৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ১:৩৬

বাড়ছে অভাবী মানুষের ভিড়

আমেনারা ভালোই ছিলেন। স্বামী রিকশা চালাতেন। দুই সন্তান লেখাপড়া করত। আর নিজে সংসার গোছাতেন। এখন দিন চলছে না। করোনার প্রভাবে স্বামীর কাজ বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে অন্য কাজের সন্ধানে নেমেছেন আমেনারা। বিকল্প পথ খুঁজছেন উপার্জনের। আবার অনেকে নেমেছেন সরকারি-বেসরকারি সহায়তার আশায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে এই অভাবী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

গতকাল বৃস্পতিবার দুপুরের দিকে আমেনাকে দেখা যায় যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজার আড়তে ফেলে দেয়া করলার ভেতর থেকে ভালোগুলো বের করতে। আমেনা জানালেন, আড়তদাররা যা ফেলে দেন তার ভেতর থেকে ভালো কিছু বের হয়। ওগুলো মহল্লায় নিয়ে বিক্রি করা যায়। গত কয়েকদিন ধরে একাজটিই করছেন তিনি। না হলে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চলছে না। আমেনা জানালেন, তার স্বামীর নাম জয়নাল। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। অনেক বছর ধরে যাত্রাবাড়ি কাঁচাবাজার আড়তের পেছনের গলিতে বসবাস করেন। স্বামী রিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করতেন তা দিয়ে বেশ ভালোই সংসার চলে যেত। করোনার কারণে স্বামীর রিকশা চালানো বন্ধ। রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামলেও যাত্রী পাওয়া যায় না। স্বামীর উপার্জন নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে তিনি রাস্তায় নেমেছেন।

আমেনাদের মতো অনেক মানুষকে গতকাল রাস্তায় দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লাতেই নয়, প্রধান প্রধান সড়কের পাশেও এই অভাবী মানুষের ভিড় বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন অসংখ্য মানুষকে দেখা গেছে। গাড়ি দেখলেই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ধনীদের বাসা-বাড়ির সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে আছে, এমন দৃশ্যও চোখে পড়েছে। গতকাল বিকেলের দিকে আরকে মিশন রোডের কয়েকটি বাড়ির সামনে এমন ভিড় লক্ষ করা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই মানুষগুলো সাহায্যের জন্য ওইসব বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছেন।

গতকাল সন্ধ্যার দিকে ইত্তেফাক মোড়ে হঠাৎ হইচই শুনে অনেকেই চমকে ওঠেন। আশপাশের ভবনগুলো থেকে অনেকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন আসলে কী ঘটেছে। পরে জানা যায়, সেখানে একটি গাড়িতে করে খাবার বিতরণ করছিল। খাবারের জন্য মানুষ চিৎকার চেঁচামেচি করেছেন। দুপুরের দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় দেখা যায়, একটি পাজেরো জিপকে শ’খানেক মানুষ ঘিরে ধরেছেন। তারা শুনেছেন ওই গাড়ি থেকে ত্রাণ দেয়া হবে। এভাবেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। কোনো গাড়ি এলে ঘিরে ধরেন। পথচারীদের দু-একজন যাওয়ার সময় তাদের সামনেও অনেকে হাত পাতছে।

শুধু যে শহরগুলোতেই এ অবস্থা তা নয়। গ্রামেও একই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী রেজা কবির বলেন, দিন যত যাবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে। কাজ না থাকলে মানুষের উপার্জন থাকবে না। মানুষ খাবে কী? মানবাধিকার কর্মী মোস্তফা সোহেল বলেন, এক্ষুণি ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

গতকাল রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় কিছু রিকশাচালক রাস্তায় আছে। কিন্তু তাতে যাত্রী নেই। আবদুল কাদের নামের এক রিকশাচালক জানালেন, এখন আর যাত্রীর জন্য নয়, রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়ান ত্রাণের আশায়। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যখন ত্রাণ দেয়া শুরু হয়, তখন গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। এভাবেই চলছে তাদের দিন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/493077/