২৬ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ৫:০০

বেসরকারি চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করতে বিএমএর চিঠি

বৈষম্যমূলক প্রণোদনায় হতাশা কাটছে না চিকিৎসকদের

করোনা প্রতিরোধে সন্মুখ যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক এসব উদ্যোগ কোনো কাজে আসছে না। এরই মধ্যে সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৪ চিকিৎসক। প্রতিদিনই চিকিৎসক আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে। ফলে সরকারের এসব উদ্যোগে হতাশা কাটছে না চিকিৎসকদের।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ (অনুবিভাগ-১, অধিশাখা-৪) থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়।

পরিপত্রে বলা হয়, যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সরাসরি সেবা দেবেন, তারা করোনাভাইরাস পজিটিভ হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী গ্রেড-ভিত্তিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাবেন। পরিপত্রে সরকারি চাকরিরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে সেবাদানকারীদের কোনো উল্লেখ নেই। অথচ করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে এই মহামারী প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন তিন শতাধিক চিকিৎসক-নার্স এবং দেড় শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী। যাদের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা দানকারীই রয়েছেন। এর মধ্যে বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ ও ফিভার ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাই বেশি।
এ পরিপত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বেসরকারি ডাক্তাররা।

তারা বলেছেন, করোনা রোগীর চিকিৎসা করে করোনায় আক্রান্ত হলে কোনো ক্ষতিপূরণ কিংবা প্রণোদনা যদি বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাওয়ার অধিকার না থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে করোনা রোগীর চিকিৎসা রাষ্ট্র কিভাবে আশা করে? বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার ব্যাপারে হুকুমজারি কিভাবে করে?

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, সরাসরি করোনা রোগীর চিকিৎসা হয় শুধু করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে। অন্য প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা রোগীর থেকে করোনা আক্রান্ত হলে কেউ এই প্রণোদনা পাবেন না। সরকারি স্বাস্থ্য কর্মী (ডাক্তার-নার্স-স্যাকমো-ওয়ার্ড বয়-আয়া-এমএলএসএস) যারা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য সরকারি হাসপাতালে (উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, সদর হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল) কাজ করতে গিয়ে করোনা রোগীর থেকে করোনা আক্রান্ত হবেন, তারা এই প্রণোদনা পাবেন না।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) এর প্রধান সমন্বয়ক ডা: নিরুপম দাশ বলেন, সরকারি ডাক্তার ছাড়াও অন্যান্য ডাক্তার (এমএস-এমডি-ডিপ্লোমা রেসিডেন্ট, অনারারি মেডিক্যাল অফিসার, এফসিপিএস ট্রেইনি, ইন্টার্ন ডাক্তার) যারা সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটগুলোতে কাজ করেন তারা যদি চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে করোনা আক্রান্ত হন তাদের প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

এ দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে গিয়ে আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণকারী ইন্টার্ন, অনারারি, কোর্সে অধ্যয়নরত ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের ক্ষতিপূরণের তালিকাভুক্ত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। গতকাল শনিবার মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়।

বিএমএ মহাসচিব ডা: মো: ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত থেকে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সংক্রমিত হয়েছেন তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। বেতন গ্রেড অনুযায়ী তাদের প্রাপ্যতার বিষয়টিও প্রকাশিত হয়েছে।

এসব আদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসক, অনারারি চিকিৎসক, বেসরকারি চিকিৎসক (রেসিডেন্ট বা নন-রেসিডেন্ট বা ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়নরত) কিংবা অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত যেসব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে যারা করোনা রোগী কিংবা অন্যান্য রোগী (করোনা কি না পরীক্ষা করা হয়নি) চিকিৎসায় নিয়োজিত আছেন এবং করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বিষয়টি কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি সংবেদনশীল বিধায় এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদানের জন্য চিঠিতে স্বাস্থ্য সেবা সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/498066/