৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ১:৪৬

কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রধান সড়কে ভিড় কমলেও অলিগলিতে অকারণ আড্ডা

বিনা কারণে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করছে সশস্ত্র বাহিনীও। এতে মূল সড়কগুলোতে লোকসমাগম কয়েকদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার অনেকটাই কম ছিল। তবে অলিগলিতে আগের মতোই ভিড় ছিল। বেশ কিছু স্থানে চায়ের দোকানে ও মোড়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে কিশোর-যুবকসহ নানা বয়সীদের। বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকানেও ভিড় ছিল। কিছু দোকানের সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চিহ্ন দেয়া থাকলেও তা মানছেন না অনেকেই।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বৃহস্পতিবার এ চিত্র দেখা গেছে। এদিন আরও দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে এদিনও জরুরি কাজে নিয়োজিত পরিবহনের বাইরে ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি রাস্তায় রয়েছে। তবে কয়েকদিনের তুলনায় অটোরিকশার সংখ্যা কম ছিল। রাইড শেয়ারিং বন্ধ থাকলেও অনেক স্থানেই মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে চালকদের। এছাড়া মোড়ে মোড়ে ছিল রিকশাও।

রাজধানীর মতো দেশের বিভিন্ন স্থানেও বৃহস্পতিবার প্রায় অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিরা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু অনেককেই বাইরে বের হতে দেখা যাওয়ায় কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বুধবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) বার্তায় জানানো হয়, সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে কাজ করবে। সরকার প্রদত্ত নির্দেশাবলি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সেনাবাহিনীর এ ঘোষণা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার প্রভাব পড়ে বিভিন্ন স্থানে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর চৌধুরীপাড়া, রামপুরা, বাড্ডা, শাহজাদপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ফার্মগেট, গ্রিন রোড, পান্থপথ, কলাবাগান, বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় মূল সড়কগুলোতে মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তবে এদিনও অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হতে দেখা গেছে অনেককে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে স্থাপন করা চেকপোস্টে তাদের প্রত্যেককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাস্তায় না নামার পরামর্শ দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে বের হওয়ার যথাযথ কারণ দেখাতে না পারায় তিরস্কারও করতে দেখা গেছে কাউকে কাউকে।

এছাড়া এদিন নিয়মিত হাত ধোয়া, অযথা ঘোরাফেরা না করে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করা, পথে জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো।

রাজধানীর মধুবাগ, মীরবাগ, জোয়ারসাহারাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক করার পরপরই আবার বিনা প্রয়োজনে অনেকেই গলিতে-সড়কে নেমে আসেন। দোকানগুলোকে বন্ধ করার কথা বললেও কিছু সময় আবারও তা অমান্য করছেন তারা। অনেকেই আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে তুলে ধরছেন নানা অজুহাত।

মাঠ পর্যায়ে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা চেষ্টা করছেন মানুষকে বোঝাতে। আজও (বৃহস্পতিবার) তারা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তবে এরপরও যদি কেউ অযথা বের হন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষে-মানুষে ‘সামাজিক দূরত্ব’ মানার প্রবণতা তেমন নেই। ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই একে অন্যের গা-ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারও রক্ষা করছেন না অনেকে। কিছু কিছু দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বের চিহ্ন দেয়া থাকলেও অনেকেই তা মানছে না। বিশেষ করে কাঁচা বাজার ও মুদি দোকানগুলোতে এ চিত্র বেশি দেখা গেছে।

সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরে থাকা, জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে এটি মানতে ও মানাতেই হবে। না মানলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।

রাস্তায় দোকানে বরিশালের মানুষ : বরিশাল ব্যুরো জানায়, অনেকেই নির্দেশনা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, অনেকে পেটের দায়ে নেমেছেন রাস্তায়। নগরীর নতুন বাজার, কাউনিয়া, আলেকান্দা, সদর রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হকার, দিনমজুর ও যানবাহন চালকদের অনেকেই রাস্তায় রয়েছেন। জেলখানার মোড়ে রিকশাচালক শাহিন বলেন, ৫ দিন ঘরেই ছিলাম। বাজার যা ঘরে ছিল সবই শেষ, টাকাও নাই। এখন বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। কেউ তো বাসায় খাবার দিয়ে যাবে না। আলেকান্দা এলাকার চা দোকানি শরীফুল ইসলাম বলেন, ২৬ মার্চ থেকে বাসায়ই আছি। এখন তো ঘরে খাবার নেই। আমরা তো বাঁচতে চাই। দোকান না খুললে ইনকাম করতে পারব না। স্ত্রী-সন্তান না খেয়ে থাকবে। যারা ত্রাণ পায় তারা একাধিকবার পায়। আর যারা পায় না তারা একবারও পায় না। পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ চন্দ্র বলেন, বাস বন্ধ থাকায় আমাদের মতো দিনমজুররা বেশ ঝামেলায় রয়েছি। বাসায় খাদ্য নেই। শুনি শুধু ত্রাণ দেয়া হয় কিন্তু আমাদের কপালে জোটে না।

বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, অযথা কেউ রাস্তায় ঘোরাঘুরি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে আমরা নগরীতে টহল জোরদার করেছি। বরিশাল বিভাগে সেনাবাহিনীর ১৭টি দল জোরদার টহল দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা সেনানিবাসের কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক মোবিন।

রাজশাহীতে কঠোর সেনাবাহিনী : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রাজশাহীতে কঠোর হয়েছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার সকালে সাহেববাজার এলাকায় দেখা যায়, মাস্ক না পরে রাস্তায় বের না হলে, দুইজন মোটরসাইকেলে থাকলে, একত্রে ঘোরাঘুরি করলে এবং কারণ ছাড়াই বাড়ির থেকে বের হয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করলে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/295200/