২৭ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৪:১২

করোনায় সুস্থতার চেয়ে মৃত্যুর হার বেশি দেশে

করোনাভাইরাসে দেশ সুস্থতার হারের চেয়ে মৃত্যুর হার বেশি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পাওয়া যায়। গতকাল রোববার পর্যন্ত দেশে সরকারঘোষিত আক্রান্তের মোট সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪১৬ জন। গত ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেদিন বাসাবোতে ৭০ উর্ধ্ব একজন মারা যান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ফেরত তার নিকটাত্মীয় থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেদিন থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। এ হিসাবে দেশে প্রতি ১০০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় দুই দশমিক ৬৮ জন।

প্রথম মৃত্যু ঘটনার কয়েক দিন পর থেকে প্রতিদিনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও দেশে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তরা সুস্থ হচ্ছেন না। গতকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১২২ জন। গত ৮ মার্চ প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর থেকে গতকাল ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫২ দিন চলে গেছে। এ সময়ের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই গড়ে একজন করে মৃত্যু হয়েছে কিন্তু গড়ে একজন করে সুস্থ হননি। গতকাল রোববার পাঁচজনের মৃত্যু হলেও একজনের সুস্থ হওয়ার খবরও দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশব্যাপী চিকিৎসাধীন ছিল পাঁচ হাজার ১৪৯ জন নারী-পুরুষ। এর বিপরীতে দেশব্যাপী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৪১৬ জন।

অপর দিকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য মোট ৪৬ হাজার ৫৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই কিছু কিছু করে সন্দেহজনক মানুষের নুমনা পরীক্ষা করা শুরু করে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। গতকাল রোববার দেশব্যাপী মোট তিন হাজার ৪৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে মোট ৪১৮ জন করোনাভাইরাসে শনাক্ত করা হয়েছে।

গতকাল মোট তিন হাজার ৬৮০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় কিন্তু পরীক্ষা করা হয় পূর্বের কিছু নমুনাসহ তিন হাজার ৪৭৬টি। রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী বলে এখান থেকে পরীক্ষার হারও বেশি। রাজধানী থেকেই গতকাল পরীক্ষা করা হয়েছে দুই হাজার ৩১৩টি। রাজধানীর ৩২ হাজার ৬২ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে থেকে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫২৭টি। গতকাল ঢাকার বাইরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক হাজার ১৬৩টি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক জানান, পরীক্ষা ইদানীং বেড়েছে। এ কারণে করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যাও বেড়েছে। পরীক্ষার সংখ্যা আরো বেশি বৃদ্ধি করে দিলে শনাক্তের সংখ্যাও দৈনিক আরো বাড়বে।

তিনি বলেন, সরকার বর্তমানে পিসিআর টেস্ট করে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করছে। পিসিআর পরীক্ষা খুবই ব্যয়বহুল। আবার এটা দিয়ে অনেক বেশি পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। অনেক বেশি মানুষকে এক সাথে পরীক্ষা করতে র্যাপিড টেস্টের বিকল্প নেই। তিনি জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে র্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ভাবন করেছে তা সরকার যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারে। এটা যদি নির্ভুল হয় তাহলে এই কিট দিয়েই সরকার পরীক্ষার হার বাড়িয়ে নিতে পারে। সরকার ইচ্ছা করলে বিদেশ থেকেও র্যাপিড টেস্ট কিট আনতে পারে। তিনি বলেন, যেভাবেই হোক আরো বেশি পরীক্ষার হার বাড়িয়ে দিতে হবে ভাইরাসটিকে কনটেইন করতে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/498256