৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ১:৩৫

১০ টাকা কেজিতে মাসে ৩০ কেজি চাল পাবে ৫০ লাখ পরিবার

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ১০ টাকা কেজিতে ওএমএসের চাল পাবেন ভোক্তারা। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে ডিলার মারফত দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে; যাতে প্রকৃত নি¤œ আয়ের মানুষ এই সুবিধা পায় সে জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে ওএমএস প্রাপ্তদের তালিকা হালনাগাদের জন্য চিঠি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

চিঠিতে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান খাদ্য সচিব প্রায় তিন মাস আগে সব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে তালিকাগুলো (ওএমএসপ্রাপ্ত) হালনাগাদ করার জন্য পত্র দিয়েছিলেন। তার পরও তালিকাগুলো যদি হালনাগাদ না হয়ে থাকে তবে আপনাদের কাছে আমার পুনঃনির্দেশনা যদি কোনো ডিলার, কোনো মেম্বর বা কেউ যদি বেনামি কার্ড সংরক্ষণ করে থাকেন তবে আগামী ৫ এপ্রিলের (রোববার) মধ্যে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তা জমা দেবেন এবং স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতিমালা অনুসরণ করে রিপ্লেসমেন্ট করবেন।’

খাদ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই নির্দেশনার পরেও যদি কোনো অবৈধ কার্ড ধরা পড়ে, তবে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’ বিষটি জেলা প্রশাসকদের তার অধীনস্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও অবহিত করতে নির্দেশ দেন সাধান চন্দ্র মজুমদার।

এ দিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম ১০ টাকা কেজিতে ওএমএসের চাল বিক্রি করতে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে আদেশ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। গত বুধবার খাদ্যসচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে মোট ১৩টি নির্দেশনা প্রদান করেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে বিশ্বের ১৯৯টি দেশে নভেল করোনাভাইরাস-১৯-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং এর প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ওএমএসের মাধ্যমে ভোক্তাপর্যায়ে চালের মূল্য প্রতি কেজি ১০ টাকা নির্ধারণ করার ঘোষণা দেন। তৎপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত ওএমএস খাতে চালের এক্স-গুদাম মূল্য ২৮ টাকার পরিবর্তে ৮ টাকা এবং ভোক্তাপর্যায়ে ৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করে।’

চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতি এবং ওএমএস খাতে চালের মূল্য পুনর্নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নি¤েœাক্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে: করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট কর্মহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ এই ওএমএস কর্মসূচি চলমান ওএমএস (আটা) কর্মসূচির অতিরিক্ত হিসেবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে; করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে জনসাধারণ গৃহে অবস্থান করায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, তৃতীয়লিঙ্গ (হিজড়া) সম্প্রদায়সহ অন্য সব কর্মহীন মানুষকে এর আওতায় এনে এই বিশেষ ওএমএস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে; একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ভোক্তা হিসেবে নির্বাচন করা যাবে না। এ ছাড়া যদি ওই পরিবারের কেউ খাদ্যবান্ধব অথবা ভিজিডি কর্মসূচির উপকারভোগী হয়ে থাকেন, তা হলে তিনি এই কর্মসূচির (ওএমএস) আওতায় ভোক্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না; জেলা ও বিভাগীয় শহরের কেন্দ্র প্রতি দুই টন এবং ঢাকা মহানগরের কেন্দ্র প্রতি তিন টন করে চাল প্রতিদিন বিক্রি করা যাবে; জেলা/বিভাগীয়/ঢাকা মহানগরীর ওএমএস বরাদ্দের পরিমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ওএমএস কমিটির মাধ্যমে বিদ্রমান ওএমএস বিক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ঠিক রেখে বিক্রয়কেন্দ্রের স্থান পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবীদের বসবাস কেন্দ্রের নিকটস্থ বস্তি এলাকা অথবা পর্যাপ্ত খালি জায়গা আছে এমন স্থানকে অস্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করতে হবে; জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সপ্তাহে একবার একজন ভোক্তা ৫ কেজি চাল নিতে পারবেন। সপ্তাহে তিন দিন রোব, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিক্রয় কার্যক্রম চালাতে হবে; স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা প্রতিনিধির উপস্থিতি বা তদারকিতে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে; করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি (দূরত্ব বজায়) পরিপালনপূর্বক বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে; ওএমএস নীতিমালায় বর্ণিত জেলা/বিভাগীয়/ঢাকা মহানগীরর কমিটি সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করবে; খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক সরবরাহকৃত নমুনা অনুযায়ী কার্ড প্রস্তুত করে কার্ডের মাধ্যমে চাল বা আটা বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ডিলাররা দৈনিক বিক্রয় প্রতিবেদন তদারকি কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষর গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট ওএমএস কমিটির সভাপতির কাছে প্রেরণ করবে।

এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিতকরণপূর্বক অতি জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাদ্যসচিব খাদ্য অধিদফতরের ডিজিকে অনুরোধ করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/493081/