২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৩:১৬

বাংলাদেশে করোনা নিয়ে হুঁশিয়ারি

জাতিসঙ্ঘের ফাঁস হওয়া একটি আন্তঃসংস্থা নথিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রশমন ও অবদমনে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হলে কোভিড-১৯ রোগ বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ‘জাতীয় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা’ (সিপিআরপি ভি১) শীর্ষক এই নথিতে এই কথা বলা হয়েছে চলতি সপ্তাহে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের এই নথিটি দেয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি বারদন জং রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের হাতে আসা এই নথি ‘ডব্লিউএইচওর নেতৃত্বে প্রস্তুতকৃত আন্তঃসংস্থা নথি। জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক এতে সহযোগী হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

২৬ মার্চের এই নথিতে বলা হয়, ভয়াবহতা বিবেচনা করে বাংলাদেশকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো উচিত। এই নথির লেখকরা কোনো রাখঢাক করেননি। সরাসরিই বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে কোভিড-১৯ ভাইরাস কিংবা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসা পাবে না। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, ‘মহামারীর প্রথম দিকেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ন্যুব্জ হয়ে পড়বে।’

তারা আরো পূর্বাভাস দিয়েছেন, দুর্বল ‘সংক্রমণ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ চর্চা, পিপিইর (পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) অপ্রতুলতা এবং মাধ্যমিক ও পরিণত পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ অত্যধিক বেশি’ হওয়ার কারণে কোভিড-১৯ ভাইরাসে স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা ‘ব্যাপকহারে’ সংক্রমিত হতে পারেন।

২৬ মার্চ ঢাকা বন্ধ করে দেয়ার আগে শহর থেকে আনুমানিক ৯০ লাখ মানুষকে বের হতে দেয়ার যেই সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই সিপিআরপি নথিতে। তবে নথিতে এও বলা হয় যে, ঢাকা থেকে লোকজন বের হয়ে যাওয়ায় রাজধানী শহরের ওপর কোভিড-১৯ রোগীদের বোঝা হয়তো কমেছে এবং তা দেশজুড়ে বিন্যস্ত হয়েছে।

কমিউনিটি পর্যায়ে সংক্রমণ বিচ্ছিন্ন করা ও স্বাস্থ্য স্থাপনাগুলো যেন প্রস্তুত হওয়ার কিছুটা সময় পায়, সেজন্য জাতিসঙ্ঘের এই নথির লেখকরা একটি অবদমন কৌশল অবলম্বনের সুপারিশ করেছেন। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় পর্যাপ্তভাবে সরঞ্জাম ও বিভিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য বড় আকারের ক্রয়ের প্রয়োজন মেটাতে তাৎক্ষণিক ৩০০ মিলিয়ন ডলার (২৫৪৫ কোটি টাকা) অনুদান চেয়েছেন তারা।

জাতিসঙ্ঘের এই আন্তঃসংস্থার নথিতে উল্লেখ করা হয় যে, শুধুমাত্র ‘লকডাউন’ করে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ খুব বেশি কমানো যাবে না। শুধু ভাইরাসের অবদমনই এর সংক্রমণ হার পর্যাপ্তভাবে কমিয়ে মহামারীর প্রকোপকে ভোঁতা করে দিতে পারে।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার অবদমন ও প্রশমনের জন্য ছয় দফা কর্মপরিকল্পনার কথা নথিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলো হলোÑ অবিলম্বে দেশজুড়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী খোঁজা ও শনাক্ত করা; কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরুর জন্য বর্তমানে যেসব পরীক্ষাগার আছে তাদের সামর্থ্য যাচাই করা; জরুরিভিত্তিতে পিপিই, হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য মেডিক্যাল সরঞ্জাম ক্রয় করা, রোগী অগ্রাধিকার, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও রোগী ব্যবস্থাপনা উন্নতকরণের লক্ষ্যে দেশজুড়ে স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু করা; কমিউনিটি পর্যায়ে ঝুঁকি যোগাযোগ এবং সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত পদক্ষেপ বজায় রাখতে সচেতনতামূলক প্রচারণা।

এই নথিতে যেসব কর্মপরিকল্পনার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে, সেই ব্যাপারে ডব্লিউএইচওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি বারদন জং রানা নেত্র নিউজকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে’ জিততে হলে আক্রমণাত্মকভাবে ও নিশানা ঠিক করে এই ভাইরাসকে আক্রমণ করতে হবে, নতুন রোগী খুঁজে বের করতে হবে, প্রত্যেক যাচাইকৃত রোগীকে পৃথক করতে হবে, সেবা দিতে হবে এবং প্রত্যেক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। তিনি আরো নিশ্চিত করেন, এই কর্মপরিকল্পনা সরকারের অংশগ্রহণে জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে যৌথভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের এই নথিতে আরো বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন দেশজুড়ে বন্ধ করাসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমন্বিত প্রভাবের কারণে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগের বিস্তারের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/492826