২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ৬:০৮

লে-অফ করলে প্রণোদনা পাবেন না শিল্প মালিকরা

ডিমড রফতানিকারকরা এসএমই খাতের প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবেন

কারখানা বন্ধ বা লে-অফ ঘোষণা করলে প্রণোদনা পাবেন না তৈরী পোশাক শিল্প মালিকরা। এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে সাফ জানিয়ে দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, প্রণোদনার অর্থ সচল কারখানাগুলো পাবে। কোনো বন্ধ ঘোষিত কারখানাকে প্রণোদনার অর্থ দেয়া যাবে না। একই সাথে ‘ডিমড রফতানিকারক’ বা থার্ড পার্টি রফতানিকারকরাও এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবেন।

অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। একই চিঠি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তৈরী পোশাক শিল্প মালিকরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা সুবিধা নিয়ে থাকেন। করোনা পরিস্থিতির কারণেও গার্মেন্ট মালিকদের জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্যাকেজের অংশ হিসেবে তৈরী পোশাক শিল্প শ্রমিকদের তিন মাসের বেতনও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরও অনেক শিল্প মালিক তাদের কারখানা লে-অফ ঘোষণা করেছে। আমাদের কাছে খবর আছে, আগামীতে আরো কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এ ধরনের প্রচেষ্টা বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে সচল রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত হচ্ছে, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশের অধিক সরাসরি পণ্য রফতানি করে থাকে তাদের এলসি পরীক্ষাসাপেক্ষে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করা যাবে। তবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি লে-অফ ঘোষণা করে তা হলে ওই সব প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ঋণ পাবে না। ৮০ শতাংশের কম বিবেচিত রফতানিকারকরা ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থেকে ঋণ নিতে পারবে; যা দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করা যাবে।

প্রসঙ্গত, করোনার ক্ষতি থেকে অর্থনীতি রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রফতানিমুখী শিল্প শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল রয়েছে। এই তহবিল থেকে শিল্প মালিকরা ঋণ নিতে পারবেন। এ প্রণোদনা পাওয়ার পরও তৈরী পোশাক খাতের একের পর এক কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হচ্ছে। বিজিএমইএর তথ্য মতে, এরই মধ্যে দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কারখানা লে-অফ করা হয়েছে। লে-অফের পথে রয়েছে আরো কারখানা। বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি শাখা থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে চিঠি দিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধার বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরিভিত্তিতে মতামত পাঠায় অর্থ বিভাগ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছেন। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য এই ঋণ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণের সুদ হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো মতামতে অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে, ২০ হাজার কোটি টাকার এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে যেসব রফতানিকারক ভায়া হয়ে রফতানি করে (ডিমড এক্সপোর্টার্স) তারা ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। এ সুবিধা নিয়ে তারা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে পারবেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/497069/