৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ১:৩৮

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বিবৃতি

করোনা নিয়ে গোপনীয়তার আশ্রয় নিচ্ছে সরকার

করোনায় ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সরকার গোপনীয়তার আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ও সরকার কর্তৃক বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশিদ এবং মহাসচিব ডা: মো: আব্দুস সালাম। তারা বলেন, বিশ^ মহামারী করোনাভাইরাসের করাল গ্রাসে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৯ লাখ মানুষ। বিভিন্ন দেশ তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে এই মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নির্বিকার, তাদের কার্যক্রম কাগজে-কলমে, মাঠ পর্যায়ে দেরিতে হলেও আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনের চেষ্টা করলেও রোগী শনাক্তকরণ বা চিকিৎসার ব্যাপারে চরম উদাসীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুরু থেকে যথাযথ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা না করায় ধীরে ধীরে চরম জটিল রূপ ধারণ করেছে।

নেতৃদ্বয় বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারী ঘোষণার পর থেকেই ড্যাব বিভিন্ন সেমিনার, বিবৃতি এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুরক্ষা (পিপিই) নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্ণপাত করছে না। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অদ্যাবধি নিরলসভাবে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীন আচরণের জন্য ইতোমধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবুও কোনো চিকিৎসক সেবা প্রদানে বিরত হননি। অথচ আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি যে- করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য পিপিই, মাস্ক এন-৯৫ চিকিৎসকদের জন্য নিশ্চিত না করে সরকারের অন্য বিভাগের ব্যক্তিদের দেয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ড্যাবের পক্ষ থেকে উপরিউক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের পিপিই, মাস্ক এন-৯৫ সরবরাহের জোর দাবি জানানো হয়। তা ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের পিপিই নিশ্চিত না করে এবং প্রয়োজনীয় জনবল, রোগী শনাক্তকরণ, চিকিৎসা সেবার ন্যূনতম ব্যবস্থা না করে নতুন আটটি হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে। বিশ^ করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট প্রতীয়মাণ হয় যে, বাংলাদেশ সরকার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে গোপনীয়তার আশ্রয় নিচ্ছে।

ড্যাব নেতারা দ্ব্যর্থহীনভাবে সরকারের উদ্দেশে বলেন, যাদের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে তাদের প্রত্যেককে অবিলম্বে পরীক্ষা ও যথাযথভাবে চিকিৎসা করা হোক। করোনা আক্রান্ত বা মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি বন্ধ করা হোক। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের সরকারি উদ্যোগে বীমা করা হোক। সমাজিক সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে অন্ততপক্ষে জেলা পর্যায়ে রোগী শনাক্তকরণের ব্যবস্থা এবং করোনা রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বহির্বিভাগে করোনা রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যকভাবে আলদা কর্ণার করা হোক। তারা আরো বলেন, করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন। এই পন্থা যথাযথভাবে কার্যকর করতে নি¤œ আয়ের মানুষদের অন্তত দুই বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। নতুবা উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তথা সরকার দায়ী থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা দেশের চিকিৎসরা যেভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ড্যাব নেতারা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/493104