১৮ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ৫:৩৪

নারায়ণগঞ্জের ত্রাণ যাচ্ছে কোথায়

পেটের তাড়নায় পালাচ্ছে মানুষ

নিজের নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডে রাতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ডিসি সেলিম রেজা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ১ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মধ্যে আমরা ত্রাণ পৌঁছে দিতে পেরেছি। এ ছাড়াও আমাদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, শিল্পপতিরাও ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা প্রতিদিন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন। কিন্তু তারপরেও নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে অনাহারীর সংখ্যা। গত কয়েক দিনে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করার চেষ্টা করেছিলেন শত শত মানুষ। তাদের সকলের একটি অভিযোগই ছিল ঠিকমতো আহার জুটছে না। পেটের তাড়নাতেই কোনোমতে গাড়ি ভাড়া জোগাড় করে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা, যাদের গার্মেন্ট খোলা হবে জানিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়েছে। তাদের অনেকে বেতন পাননি। বৃহস্পতিবারও বেতনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করার ঘটনা ঘটেছে।

এ দিকে গত কয়েক দিনে ফতুল্লা এলাকার অনেক মানুষের অভিযোগ ছিল তারা ত্রাণ বা খাদ্যসামগ্রী পাননি। একই অভিযোগ শহর বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীর ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠছে এত ত্রাণ যাচ্ছে কাদের ঘরে?

হরিহরপাড়া এলাকার রাসেল ও রিপন জানান, তাদের কলোনিতে অন্তত ৫০টি পরিবার বসবাস করে। শুরুতে দুইজন তাদের খাবার দিলেও আজ ১৫ দিন ধরে ঘরে খাবার নাই। ফলে তাদের খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাতে হচ্ছে। স্থানীয় কেউ খাবার দিচ্ছে তা দিয়ে দিন পার হচ্ছে। ফতুল্লা পোস্ট অফিস রোড এলাকার আবদুর রহিম জানান, তার বাড়ির পাশে ৩০ জন নি¤œবিত্ত কোনো ধরনের ত্রাণ পাননি। এ ছাড়া সম্প্রতি বন্দরের কয়েকটি ওয়ার্ডেও টানা কয়েক দিন ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ হয়েছে। কাশীপুর ইউনিয়নের দু’টি ওয়ার্ডেও বিক্ষোভ হয়েছে।

অপর দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছে ত্রাণের জন্য। জীবন বাঁচাতে এ জেলা থেকে চলে যাচ্ছেন জীবিকার তাগিদে ছুটে আসা অভাবী মানুষরা। তাদের অভিযোগ, করোনার এ দুর্যোগ মুহূর্তে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ে খরচের বোঝা আর টানতে পারছেন না। সে কারণেই বাধ্যই পেটের তাগিদে নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে হচ্ছে তাদের। গত দুই দিনে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগের সময়ে অন্তত ৭০০ মানুষকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এর ফাঁকেও অনেকে নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন আটক ওই সব লোকজন।

তাদের কয়েকজন জানান, তারা মূলত দিনমজুর। বাড়ি জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ এলাকাতে। বেশির ভাগ আলীগঞ্জ পাগলা এলাকাতে লোড-আনলোড, রিকশাচালক, অটোরিকশা চালক, দিনমজুর, রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কিন্তু ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনের কারণে তাদের দিন চলছে না। যেসব বাসায় থাকতেন তার ভাড়া দিতে পারছেন না। সরকারি ত্রাণ মিলছে না তাদের। ঠিকমতো খাবার জুটছে না বিধায় নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগের সময় আটককৃতদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওই সময়ে একজন নারী বলেন, কয়েক দিন ধরে বাসায় খাবার নাই। ঘরভাড়া দিতে পারতাছি না। কোনো কাজ নাই। ঠিকমতো খাইতে পারতাছি না। পেট তো চালাইতে হইব। মাইয়াডার চেহারাটা একটু দেখেন স্যার। গর্ভবতী কিন্তু খাওয়াতে পারছি না। আমরা কি সাধে যাইতাছি? এখানে থাকলে আমরা না খাইয়া মইরা যামু। স্যার, আপনি কি আমাদের না খাইয়া মরতে কন!

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান জানান, একটানা লকডাউনের কারণে শুধু দিনমজুর বা হতদরিদ্ররাই নন, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন। তারা না পারছেন কাউকে বলতে না পারছেন চাইতে। আমার কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতে ফতুল্লা থানার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডে মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে এই উপহার দিয়ে এসেছেন। একটি মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই ব্যবস্থা করছি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/496389/