৭ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ৫:১০

করোনায় বাজেট ভর্তুকি ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা

করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে ৪৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। তবে করোনার কারণে নতুন নতুন খাতে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার কারণে এই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে, যেখানে এই ভর্তুকির পরিমাণ অর্ধলাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং সেটি হলে তা হবে একটি রেকর্ড। কারণ বাংলাদেশে ইতিহাসে অতীতে কখনো এক অর্থবছরের বাজেটে এত বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি ও আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়নি।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গত রোববার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা যে প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে সেটির দু’টি প্যাকেজের জন্য সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করতে হবে দুই হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এটি বাজেটে রক্ষিত ভর্তুকির অতিরিক্ত। পরবর্তীতে আরো কিছু প্যাকেজ ঘোষিত হলে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। আর এতে করে বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় আরো বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত চার প্যাকেজের মধ্যে প্রথম প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। সুদের অর্ধেক সরকার ভর্তুকি দেবে। বাকি অর্ধেক দিতে হবে উদ্যোক্তাদের। দ্বিতীয় প্যাকেজে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা দেয়া হবে। এর সুদ হারও হবে ৯ শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার ৫ শতাংশ সুদ ভতুর্কি দেবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথম প্যাকেজের জন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় প্যাকেজ বাস্তবায়নে ভর্তুকি গুণতে হবে আরো এক হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বাজেটে ৪৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকার যে ভর্তুকি রাখা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে গ্যাস। এ বছর আমদানিকৃত রুপান্তরিত ঘনীভূত গ্যাস (এলএনজি) খাতে ভর্তুকি জন্য রাখা আছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিসি) ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বিজিএমসিকে দেয়া হচ্ছে চার হাজার কোটি টাকা। গামেন্ট খাতে এক শতাংশ প্রণোদনায় ব্যয় হবে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। রেমিট্যান্সখাতে ২ শতাংশ প্রণোদনায় খরচ হবে আরো ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা আগামী ১৫ দিনের আগে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে না। এখন যা অবস্থা তাতে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কলকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি আরো বেশি দিন বন্ধ রাখার প্রয়োজন হয় তখন অর্থনীতির ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবে। তখন আরো নতুন নতুন খাতে আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রয়োজন দেখা দেবে। আর এতে করে ভর্তুকির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

এ দিকে গত অর্থ বছরে যে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎখাতে। এ খাতে বরাদ্দ ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এরপরই কৃষিখাতে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। এর আগের অর্থবছরের(২০১৭-২০১৮) বাজেটে , ভর্তুকি, নগত সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/494151