২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৩:২৩

চট্টগ্রাম বন্দরে ভোগ্যপণ্যের স্তুপ

ভোগ্যপণ্যভর্তি কনটেইনারের স্তুপ পড়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সরবরাহ নেই বাজারে। ফলে খুব কম সময়ে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশিষ্টরা। সে কথা মানছেন ব্যবসায়ীরাও।

কিন্তু নিরুপায় ও হতাশা ব্যবসায়ীদের মুখে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বন্দর থেকে ভোগ্যপণ্য বাজারে সরবরাহ করতে পারছেননা তারা। পণ্য পরিবহণেও লোক পাওয়া যাচ্ছে না। অঘোষিত চলমান লকডাউনে পণ্য পরিবহণের লোকজন এখন ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

এখন তো যেমন তেমন. আর কয়েকটা দিন কনটেইনার ডেলিভারি না হলে পুরো বাংলাদেশ অচল হয়ে যাবে। এমন মত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এহসানুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা স্বাভাবিক গতিতে হচ্ছে। কিন্তু বন্দর ইয়ার্ড থেকে সেই পণ্য সরবরাহ হচ্ছে না। এতে রমজানের ভোগ্যপণ্য, জরুরি পণ্য এবং শিল্প কারখানার আমদানি পণ্য বন্দর ইয়ার্ডে আটকা পড়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দিনে চার থেকে সাড়ে চার হাজার একক পণ্যভর্তি কন্টেইনার ডেলিভারি নেন আমদানিকারকরা। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরুর পর ডেলিভারি কমে গড়ে সাড়ে ১২০০ একক কনটেইনারে নেমেছে। পণ্য সরবরাহে ধস নামায় বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার স্থান কমে গিয়ে পরিচালন ব্যবস্থায়ও ব্যাঘাত ঘটছে চরমভাবে।

বন্দরের হিসেব মতে, সাধারণ ছুটি শুরুর আগের দিন ৪ হাজার ৯১১ একক কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছিল। পরদিন ২৭ মার্চ ডেলিভারি হয়েছিল এক হাজার ৪২৩ একক, ২৮ মার্চ ৯০৬ একক, ২৯ মার্চ এক হাজার ২৮৬ একক, ৩০ মার্চ ডেলিভারি হয়েছে ১ এক হাজার ৩৯৩ একক কনটেইনার। মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্দরে কনটেইনার জমেছিল প্রায় ৪১ হাজার একক। অথচ বন্দরের কনটেইনার রাখার মোট ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার একক।

কনটেইনার ডেলিভারি কমেছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক ট্রাফিক এনামুল করীম বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য ২৪ ঘন্টা চালু রাখা হয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক খোলা রেখেছে দিনে দুই ঘণ্টা। শিপিং এজেন্ট অফিস খোলা রেখে দুই ঘণ্টা কার্যক্রম চালাচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসও সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালাচ্ছে। মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে কোনো বাধা নেই। ভোগ্যপণ্যের বড় আড়তগুলো খোলা। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য ডেলিভারি নিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সাধারণ ছুটিতে শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নেওয়া কমে গেছে। আড়তগুলো চালু থাকলেও বেচাকেনা সীমিত হয়ে গেছে। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে তো চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে।

চেম্বার সভাপতি বলেন, সারা দেশে কোনোভাবে যাতে পণ্য সরবরাহ ব্যাঘাত না হয় এবং কেউ যাতে অনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন সচল রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সাথে ফল ও খাদ্যপণ্য ছাড় করতে বিশেষ ব্যবস্থায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর ও আণবিক শক্তি কমিশনের অফিস খোলা রাখা জরুরী।

চেম্বার সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দুই ঘণ্টা খোলা রেখে যে ব্যাংকিং করছে তাতে এত পণ্য ডেলিভারি অর্ডারের কাজ করা যাচ্ছে না। কাস্টমসও নির্ধারিত কিছু পণ্য শুল্কায়নের জন্য কাজ করছে। এ নিয়মের কারণে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়ে আগ্রহ কমেছে। অবশ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সীমিত পরিসরে সব পণ্য শুল্কায়নের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সেটি কার্যকর হলেও তো লোকবল সংকট রয়েছে।

টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের চিফ অপারেটিং অফিসার ক্যাপ্টেন তানভীর হোসাইন জানান, কনটেইনার ওঠানামার ৬০ শতাংশ ওঠা-নামা হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল এনসিটি ও সিসিটিতে। সাধারণ ছুটিতেও সেখানে কাজ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে শ্রমিকদের নিজ বাসা থেকে বন্দরে আনা-নেওয়া করতে তিনটি বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। একই সাথে শ্রমিকদের করোনা ঝুঁকি এড়াতে বিশেষ নিরাপত্তা মাস্ক, ২০টি পয়েন্টে সাবান-স্যানিটাইজারও ব্যবস্থা করেছে। ফলে দুটি টার্মিনালেই পণ্য ওঠানামা নিরবিচ্ছন্ন রয়েছে।

ক্যাপ্টেন তানভীর বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ায় এখন ২৪ ঘণ্টায় আমরা জাহাজে ৪ হাজার ২০০ একক কনটেইনার ওঠানামা করছি। কিন্তু সে অনুযায়ী কনটেইনার বন্দর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে জাহাজ থেকে নামিয়ে কনটেইনার রাখার ইয়ার্ড সংকট হচ্ছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=220071