় যাতায়াত করছে গাড়িতে গাদাগাদি করেই। কারখানার অভ্যন্তরে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলেও বাইরে যে ঝুঁকি নেই সেই নিশ্চয়তা মিলছে না কারো কাছ থেকেই। বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সঠিক হয়নি। এতে বড় রকমের ঝুঁকি তৈরি হবে এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/498255/