৯ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৩:৫১

করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু

ঢামেক হাসপাতালের আইসোলেশনে রোগীর মৃত্যু

দেশের ১৫ জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে এক রোগী, রংপুরের কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরে দুই নারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে যুবক, শরীয়তপুর সদরে নারী ও নড়িয়ায় যুবক, গাজীপুরের টঙ্গীতে তরুণ, কাপাসিয়ায় চিকিৎসাকর্মী ও কালিয়াকৈরে বৃদ্ধ, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বাসের সুপারভাইজার, রাজশাহীর বাঘা ও পিরোজপুরের নাজিরপুরে তাবলিগ ফেরত দুই বৃদ্ধ, নীলফামারীর ডোমারে বৃদ্ধ, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে তরুণ, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক ব্যক্তি, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে এক শ্রমিক, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শিশু, টাঙ্গাইল শহরে এক ব্যক্তি ও কুমিল্লার মুরাদনগরে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী মারা গেছে। যুগান্তর রিপোর্ট, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঢাকা : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে আইসোলেশনে পাঠান। পরে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। বিকালে তিনি মারা যান। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, যদি রিপোর্টে করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে তাহলে যথাযত পদ্ধতিতে দাফন করা হবে। আর নেগেটিভ এলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রংপুর ও কাউনিয়া : মিঠাপুকুরের ভাংনি ইউনিয়নের কামালপুরে এক নারী জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের হাসপাতালে মারা গেছেন। এরপর নমুনা সংগ্রহের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নমুনা নেয়ার পর লাশ মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। লাশ নিয়ে আসার পর অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও ওই নারীর স্বজনরা গা ঢাকা দেয়। পরে ওই নারীর স্বামী এসে লাশ নিয়ে যান। মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. আবদুল হাকিম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে এক নারী মারা গেছেন। ওই নারী উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার মেনাজবাজার গোল্ডেন ঘাট এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী। হারাগাছ ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. সামসুজ্জামান জানান, ওই নারী কয়েকদিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার রাত থেকে গলাব্যথা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

বুধবার সকালে ডায়রিয়া শুরু হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। হাসপাতালে আনার আগে পথেই তিনি মারা যান। তিনি আরও জানান, ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উলফৎ আরা বেগম জানান, ওই নারীর পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া (নবীনগর) : নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুধবার জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এক যুবক মারা গেছেন। চিকিৎসক তার কিছু পরীক্ষা করে অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ভর্তি না করে দ্রুত ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গাড়িতে তোলার আগেই তিনি মারা যান।

ওই যুবকের বাড়ি পাশের মুরাদনগর উপজেলার বলিঘর গ্রামে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোশরাত ফারখান্দা জেবিন বলেন, নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। যে ডাক্তার তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন তাকে আলাদা রুমে রাখা হয়েছে।

শরীয়তপুর : নড়িয়া উপজেলায় জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকালে ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের কলারগাঁওয়ে তিনি মারা যান বলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রাজিব হাওলাদার জানান। বাড়ির সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। এছাড়া শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি এক নারীর করোনাভাইরাসের সবধরনের উপসর্গ দেখা দেয়ায় আইসোলেশন ইউনিটে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তার বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের ধামসী গ্রামে।

কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কাপাসিয়ায় মঙ্গলবার রাতে জ্বর ও ঠাণ্ডা কাশিতে এক চিকিৎসা কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি উপজেলার টোক ইউনিয়নের উলুসরা গ্রামে। মৃতের ও পরিবারের অপর ৫ সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমত আরা জানান, আমরা ওই পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের রশিদপুরে বুধবার এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাঁপানি, সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। এলাকাবাসী করোনাভাইরাস সন্দেহ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নাজমুন নাহার জানান, ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হবে।

টঙ্গী (গাজীপুর) : আউচপাড়ায় এক তরুণ মঙ্গলবার রাতে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছে। এলাকাবাসী তার বাড়িসহ আশেপাশের সব বাড়ি লকডাউন করে রেখেছেন। ওই তরুণ পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকত। মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনি মারা যান। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিষয়টি শুনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

কিশোরগঞ্জ : করিমগঞ্জ উপজেলায় বুধবার নিজ বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি গুজাদিয়া ইউনিয়নের বৈরাটিয়া পাড়ায়। গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ওই যুবক শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ওই ব্যক্তির নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : নিজ বাড়িতে বুধবার জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টে বাসের সুপারভাইজার মারা গেছেন। তার বাড়ি বাগধা ইউনিয়নের পূর্ব বাগধা গ্রামে। উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম, থানার ওসি আফজাল হোসেন তার বাড়িতে গিয়ে ১৬টি বাড়ির প্রায় ৬০টি পরিবারকে লকডাউন করে দেন।

বাঘা (রাজশাহী) : কুষ্টিয়া থেকে রাজশাহীর বাঘায় ফেরা তাবলিগ জামাত করা এক বৃদ্ধের বুধবার সকালে মৃত্যু হয়েছে। করোনায় তার মৃত্যু হতে পারে সন্দেহ ৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও তার কাছে কেউ যাননি। সকাল ১০টা পর্যন্ত লাশ মৃত্যুস্থানে পড়ে ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা জানান, নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দায়িত্বরত চিকিৎসককে বলা হয়েছে।

পিরোজপুর : নাজিরপুর উপজেলার করোনা উপসর্গ নিয়ে তাবলিগ জামাত ফেরত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ভোররাতে নাজিরপুর উপজেলার শাঁখারীকাঠী ইউনিয়নের মাদুলিহারানিয়া গ্রামে তিনি মারা যান। গত কয়েকদিন ধরে তার জ্বর ও গলাব্যথা ছিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান জানান, ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে টেস্ট করতে পাঠানো ও ওই এলাকা লকডাউন করার প্রক্রিয়া চলছে।

ডোমার (নীলফামারী) : জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় এক বৃদ্ধ মঙ্গলবার রাতে মারা গেছেন। বুধবার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম জানান, ওই ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) : ধানকোড়া গোলড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে ঠাণ্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ, তিন পরিবার ও স্থানীয় চিকিৎসককে কোয়ারেন্টিনে রেখেছে। সাটুরিয়া থানার ওসি মতিয়ার রহমান মিঞা বলেন, ওই ব্যক্তির জানাজা ও দাফন উপজেলা প্রশাসনসহ আমরা উপস্থিত থেকে সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছি।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বক্তারপুরে জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক শ্রমিক মারা গেছেন। ওই বাড়িসহ ১০ বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। মৃত ব্যক্তিকে দেখতে আসা দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের মাঝেরগাঁও গ্রামের দুই আত্মীয়ের বাড়িও লকডাউন করেছে প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, বুধবার মেডিকেল টিম ওই ব্যক্তিসহ তার পরিবারের সবার নমুনা সংগ্রহ করেছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রামে বুধবার জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ১৩ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিম ওই শিশুটির নমুনা সংগ্রহ করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক ওই পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছেন।

টাঙ্গাইল : জেলা শহরে বুধবার সন্ধ্যার পর ঠাণ্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এরপর তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তিনি শহরের ঢাকা রোড বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাসিন্দা। সন্ধ্যার পর তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ওই হাসপাতালে রওনা হওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।

মুরাদনগর (কুমিল্লা) : উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের বলীঘর গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবক মারা গেছে। সে শ্রীকাইল সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং পায়ের সমস্যার কারণে বুধবার দুপুর ২টার দিকে নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয় ওই যুবককে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু ঢাকার উদ্দেশে গাড়িতে তোলার আগেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং মারা যায়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/296894/