৭ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ৫:১২

করোনায় প্রবাসীদের বেকারত্ব বাড়ছে

অসহায় কয়েক লাখ প্রবাসী * জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

করোনাভাইরাসের আঘাতে সারাবিশ্বই স্থবির। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা লাখ লাখ প্রবাসী। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশের মাটিতে মারা গেছেন অনেকে। এ ছাড়াও সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় লাখ অভিবাসী আটকা পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন যাদের বৈধ ভিসা নেই। এদের বড় অংশই কাজ ও আয়ের অভাবে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।

অন্যদিকে প্রবাসীদের এই দুরবস্থা রেমিটেন্সেও প্রভাব পড়ছে। গত দুই মাসে ৩৬ কোটি ডলার রেমিটেন্স কমেছে। যা স্থানীয় মুদ্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় প্রবাসীদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সহায়তার কথা বলছেন, অর্থনীতিবিদ ও এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এই দুর্যোগের কারণে সারা পৃথিবীতেই একটি মন্দা আসবে। এতে প্রবাসীরা তাদের কাজ হারাবেন। এতে রেমিটেন্স (প্রবাসী আয়) কমবে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির ৯টি মৌলিক সূচকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। কিন্তু করোনার কারণে সেই রেমিটেন্সই কমছে। এটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, প্রবাসীরা বেকার হলে দেশে তাদের স্বজনরাও বিপদে পড়বেন। এতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা আরও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া আগামী বাজেটে কর অব্যাহতি সীমাও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুসারে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৬-৭ লাখ মানুষ বিভিন্ন দেশে যায়। আর বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছেন। এসব প্রবাসী বছরে ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। স্থানীয় মুদ্রায় যা এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। যা দেশের মোট রফতানি আয়ের অর্ধেকের বেশি। প্রবাসীদের বড় অংশই থাকে সৌদি আবর এবং সংযুক্ত আবর আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। আবার এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবাসীর কাজের বৈধ ভিসা নেই। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের কাজ পাওয়া অনিশ্চিত।

গত বছরও বিদেশে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও ইতালি। সব ক’টি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সবাই গৃহবন্দি হয়ে আছেন। ছোট আকারের বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছেন। এসব দেশের প্রবাসীরা বলছেন, বাইরে সব কাজ বন্ধ। অল্প কিছু জমা টাকা দিয়ে দিন পার করছেন। তবে প্রবাসীদের পরিস্থিতি নজরদারির জন্য অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি করেছে প্রবাসী মন্ত্রণালয়। এ কমিটি বলছে, অনেক জায়গায় নিয়োগকর্তার কাছ থেকে প্রবাসীরা সহায়তা পাচ্ছেন। যারা নিয়মিত কর্মী নন, তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। দূতাবাস ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দিচ্ছে। বিদেশের সব মিশন ও শ্রম বিভাগ থেকে নিয়মিত তথ্য নেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের খাদ্য, আবাস, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে আমরা তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। প্রথমত প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ বিদেশে যায়। কিন্তু মার্চ মাস থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে। আর এ অবস্থা তিন মাস চলতে থাকলে দেড় লাখ লোক বিদেশে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। দ্বিতীয় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আড়াই লাখ প্রবাসী বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে। এর মধ্যে সৌদি আবর থেকে আসছে ৪১ হাজার। এছাড়াও আরব আমিরাত মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর থেকে অনেক মানুষ আসছে। এরা আবার বিদেশে ফেরত যেতে পারবে কিনা সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তৃতীয়ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি লোক প্রবাসী।

এদের মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নার্সসহ বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত মাত্র ২ শতাংশ। এরা হয়তো নিয়মিত বেতন পাবেন। বাকিদের বড় অংশই দৈনন্দিন বা মাসিক চুক্তিতে কাজ করেন। এদের অর্ধেকও যদি কাজ হারায়, তবে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, এসব প্রবাসী টাকা পাঠাতে না পারলে দেশের রিজার্ভে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ ছাড়াও অনেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এ কারণে পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোসহ বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/296285