২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ৬:১৯

ভারতে করোনা রোগীর ৮০ ভাগই উপসর্গহীন

এ ভাইরাস জাতি-ধর্ম চেনে না : মোদি * রেকর্ড আক্রান্তের মধ্যেও লকডাউন শিথিল

ভারতে করোনা আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীরই কোনো উপসর্গ নেই। তাই এ মুহূর্তে ঠিক কতজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত, তা বলা কঠিন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এমনই উদ্বেগের কথা শোনালেন দেশটির বিজ্ঞানী রমন আর গঙ্গাখেদরকার। ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১ হাজার ৫৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরও সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে কিছু ক্ষেত্রে লকডাউনের কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ দেখে এই ভাইরাস ছড়ায় না। তাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।

আইসিএমআরের বিজ্ঞানী রমন আর গঙ্গাখেদরকার বলেন, উপসর্গহীন রোগীর কারণে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, পরীক্ষা ছাড়া শুধু উপসর্গের ওপর নির্ভর করে করোনা সংক্রমিত রোগী চিহ্নিত করার আর সময় নেই। এই উপসর্গহীন সংক্রমণ কতজনের মধ্যে রয়েছে, তা বলাও ভীষণ কঠিন। তিনি জানান, ভারতে কী হতে চলেছে, কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে চলেছে; তা মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংক্রমণ সর্বাধিক স্তরে পৌঁছতে পারে।

আইসিএমআরের এ বিজ্ঞানীর মতে, করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করতে র‌্যাপিড টেস্ট ছাড়া উপায় নেই। সেই কাজই করা হচ্ছে অধিকাংশ রাজ্যে। তারপরও কতটা সমাধান হবে, সেটা বলা মুশকিল। কারণ, উপসর্গহীন রোগ থাকলে সেটা চিহ্নিত করা খুবই কঠিন।

এর আগে দিল্লিতে উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভারতে সব রাজ্যেই মাত্রাতিরিক্তভাবে ছড়াতে শুরু করেছে। আইসিএমআরের হিসাবে সংক্রমণ ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে ভারতে করোনা সংক্রমণ ১৬ হাজারের বেশি। বাংলাদেশ সময় সোমবার বিকাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৬৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫২১ জনের।

ভারতে করোনা মোকাবেলায় দ্বিতীয় দফায় ১৯ দিনের লকডাউন শুরু হলেও আজ থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ। সেই হিসাবে সোমবার মধ্যরাত থেকেই কৃষি, জরুরি উৎপাদন, পরিবহনসহ ২১টি ক্ষেত্রে কিছুটা বিধিনিষেধে নমনীয় হচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে, বেশকিছু সরকারি দফতরও সচল করা হবে। তবে, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত ৪০ দিন টানা লকডাউনে থাকায় চরম অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হবে, সেটা ভেবেই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলো যৌথভাবে অর্থনীতিকে সচল রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। কলকাতার বিভিন্ন বাজারে জীবাণুনাশক গেট বসানোর কাজ শুরু করেছে কলকাতা পৌরসভা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, মানবদেহে স্প্রে করার জন্য হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার হচ্ছে। এটি ক্ষতিকর নয়। রাস্তায় যেটা ছিটানো হচ্ছে সেটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

জাতি-ধর্ম-বর্ণ দেখে না করোনা : রোববার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ লিঙ্কডইনে দেয়া বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ দেখে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। তাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। মোদির এমন বক্তব্যের পর তাকে খোঁচা দিয়ে বলিউডের নামকরা পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ বলেছেন, ‘ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ, মোদি অবশেষে বুঝলেন, করোনা জাত-ধর্ম মানে না! আগে বুঝলে আরও বেশি উপকার হতো।

মোদি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে জাতি, ধর্ম, শ্রেণি, বর্ণ, ভাষা কিংবা সীমানা দেখে না। তাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ দেখাতে হবে। আমরা এই লড়াইয়ে একসঙ্গে রয়েছি। এই মুহূর্তে ভারতের ‘শত্রু’ একটাই বলে জানিয়েছেন মোদি।

তিনি বলেন, ইতিহাসে আগে অনেকবার একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের শত্রু একটাই। তাই এই একতা ও প্রতিরোধের উপরেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/300074/