৪ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১২:৪১

করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষায় মসজিদে মসজিদে দোয়া

দূরত্ব বজায় রেখে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ বিশেষ মোনাজাত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সারাদেশের মসজিদে মসজিদে সংক্ষিপ্ত মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে মুসল্লিরা চোখের পানিতে আল্লাহর রহমত কামনা করেন। তওবা করেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। এই মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সকলকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।

করোনার সংক্রমণ রোধে গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে দূরত্ব বজায় রেখে জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। এর আগে, কখনো এরকম দূরত্ব বজায় রাখেননি কেউ। রাজধানীর অন্যান্য মসজিদের ইমামসাহেবও দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের বলেন। এ ছাড়া মসজিদে শুধু খুৎবা এবং জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা হয়। সুন্নত নামাজ নিজ নিজ বাসায় পড়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, গুলশান আজাদ মসজিদ, মহাখালি রেল গেইট মসজিদসহ অন্যান্য মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লির উপস্থিতি ছিল আগের চেয়ে কম। সব মসজিদেই দূরত্ব বজায় রেখে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শুরু হওয়ার আগে মুয়াজ্জিন ঘোষণা করেন, নিজ নিজ দ‚রত্ব বজায় রেখে কাতার সোজা করবেন সবাই। কারো গায়ে যেন না লাগে। এরপর নামাজ শুরু হয়।

বায়তুল মোকাররমের এক মুসল্লি আরজু নামাজ শেষে বলেন, দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করা এ মুহূর্তে সবার দায়িত্ব। কারো গায়ে যেন গা না লাগে, তা সবার মেনে চলা উচিত। তিনি আরও বলেন, এর আগে আমার দুই ছেলেকেও নামাজে নিয়ে আসতাম। আজ নিয়ে আসিনি। একাই এসেছি। আমার বৃদ্ধ বাবাকেও আসতে দেইনি। কারণ তিনি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। জুমার নামাজ তো আদায় করতে হবে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, এ জন্য আমি আসা বাদ দিতে পারিনি। তবে দ‚রত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর কারণে ঝুঁকি অনেকটাই কমে গেছে।

বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজে ইমামতি করেন মুফতি মিজানুর রহমান। নামাজ শেষে তিনি সংক্ষিপ্ত মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে অংশ নেয়া সকলেই চোখের পানিতে আল্লাহর রহমত কামনা করেন। এই মহাদুর্যোগে দেশবাসীর সার্বিক হেফাজত কামনা করেন। সবাই তওবা করেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে সকলকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন সবাই।

ঢাকার বাইরেও সারাদেশে মসজিদে মসজিদে করোনার মহামারী থেকে রক্ষা পেতে আল্লার রহমত কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে অত্যন্ত মনোরম মসজিদ আল-মদিনা জামে মসজিদে খতমে ইউনুছ পড়া হয়েছে। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা শফি বিক্রমপুরী জানান, বৃহস্পতিবার এলাকার মুসল্লিদের ইমাম সাহেব খতমে ইউনুছ পড়ার জন্য বলে দেন। দোয়া ইউনুছ ১ লক্ষ ২৫ বার পড়লে খতমে ইউনুছ পড়া হয়। গতকাল আল-মদিনা জামে মসজিদের মুসল্লিরা ২৫ লক্ষ খতম দিয়েছেন। মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা সাইফুল্লাহ রাহমানী জুমার নামাজ শেষে করোনার মহামারী থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ মোনাজাত করেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, হে আল্লাহ, আমাদের তাওবা কবুল করো, আমাদের ক্ষমা করো হে মাবুদ। মহামারী থেকে রক্ষা করো। গতকাল জুমার নামাজ শেষে বারো আউলিয়ার পূণ্যভ‚মি চট্টগ্রামের মসজিদে মসজিদে ছিলো মুসল্লিদের এমন আহাজারি। মহান আল্লাহর দরবারের ফরিয়াদ জানাতে গিয়ে ইমাম, খতিবগণের সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসল্লিরা।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। মসজিদগুলোতেও তার ব্যতিক্রম ছিলো না। মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা ছিলো কম। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতারবন্দি হওয়ার নিয়ম বাদ দিয়ে দূরে দূরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মসজিদে প্রবেশের সময় সবার হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিলো। প্রায় সব মসজিদে ছিলো এমন চিত্র। কোন কোন মসজিদে খুৎবার পর দুই রাকাত ফরজ নামাজ শেষে মুসল্লিরা চলে যান বাসা বাড়িতে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসের দুর্যোগ থেকে রক্ষায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত কামনা করে গতকাল শুক্রবার জুমা বাদ দক্ষিণাঞ্চলের মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মুসল্লীয়ানগণ নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মসজিদে প্রবেশ করেন। প্রায় সব মসজিদই বিশেষভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে।

জুমার নামাজে বরিশালের চকবাজার জামে এবাদুল্লাহ মসজিদে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল থেকে আল্লাহর দরবারে পানাহ চেয়ে মুসুল্লীগণ হাত তোলেন। এদিকে জামে এবাদুল্লাহ মসজিদ কমিটির উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফরিদপুরের বিশ^ জাকের মঞ্জিল, নেসারাবাদের ছারছিনা দরবার, বরিশালের চরমোনাই দরবারে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়।

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদী শহরের বাইতুল আমান জামে মসজিদের খতিব, জামেয়া কাসেমিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা নাজমুল ইসলাম বলেছেন, করোনাভাইরাস পৃথিবীতে গজবের আকারে আসলেও বিপথগামী বিশৃঙ্খল মানবজাতিকে একটি সুশৃঙ্খল মানবগোষ্ঠীর নমুনা বাতলে দিয়েছে। পরিবর্তন এনে দিয়েছে মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন ব্যবস্থায়। মুসলমানদেরকে ধর্ম কর্মের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি মুসলিম পরিবারে বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ম চর্চা।

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদদাতা জানান, পটুয়াখালীর সকল মসজিদে করোনা থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহ্র দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সরকারের নির্ধারিত নিয়ম মেনে মসজিদে ধর্মপ্রান মুসল্লীরা একত্রিত হন।

পটুয়াখালী বড় জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা আবু সাইদ জানান, জেলার সকল মসজিদ গুলিকে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে, এ ছাড়া জুমার দিনে বিশেষ ভাবে নামাজের আগে মসজিদ পরিস্কার করা হয়। এ ছাড়াও পটুয়াখালী বড় জামে মসজিদের মুসল্লীদের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে চার খতম দোয়া ইউনুছসহ পবিত্র কোরান খতম শেষে দেশ জাতি তথা বিশ্ববাসীর জন্য এ মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে মহান আল্লাহ্র দরবারে মোনাজাত করা হয়।

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামজের পর বিশেষ দোয়া করা হয়। মঠবাড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ উপজেলার মসজিদগুলোতে খুৎবা সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ পূর্ব সংক্ষিপ্ত খুৎবায় খতিবরা করোনাভাইরাস সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করেন।

মঠবাড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান জানান, করোনাভাইরাস থেকে আল্লাহর রহমত কামনায় মসুল্লিদের নিয়ে বিশেষ দোয়া করা ছাড়াও করোনা সতর্কতায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/280556/