চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র আনোয়ারা পার্কি সমুদ্র সৈকত : নয়া দিগন্ত
১৮ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ৫:৩৫

চট্টগ্রামে ৩৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে পাউবোর নতুন প্রকল্প

সুরক্ষিত হবে ১১০ কিমি উপকূল

করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে, থমকে গেছে মানুষের জীবন-জীবিকা। সেই সাথে সমাজ সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও তাবৎ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। একই কারণে থমকে গেছে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দেশ সুরক্ষায় গৃহীত হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ। এমতাবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড চলমান হাজার কোটি টাকার কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ জেলার সাগর ও নদীর ভাঙন ঠেকাতে নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করেছে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।

নতুনভাবে গৃহীত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদন স্পট পার্কি সমুদ্র সৈকতসহ সুরক্ষিত হবে জেলার ভাঙনকবলিত প্রায় ১১০ কিলোমিটার উপকূল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনেক কাজ আইসোলেশন মেনে করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করেই চলমান রয়েছে। সেই সাথে চলমান টেকসই কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন এই প্রকল্পগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

নতুনভাবে গৃহীত টেকসই প্রকল্পগুলো হলো আনোয়ারা উপকূল থেকে নগরীর পতেঙ্গা পর্যন্ত সুরক্ষায় ৩২০ কোটি টাকার ৩৮ প্যাকেজের কাজের সাথে ২২০ কোটি টাকা আনোয়ারা পার্কি সমুদ্র সৈকত পুরো ও রায়পুর ইউনিয়ন সুরক্ষায় আরো ১৫ কিলোমিটার অরক্ষিত উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ। একইভাবে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলা সুরক্ষায় ও শঙ্খ নদী খননসহ ৩৫৪ কোটি টাকায় ১২টি প্যাকেজের কাজের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় নদী ও খালের ভাঙন প্রতিরোধে ১৫৪ কোটি টাকায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ। বাঁশখালীতে চলমান বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় বাঁশখালী উপজেলা সুরক্ষায় ২৯৩ কোটি টাকায় ৩৬ প্যাকেজ কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নদী ও সাগর তীর অভ্যন্তরীণ খাল ও নদীর ভাঙন ঠেকাতে ১ হাজার ৩১১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় আরো ৬২ কিলোমিটার উপকূল সুরক্ষায় নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন রেগুলেটর ৭টি এবং ৫৫টি পুরনো রেগুলেটর নির্মাণকাজ হাতে নেয়া হয়েছে। অন্য দিকে সন্দ্বীপের চলমান টেকসই কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৫১৯ কোটি টাকায় নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো ২১ কিলোমিটার সাগর তীর সংরক্ষণে ৫০৮ কোটি টাকা, সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি নতুন রেগুলেটর
নির্মাণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস-কাম রেস্টহাউজ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। সীতাকুণ্ডে ১৯২ কোটি টাকায় চারটি জলাধার নির্মাণ প্রকল্প একই ডিভিশনের অধীনে খাগড়াছড়ির চেংগী নদীর ৯৬ কিলোমিটার ভরাট হওয়া অংশ খনন ও ২০ কিলেমিটার তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১৪ কোটি টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর ছিদ্দিকী ভূঁইয়া বাঁশখালী সীতাকুণ্ড খাগড়াছড়ি ও সন্দ্বীপ সুরক্ষায় নদী ড্রেজিং জলাধার, বেড়িবাঁধ রেগুলেটর নির্মাণ মেরামত ও রেস্টহাউজ-কাম অফিস নির্মাণে ১ হাজার ৩১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ে নতুনভাবে প্রকল্প প্রণয়ন (ডিপিপি) করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদর দফতরে প্রেরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, চলমান কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আনোয়ারার অরক্ষিত উপকূল সুরক্ষায় ১৫ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় জাতীয় অর্থনৈতি পরিষদে (একনেকে) রয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র আনোয়ারা পার্কি সমুদ্র সৈকতসহ পুরো আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষিত হবে। একই সাথে কর্ণফুলী টানেলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুপার ডাইকের আদলে আরো ২১.৫০ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য একটি নতুন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের শঙ্খ নদী ও ডলুখালের ভাঙন প্রতিরোধে চলমান কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ১৩ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প প্রণয়ন করে তা পানি উন্নয়ন বোর্ড সদর দফতরে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই প্রকৌশলী।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/496382