৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ১:৪৭

করোনায় বেহাল চিকিৎসাব্যবস্থা

অন্য রোগীরা সেবা পাবে না কেন?

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় হযবরল অবস্থা চলছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে।

করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক রোগীতে ঠাসা থাকত, সেগুলো এখন প্রায় রোগীশূন্য।

করোনা ছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তারাও হাসপাতাল ছাড়ছেন। এমনকি অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বন্ধ রেখেছেন প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা। সংবাদমাধ্যমে খবর বেরোচ্ছে, অনেক রোগী এ হাসপাতাল-সে হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছেন।
বস্তুত করোনা আতঙ্কে চিকিৎসক ও নার্সদের একটি বড় অংশ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) স্বল্পতা এবং সাধারণ রোগীরা যে করোনা আক্রান্ত নন, তা নিশ্চিত না হওয়ার কারণেই মূলত চিকিৎসাব্যবস্থায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, অসংখ্য ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একদিকে ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগীরা যেমন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না, অন্যদিকে রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডায়াগনসিসও করা যাচ্ছে না।

এমন অবস্থায় চিকিৎসাসেবার বর্তমান অবস্থায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সবাই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে।

তাই যদি হয়, তাহলে চিকিৎসকদের কেন এত ভয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দেয়ার কারণে। এমনকি চিকিৎসক পরিবারের রোগীরাও পাচ্ছেন না হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। বেসরকারি চিকিৎসকদের অনেকেই ভালো চিকিৎসা দিয়ে থাকেন; কিন্তু

তাদের চেম্বারগুলো বর্তমানে বন্ধ থাকায় সেখানে সাধারণ রোগীরা সেবা নিতে পারছেন না।

বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থায় যা চলছে, তা মেনে নেয়া যায় না। চিকিৎসা একটি মহৎ পেশা বলেই স্বীকৃত। এমন নজিরও রয়েছে, নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও অনেক চিকিৎসক রোগীর সেবা দিয়েছেন।

এ কথা সত্যি, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা আতঙ্ক রয়েছে সর্বত্র। চিকিৎসকদের মধ্যেও এই আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা করোনা আতঙ্কে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দেবেন না, তা হতে পারে না।

আমরা মনে করি, সরকারি-বেসরকারি কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগীর চিকিৎসা বা তাকে ভর্তি না করানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অথবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

চিকিৎসাসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে রোগীদের বঞ্চিত করা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে, কোভিড-১৯ রোগের যেমন, তেমন অন্য সব রোগের চিকিৎসার ব্যাপারেও তারা আন্তরিক হবেন। মানুষের অসহায়ত্বে তাদের পাশে দাঁড়ানো এক মহৎ কাজ নিশ্চয়ই।

সুচিকিৎসার অভাবে কোনো রোগী মারা গেলে তার দায় পড়বে গোটা চিকিৎসক সম্প্রদায়ের ওপর। এটা নিশ্চয়ই তাদের জন্য সুখকর হবে না। করোনা আতঙ্ক আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। তাই বলে অন্যান্য রোগকে আমলে না নেয়া পেশাগত দায়িত্বেরই বরখেলাপ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/editorial/295216