৪ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১২:৩৮

কড়াকড়িতেও রাস্তায় নামছে মানুষ, সেনাবাহিনী ও পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নগরবাসীকে ঘরে রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রচেষ্টা অনেকটাই কার্যকর হয়েছে। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো গতকাল শুক্রবার ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তবে পাড়া মহল্লায় কোনো কিছুতেই যেন আটকে রাখা যাচ্ছে না মানুষকে। সাধারণ ছুটির নবম দিনে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পুলিশ। কঠোর অবস্থানে ছিল সেনাবাহিনীও। শুধু বড় সড়কেই নয়, পাড়া মহল্লায়ও সেনা অভিযান জোরদার করা হয়। অপ্রয়োজনে খুলে রাখা দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়।

সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় মানুষের আনাগোন। করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক উপেক্ষা করে ফুটপাতে ও পাড়া-মহল্লায় চলছে সরব আড্ডা। কেন রাস্তায় বের হয়েছেন? জানতে চাইলে সবাই বলছে জরুরি প্রয়োজনের কথা। তবে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সে আড্ডা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মীরহাজিরবাগ এলাকার এক যুবক বলেন, কিছুক্ষণ আগে সেনাবাহিনীর গাড়ি এসেছিল। তখন সবাই দৌড়ে গলির ভিতর পালিয়েছিল। এখন আবার জড়ো হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে খুবই কম। রিকশা চললেও সিএনজি অটোরিকশা চোখে পড়েনি। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলের সংখ্যাও ছিল আগের দিনের তুলনায় অনেক কম। তারপরেও সন্দেহ হলেই পুলিশ আটকে রাখছে গাড়ি। প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ প্রায় সব যানবাহন থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশের এ অভিযান। গুলশান ট্রাফিক জোনের এডিসি এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, আইন আছে, সে মোতাবেক আমরা মামলা করছি। প্রত্যেক গাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসা করছি। উপযুক্ত জবাব না পেলে গাড়ি ছাড়ছি না।

একই সঙ্গে সবাইকে বাসায় থাকতে মাইকিং করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে সেনাবাহিনী। অপ্রয়োজনে লোকজনের ঘোরাঘুরি এড়াতে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি পাড়া মহল্লায় সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। সামাজিক দূরত্ব বিঘœ হলে সতর্ক করে। বন্ধ করে দেয়া হয় অপ্রয়োজনে খোলা রাখা দোকানপাট। আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাফোয়ান বিন আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, যারা বাইরে চলাচল করছে তাদের গতিবিধি দেখভালের জন্যই কিন্তু আমরা মাঠে নেমেছি। আগের চেয়ে একটু কঠিন হচ্ছি।

যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। রিকশা যেতে দেখলেই চাকা ফুটো করে দেয়া হচ্ছে। দোলাইপাড় মোড়ে দেখা যায়, পুলিশ চেকপোস্টের পাশেই ৮/১০টি গাড়ি রিকশা উল্টো করে ফেলে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। গোলাপবাগ, খিলগাঁও, কাকরাইল মোড়ে গাড়ি থামিয়ে চেক করছে পুলিশ। যাচাই করা হচ্ছে জরুরি প্রয়োজন নাকি অযথাই বের হয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই আটক করা হচ্ছে গাড়ি। পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, ভালোভাবে বুঝানোর পরও কাজ হচ্ছে না। তাই বেশ কয়েক রিকশা আটক করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি নিয়ে যারাই বের হবে তাদের গাড়িই আটক করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে সাহায্য প্রত্যাশী নারী-পুরুষের ভিড় দেখা গেছে। তাদের সবার প্রায় অভিন্ন কথা। কাজ নেই, খাবার নেই। তাই সাহায্যের জন্যে বাসার বাইরে এসেছেন তারা। কেউ সাহায্য নিয়ে আসলেই দৌড়ে সেদিকে ছুটে যাচ্ছেন সবাই। এ সময় একজন আরেকজনের গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে সাহায্য নিচ্ছেন। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে বললেও তারা মানছেন না।

ঢাকামুখী মানুষের স্রোত
এদিকে, ছুটি মধ্যেই ঢাকামুখি মানুসের স্রোত দেখা যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ময়মনসিংহ থেকে গার্মেন্টস কর্মীদের স্রোত আসতে দেখা গেছে ঢাকার দিকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছোট ছোট যানবাহন করে, পায়ে হেঁটে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার দিকে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। শ্রমিকরা জানায়, ৫ তারিখ থেকে গার্মেন্টস খুলবে। আগেই ঢাকায় যেতে গার্মেন্টস থেকে বলা হয়েছে। সে কারণে করোনার ভয় নিয়ে কষ্ট করেই রওনা হয়েছেন তারা। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ স্রোতের মতো ঢাকার দিকে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে- গ্রাম থেকে আসা এ মানুষগুলো করোনাভাইরাস বহন করে আনছে না তো? অনেকেই বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এদেরকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা উচিত।

https://www.dailyinqilab.com/article/280537/