৪ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১২:৫৯

চট্টগ্রাম

এত পিপিই গেল কোথায়

সিভিল সার্জন বলছেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন চট্টগ্রামের ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন বলছেন, দুই হাজারেরও বেশি পিপিই ও মাস্ক বিলি করেছেন তারা। এখনও তাদের কাছে মজুদ আছে সাড়ে পাঁচ হাজার চিকিৎসা সরঞ্জাম। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চার শতাধিক ডাক্তার ও নার্সকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়েছেন তারা। তবে ডাক্তাররা বলছেন, পিপিই না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে তাদের। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই তাদের কাছে। এটিকে কারণ হিসেবে ব্যবহার করে অনেকে বসছেন না চেম্বারে। রোগী দেখছেন না হাসপাতালে। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা বলছেন, পিপিইর অভাবে চিকিৎসা না করাটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে- এত পিপিই গেল কোথায়? প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার এক বক্তব্যে সারাদেশে তিন লাখ পিপিই স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, 'নগরের জেনারেল হাসপাতাল ও সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ রোগের চিকিৎসা দেবে। তাদের সবার পিপিই দরকার নেই। যে দুটি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাতে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রত্যেককে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও আছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। পিপিই কিংবা মাস্ক না থাকার অজুহাতে কেউ চিকিৎসা বন্ধ রাখতে পারেন না।'

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, 'চট্টগ্রামের জন্য এ মুহূর্তে আমার হাতে সাড়ে পাঁচ হাজার পিপিই ও মাস্ক মজুদ আছে। দুই হাজারেরও বেশি পিপিই আমরা বণ্টন করেছি। এটির কোনো সংকট নেই। বরং উদ্বৃত্ত আছে চিকিৎসা সুরক্ষার সরঞ্জাম। এর পরও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পিপিই দিচ্ছে। চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় ১০০টি করে পিপিই দিচ্ছে এস আলম গ্রুপ। তার পরও কেউ যদি সংকটের কথা বলে, সেটি অযৌক্তিক।'

করোনা চিকিৎসায় জেলা ও উপজেলায় কত সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স নিয়োজিত আছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গঠিত কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, 'আমার জানা মতে জেনারেল হাসপাতালে ৬০ জন ডাক্তার, ৮০ জন নার্স ও বিআইটিআইডিতে ৩৫ জন ডাক্তার ও ৪৫ জন নার্স করোনা চিকিৎসার কাজে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় ২১৮ জন ডাক্তার ও ২৫০ জন নার্স করোনা রোগীর সেবায় প্রস্তুত আছেন। এ হিসাবে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা সব মিলিয়ে চার শতাধিক হবে। তবে এ মুহূর্তে সবাই একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, এমনও নয়। তিন শিফটে ভাগ হয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ করছেন ডাক্তার ও নার্সরা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পিপিই ও মাস্ক দেওয়া আছে প্রত্যেককে। আছে বাড়তি মজুদও। পিপিই ও মাস্কের অজুহাতে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই।'

স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমনটি বললেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করা ডাক্তাররা বলছেন ভিন্নকথা। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পিপিই ও মাস্ক পাননি তারা। নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পর্যায়ে কাজ করা এক ডাক্তার বলেন, 'যে মাস্ক ও গ্লাভস দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। হেড কভার ও শু কভার পাইনি। সরকারিভাবে যে পিপিই পেয়েছি, সেটি পরতে হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম লাগে। বেসরকারিভাবে পাওয়া পিপিই দিয়েই এখন প্রয়োজন সারছি আমি। আমাদের এখানে কোনো নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী পিপিই পাননি। অথচ একজন ডাক্তার রোগীর সঙ্গে থাকেন মাত্র পাঁচ মিনিট। তবে নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী কিংবা ওয়ার্ডবয় একজন রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে যান। তাদের জন্য এখনও সরকারিভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম আসেনি।'

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, 'এক শিফটে আমার প্রায় ৩০ জন ডাক্তার ও নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারিভাবে কিছু পিপিই বৃহস্পতিবার পেয়েছি। তবে এগুলো পর্যাপ্ত বলা যাবে না। তাই বেসরকারিভাবে সংগৃহীত কিছু চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সেবার কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। আশা করছি পর্যায়ক্রমে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীর জন্য পর্যাপ্ত পিপিই পেয়ে যাব।'

উপজেলা পর্যায়ে এমন চিত্র থাকলেও কোথাও কোথাও পিপিই গেছে প্রয়োজন ছাড়াই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্বর কিংবা শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য দুটি কর্নার আছে। সেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় না। তার পরও মেডিকেলের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের ডাক্তার পেয়েছেন পিপিই। নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার সানাউল্লাহ শামীম বলেন, 'আমাদের ওয়ার্ডে ২৮টি পিপিই দেওয়া হয়েছে স্বাচিপের মাধ্যমে। আমরা সরাসরি করোনা রোগী দেখি না। কিন্তু কার কাছে যে এ রোগের ভাইরাস আছে, তা তো আর দেখতে পাই না। তাই আমাদেরও অন্য অর্থে পিপিইর দরকার আছে। যারা সরাসরি করোনা রোগী নিয়ে কাজ করছেন তাদের এটি বেশি দরকার।'

https://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/200434950