৪ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১২:৪৫

থামছে না জনসমাগম

বাড়ছে লকডাউন

আরো পাঁচ করোনা রোগী শনাক্ত; লক্ষণ নিয়ে আরো চারজনের মৃত্যু; বেশি বেশি টেস্ট করার পরামর্শ ডব্লিউএইচওর; মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ালে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি

করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলেই অসুস্থের বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় জনসমাগম বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। হাটবাজার, চায়ের দোকানে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক লোক। এসব লোক মানছে না সামাজিক দূরত্ব। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে নতুন কেউ মারা যাননি। দেশে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬ জন। তবে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা গেছেন আরো চারজন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রাইভেট চেম্বারে রোগী না দেখায় চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর গণমাধ্যমকে পজেটিভ নিউজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ভুল রিপোর্ট প্রকাশ করলে কিংবা বিভ্রান্তি ছড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো পাঁচ রোগী শনাক্ত : বেশি বেশি টেস্ট করার পরামর্শ ডাব্লিউএইচওর

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, দ্রুততম সময়ে এবং বেশি করে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডাব্লিউএইচও। সে অনুযায়ী সরকার এপ্রিল মাসে সারা দেশে ২৮টি পিসিআর মেশিন বসানোর কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকার মধ্যে নয়টি এবং ঢাকার বাইরে পাঁচটি স্থানে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু করেছে।

এ দিকে গতকাল শুক্রবার ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো পাঁচজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। মোট ৫১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের কোভিড-১৯ পাওয়া যায়। এর মধ্যে আইইডিসিআর পরীক্ষা করেছে ১২৬টি এবং বাকিগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে অন্যান্য ল্যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা চিকিৎসার ব্যাপারে বলেন, জেলা পর্যায়ে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্তদের বহন করার জন্য পৃথক অ্যাম্বুলেন্স নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসকেরা প্রাইভেট চেম্বারের রোগী দেখছেন না। এটা মেনে নেয়া যায় না। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রটোকল তৈরি করেছি। চিকিৎসকেরা সে প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, আপনারা পজিটিভ নিউজ করুন। আপনাদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারছি দেশের বিভিন্ন স্থানে কী রকম চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং আনাচে-কানাছে মানুষ ঘোরাফেরা করছে। আপনারা অনেক ভালো করছেন। কিন্তু কিছু গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি ভুয়া নিউজ দেয়া হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপনারা পজেটিভ নিউজ করুন যাতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারি।

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছিলেন যে প্রতি উপজেলা থেকে দু’টি করে নমুনা প্রতিদিনই পরীক্ষা করতে। এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৫১৩টি নমুনা সংগৃহীত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত তাদের কাছে ২২টি জেলার নমুনা এসে পৌঁছেনি। তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষা আরো বাড়াব এবং অন্যান্য ল্যাবরেটরিগুলোতে আরো কিট দেয়া হবে। আপনারা উদ্বিগ্ন হবেন না। ব্রিফিংয়ে বলা হয়ে, অন্যান্য ল্যাবরেটরিগুলোকে কিট দেয়ার পর আইইডিসিআরের কাছে এখনো কিট মজুদ আছে ৭১ হাজার।

যে পাঁচটি নমুনা করোনাক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে এর মধ্যে আইইডিসিআরের পরীক্ষায় পাওয়া গেছে দু’টি। অবশিষ্ট তিনটি নমুনা অন্য ল্যাবগুলোতে পরীক্ষা করা হয়েছে। অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাইরের ল্যাবগুলোতে যে তিনটি পরীক্ষা পজিটিভ হয়েছে এগুলো আবারো যাচাই-বাছাই করা হবে এবং ওই তিনজনের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা (কোয়ারেন্টিন) নেয়া হবে। গতকাল নতুন কোনো মৃত্যুর খবর ছিল না করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে। মহাপরিচালক দাবি করেছেন, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে থেকে ২৬ জন করোনাভাইরাস মুক্ত হয়েছেন। তারা বাড়ি ফিরে গেছেন। চিকিৎসাধীন আছেন মোট ২৯ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২২ জন এবং বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন সাতজন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে এবং ১৪ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৬৫০টি পিপিই বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো হয়েছে। আরো ৬৪ হাজার ৪১০টি পিপিই মজুদ আছে।

তিনি বলেন, কেউ করোনা ভাইরাসে হলে তার সর্দি-কাশি হয়ে থাকে। গলা ব্যথা হতে পারে। এমন হলে বাড়িতেই থাকুন এবং হটলাইনগুলোতে ফোন দিন। অনেক সময় বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। সর্দি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে পারবেন। তিনি ১৬২৬৩, ৩৩৩ এবং ০১৬৫৫ নম্বরে ফোন করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

শ্বাসকষ্টে জামাইয়ের মৃত্যু, লকডাউন শ্বশুরবাড়ি

মেহেরপুর সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরে বেড়াতে এসে শ্বাসকষ্টে জামাইয়ের (৩৫) মৃত্যুর ঘটনায় শ্বশুরবাড়ি লকডাউন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার কোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। তার বাড়ি পাশর্^বর্তী চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে। পরিবারসহ ছুটি কাটাতে ৫-৬ দিন আগে মেহেরপুরের কোলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন তিনি। সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার তাকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়।

গাংনীর সেই রোগী করোনা আক্রান্ত নয় : মেহেরপুরের গাংনী হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা সেই রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। আইইডিসিআর রোগীর শরীরের নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ নেগেটিভ বলে নিশ্চিত করেছে। ফলে তার বাড়িসহ আশপাশের বাড়ির লকডাউন প্রত্যাহার করেছে প্রশাসন।

মহম্মদপুরে আইসোলেশনে থাকা একজনের মৃত্যু, বাড়ি লকডাউন

মহম্মদপুর (মাগুরা) সংবাদদাতা জানান, মাগুরার মহম্মদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে থাকা এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তি বাকি মিয়া উপজেলার কলমধারী এলাকার মৃত মোসলেম মোল্যার ছেলে। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি জ¦র, কাশি ও শ^াসকষ্টে ভুগছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সকালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ওই ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে এবং তার সংস্পর্শে থাকা প্রত্যেককে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।

অসহায়ত্ব প্রকাশ করে মহম্মদপুর ইউএনওর স্ট্যাটাস : সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরপরও হোম কোয়ারেন্টিন মানছে না মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মানুষ। স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রচারণা চালালেও হাটেবাজারে তাদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের আনন্দের মতোই মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বাজার-ঘাট। এ জন্য হতাশা প্রকাশ করে শুক্রবার ফেসবুকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানূর রহমান।

তিনি তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘করোনা সম্পর্কে মানুষকে বুঝিয়ে বলতে বলতে মনে হচ্ছে মুখের ভাষাই শেষ। আর কত বা কিভাবে বুঝিয়ে বললে মানুষের বোধোদয় হবে। চার দিকে রোগ কোনো না কোনোভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, সবার যেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা সেখানে ঠিক তার বিপরীত। ঈদের খুশির মতো মানুষ এ বাড়ি ও বাড়ি দাওয়াত খেয়ে বেড়াচ্ছে আর বিকেল হলেই বাজারে উপচে পড়া ভিড়। এ যেন এক মিলনমেলা! কী হচ্ছে এসব? মানুষ কি মৃত্যু দেখেও শিক্ষা নিবে না? চীন, স্পেন, ইতালি, আমেরিকা, ব্রিটেন, পাকিস্তান, ভারতের মতো পরাক্রমশালী দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায়। সেখানে আমাদের দেশের অবুঝ মানুষ আনন্দে মেতেছে বাজার ঘাটে। সবার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ দয়া করে আপনি নিজ গৃহে অবস্থান করুন। নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচতে সহায়তা করুন।’

আত্রাইয়ে তিন বাড়ি লকডাউন

নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর আত্রাইয় উপজেলার বিশা ইউনিয়নের খাসখামার গ্রামে ঢাকা থেকে আসা তিন ব্যক্তির করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেয়ায় তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রোকসানা হ্যাপি জানান, পরীক্ষার জন্য অসুস্থ ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। অসুস্থদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরের লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছানাউল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে ওই তিন ব্যক্তি ঢাকা থেকে বাড়ি আসার পর থেকেই জ্বর-কাশি ও গলা ব্যথায় অসুস্থ পড়েন।

হোমনায় দুই বাড়ি লকডাউন, একজনকে ঢাকায় রেফার

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে দুই ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। উপজেলার ঝগড়ার চর ও খোদেদাইদপুর গ্রামের ওই বাড়ি দু’টি লকডাউন করে মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ জারি করা হয়। সেখানকার দুই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের পর একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহের পর ডাক্তারদের ব্যবহৃত পিপিই এবং বসার আসনটি আগুনে পুড়ে ফেলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবদুছ ছালাম সিকদার জানান, একজন গত চার দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। অপর ব্যক্তি পেশায় আইনজীবী। তাদের দু’জনেরই সর্দি-কাশি, জ্বর, গলাব্যথা রয়েছে। তাদের শরীরের নমুনা ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট পৌর ভবনে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন থেকে আরো দুই প্রবাসীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পৌরসভার কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩৫ জনের মধ্যে মোট ৩৩ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হলো। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন দুইজন।

সাতক্ষীরায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ৫ বাড়ি লকডাউন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা বল্লী ইউনিয়নের নারায়ণপুরে শরীরে জ্বর, ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসান আলী (২০) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় নারায়ণপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। পরে মৃতের বাড়িসহ আশপাশের পাঁচ বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ দুপুরের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। হাসান আলী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের বাহারুল ইসলামের ছেলে ও ঝাউডাঙ্গা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ছয়-সাত দিন ধরে তার জ্বর, ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এ ঘটনায় এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী জানান, কলেজছাত্র হাসান আলীর বাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া তার দাফন-কাফনে অংশ নেয়া ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যসহ মোট ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। মৃতের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন।

আইসোলেশনে ভর্তি যুবক করোনাক্রান্ত নন : জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হওয়া যুবকের শরীরে করোনোভাইরাস পাওয়া যায়নি। তাকে আইসোলেশন থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আইইডিসিআর থেকে পাওয়া রিপোর্টে করোনোভাইরাসের অস্তিত্ব না মেলায় তাকে জেনারেল ওয়ার্ডে ট্রান্সফার করা হয়। ওই যুবক একটি এনজিওতে কর্মরত। গত সোমবার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি সামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন।

ঝালকাঠিতে ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে করোনাভাইরাস সন্দেহে ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। জ্বর, সর্দি ও কাশি থাকায় গতকাল শুক্রবার সকালে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এই ছয় ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরেও জ্বর, সর্দি ও কাশি ভালো না হওয়ায় তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা: শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার।

বগুড়ায় সাতটি বাড়ি লকডাউন

বগুড়া অফিস, ধুনট, কাহালু ও গাবতলী সংবাদদাতা জানান, বগুড়া করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত এক কিশোর ও চিকিৎসাধীন অপর দুই ব্যক্তিদের বাড়িসহ আশপাশের সাতটি বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। এ দিকে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে নওগাঁ সদরের ৩২ বছর বয়সী এক নারী বগুড়া আইসোলেশন কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু তিনি ভর্তি হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রাত আড়াইটায় হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভর্তির কথা স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করে।

৪৫ বছর বয়সী ঢাকার এক গার্মেন্টকর্মী গত ২৪ মার্চ জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ধুনট উপজেলার শিয়ালী গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরে তিনি আরো অসুস্থ হলে তাকে ২৯ মার্চ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু করোনা সন্দেহ হলে ডাক্তার তাকে করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ভর্তির জন্য রেফার্ড করেন। তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তার বাড়িসহ তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৬ বছরের এক যুবক গত ২৬ এপ্রিল প্রচ- সর্দি, জ্বর ও কাশি নিয়ে কর্মস্থান কুমিল্লা থেকে বগুড়ার কাহালুতে তার বাবার ভাড়া বাসায় আসেন। সংবাদ পেয়ে তাকে আইসোলেশন কেন্দ্রে ভর্তি করে উপজেলা প্রশাসন। পরে কাহালু পৌর শহরের টিঅ্যান্ডটি অফিস-সংলগ্ন তাদের ভাড়া বাড়ি লকডাউন করা হয়। করোনা আইসোলেশন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন গাবতলী উপজেলা মহিষাবান ইউনিয়নের দড়িসোনাকানিয়া গ্রামের ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর গত বুধবার সন্ধ্যায় মারা গেলে করোনা শনাক্তের জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী ল্যাবে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। এরপরই উপজেলা প্রশাসন তার বাড়িসহ তিনটি বাড়ি লকডাউন করে। কিন্তু তার টেস্ট রিপোর্ট শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বগুড়ায় পৌঁছেনি।

গৌরনদীতে শ্রমিকের মৃত্যু, ৬০ পরিবার লকডাউন

বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর বিল্লগ্রাম এলাকায় শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে হাসান ফকির (৪৮) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। হাসান ফকির ওই গ্রামের মৃত মব্বত আলী ফকিরের ছেলে। তিনি স্থানীয় মানিক সরদারের স্যানিটারির দোকানে রিং, স্লাব নির্মাণ করতেন। মাহিলাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ওই গ্রামের ৬০টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এসব পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা: সাইয়্যেদ আমরুল্লাহ জানান, মৃত হাসান ফকির অনেক দিন থেকেই অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তারপরেও এলাকায় আতঙ্কের কারণে তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় তাহিরপুরে আতঙ্ক

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সর্দি, জ্বর ও কাশি ছিল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাহতাবপুর গ্রামে দাফন হওয়া জহিরুলের। তিনি গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করতেন। এক সাপ্তাহ আগে গাজীপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার লাশ নিজ গ্রাম মাহতাবপুরে এনে দাফন করে স্বজনরা। পরে সাতটি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু অনেকেই তা মানছে না। ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মাহতাবপুর গ্রামের ৩৮৫টি পরিবারের সহস্রাধিক মানুষের মধ্যে। এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী বলেন, সংবাদটি জানার পরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ও তাহিরপুর থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রামেক হাসপাতাল থেকে পালালেন রোগী

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোগী পালিয়ে গেছেন। তিনি হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রামেক অধ্যক্ষ ডা: নওশাদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওই রোগী করোনা সংক্রমিত কি না, তা নিশ্চিত হতে নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে চিকিৎসকরা তাকে খুঁজে পাননি। অধ্যক্ষ জানান, রোগীটি নিয়ম মতো ছাড়পত্র না নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছেন। কিভাবে পালালেন তা ওয়ার্ডের কেউ বলতে পারেননি। ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা: খলিলুর রহমান জানান, বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

গাজীপুরে ঝোপ থেকে উদ্ধার করে এক নারীকে আইসোলেশনে ভর্তি

গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে কবরস্থানের ঝোপ থেকে এক নারীকে (৫০) উদ্ধার করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: মো: খায়রুজ্জামান শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জিএমপি সদর থানার ওসি আলমগীর হোসন ভূঁইয়া জানান, ভাওরাইদ উত্তরপাড়া এলাকার কবরস্থানের পাশের একটি ঝোপের ভেতরে গত বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ এক নারীকে পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। ওই নারী করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে তারা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গভীর রাতে ওই নারীকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

ময়মনসিংহে আরো ৬১ জনের নমুনা সংগ্রহ

ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করার পর আটজনের করোনাভাইরাস নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শুক্রবার ময়মনসিংহে আরো ৬১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ডা: চিত্তরঞ্জন দেবনাথ। এ দিকে জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান ও পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের নেতৃত্বে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে নগরী ফাঁকা হয়ে যায়। মাইকিং করে লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্যাডেল রিকশা ও ভ্যান ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। কেউ রাস্তায় বের হলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদেরকে সতর্ক করে দেয়। অপর দিকে করোনার ভয়ে সাধারণ রোগে আক্রান্ত কেউ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন না বলে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা দিন দিনই কমছে। জটিল রোগাক্রান্ত না হলে কেউ হাসপাতালে যাচ্ছেন না।

রমেকের পিসিআরে প্রথম দিনে ৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা

রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের রিয়েল টাইম পিসিআর ল্যাবরেটরিতে প্রথম দিনেই ৪২ জন করোনা সন্দেহ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে সোয়া ৩টা পর্যন্ত এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। আজ সকালে নমুনাগুলোর রিপোর্ট ঢাকায় ডিজি হেলথে পাঠানো হবে। সেখান থেকে আইইডিসিআর ফলাফল ঘোষণা করবে। ল্যাবরেটরির তত্ত্বাবধায়ক ও রমেকের মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: মোস্তাকিমুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৪২টি করোনা আক্রান্ত সন্দেহ ব্যক্তির শরীরের লালা, ঘাম, রক্ত, কফসহ অন্যান্য নমুনা জমা পড়ে। যার মধ্যে ১১টি রংপুরের এবং বাকি ৩১টি ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার। তিনি আরো জানান, শুক্রবার হওয়ায় কোনো নমুনা সংগ্রহ হয়নি। গত শনিবার যেসব নমুনা সংগ্রহ হবে। সেগুলো রোববার সকাল থেকে পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে। রমেকের পিসিআরে একটি প্লেটে সর্বোচ্চ ৯৬ জনের এক সাথে পরীক্ষা করা সম্ভব। এই ল্যাবরেটরিতে ২২৮টি পরীক্ষা কিটের মধ্যে শুক্রবার ৪২টি দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

করোনার উপসর্গ নেই নড়াইল সদর হাসপাতালের নার্সের

নড়াইল সংবাদদাতা জানান, নড়াইল সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মাধবী রানী দাসের শরীরে করোনা উপসর্গ মেলেনি। রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে কৌশিক দাস। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে মায়ের করোনা পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে মা ঢাকা থেকে বাড়ির (নড়াইল) উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবদুস শাকুর জানান, গত কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা ও জ্বর অনুভব করছিলেন মাধবী। এ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করাতে বৃহস্পতিবার সকালে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় যান তিনি।

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনসহ ৪৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৯০ জনের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় মোট ৫৪০ জন বিদেশফেরত প্রবাসী এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩৩৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন করতে সক্ষম হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাঞ্ছারামপুরের সেই সরকারি কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত নন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সেই সরকারি কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। নমুনা পরীক্ষার পর তার শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সারোয়ার বলেছিলেন, ওই কর্মকর্তা তার কর্মরত এলাকায় ইতালি ফেরতদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তখন তাকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোয়ারেন্টিন না মেনে বাঞ্ছারামপুরে তার নিজ বাড়িতে চলে আসেন। সেজন্য সবাইকে সচেতন করতে বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়।

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের ১১ জন রোগীকে সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত হিসেবে তাদের নমুনা পাঠানো হয়েছিল ঢাকায়। প্রথমে আটজন ও পরে তিনজনের প্রতিবেদন এসেছে হবিগঞ্জে। ১১ জনের কারো মধ্যে করোনা আক্রান্তের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

শরীয়তপুরে আইসোলেশনে মারা যাওয়া যুবকের করোনাভাইরাস ছিল না

শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও হাঁচি-কাশি নিয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে মারা যাওয়া যুবকের শরীরে করোনাভাইরাস ছিল না বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডা: এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ। তিনি জানান, ওই যুবকের নমুনা ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হলে সেখান থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না।

দিনাজপুরে মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনা ছিল না

দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর বিরামপুরে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস ছিল না। দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা: আব্দুল কুদ্দুস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে আইইডিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে। গত রোববার সকালে ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বিরামপুর উপজেলার জোতবাণী ইউনিয়নের তফসি গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনার তালতলীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে দুইজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের একজন সিঙ্গাপুর প্রবাসী ও একজন রিকশাচালকের ছেলে। চিকিৎসকরা আইইসিডিআরের নির্দেশনা অনুসারে উপজেলা মেডিক্যাল টিম তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠিয়েছেন। ওই দুই ব্যক্তির বাড়ির বাসিন্দাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

টঙ্গী গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের ৩০ রোগীর সবাই করোনামুক্ত

টঙ্গী (গাজীপুর) সংবাদদাতা জানান, গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী বাজারসংলগ্ন হোন্ডা রোডের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গত চার দিনে মোট ৩০ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ নেগেটিভ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে প্রচণ্ড জ্বর ও গলাব্যথার কারণে একজন রোগী ইতঃপূর্বে এলাকার কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি। পরে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তির পর তারও কোভিড-১৯ নেগেটিভ পাওয়া গেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি মুক্তিযোদ্ধা ডা: নাজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, তার নিজের তত্ত্বাবধানে আপাতত ১০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা হবে সম্পূর্ণ ফ্রি। করোনা শনাক্ত হলে রোগীকে টেস্টের জন্যও কোনো টাকা দিতে হবে না। তবে টেস্টে কোভিড-১৯ ভাইরাস ধরা না পড়লে পরীক্ষা বাবদ ৫০০ টাকা করে নেয়া হবে।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে বিভিন্ন উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হলো মোট এক হাজার ৭৯১ জন প্রবসীকে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এক হাজার ৪৪৬ জনকে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৩৪৫ জন এবং আইসোলেশনে রয়েছেন একজন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পাবনায় ৫৩ মামলা ও জরিমানা

ইউএনবি জানায়, করোনাভাইরাস সতর্কতায় পাবনায় সরকারি আদেশ অমান্য করায় ৫৩টি মামলা দায়ের ও ৬১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সবাইকে বাড়িতে থাকা এবং বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ এবং জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। শুরুতে এই আদেশ মান্য করলেও কয়েক দিন ধরে আদেশ অমান্য করে সাধারণ মানুষ বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে থাকে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন শুরু করে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সদর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ঘোরাফেরা করা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অপরাধে ৫৩টি মামলা দায়ের এবং ৬১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৪ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করে।

শেরপুরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ

করোনাভাইরাসের উপসর্গ সন্দেহে পরীক্ষার জন্য শেরপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তাসহ ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: মোবারক হোসেন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো নমুনার ফলাফল আসেনি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/493360/