২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ২:২৬

খাদের কিনারে মেগাপ্রকল্প

করোনাভাইরাসের প্রভাব

করোনায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজের গতি অনেকটাই থমকে গেছে। সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ মেগা প্রকল্প হলো: পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল), পদ্মা রেলসেতু সংযোগ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, রামপাল মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট, মাতারবাড়ি আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফাওয়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মেট্রোরেলের কাজে অগ্রগতি হয়েছে সর্বাধিক। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে।

বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলমান অন্তত ৮৫টি মেগাপ্রকল্প, গুচ্ছপ্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে থমকে গেছে। যার পেছেনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশি^ক মহামারী পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক প্রভাব কমবেশি পড়েছে প্রকল্পবহরে। ভবিষ্যৎ নিয়েই চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বিনিয়োগকারী মহল। এ অবস্থায় খাদের কিনারে ধাবিত হচ্ছে চট্টগ্রামকে ঘিরে অর্থনৈতিক রাজধানী বাস্তবায়নের মেগাপ্রকল্প। আর সেই সাথে মেগাস্বপ্ন। চট্টগ্রামের প্রকল্পগুলো শেষ হলেই আগামী এক থেকে দুই বছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ এমনকি আরো অতিক্রমের আশাবাদ তৈরি হয়। জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশ প্রকল্পগুলোতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা করছে।

এদিকে কর্ণফুলী পাড়ে কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) গত বুধবার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানি ইয়াংওয়ান কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৫শ’ একর জমিতে ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে কেইপিজেড দেশের একক বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত ইপিজেড। করোনায় আপদকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-প্রতিষ্ঠানসহ সকল খাত আর্থিক সঙ্কটে বিলীন হওয়ার শঙ্কা ব্যক্ত করে গতকাল চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা, মওকুফ, ছাড়-অব্যাহতিসহ ১০ দফা জরুরি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে করোনা ধকলের মুখোমুখি পড়া প্রকল্পবহরে রয়েছে- উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সম্প্রসারণে বে-টার্মিনাল প্রকল্প, মিরসরাই থেকে কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভওয়ে কাম সামুদ্রিক বেড়িবাঁধ সম্প্রসারণ, মীরসরাইয়-সীতাকুন্ডে কন্টেইনার পোর্ট সুবিধা গড়া, আনোয়ারায় চায়না অর্থনৈতিক ও শিল্পজোন, সাঙ্গু নদীর তীরে বিশেষায়িত শিল্পজোন স্থাপন, কর্ণফুলী এক লাখ টনী রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতে ডক-শিপইয়ার্ড নির্মাণ, মহেশখালীর মাতারবাড়ী-ধলঘাটে নির্মাণাধীন বহুমুখী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প, চলমান জ্বালানি হাব মেগাপ্রকল্প, দোহাজারী-রামু-ঘুনধুম-কক্সবাজার রেলপথের চলমান সম্প্রসারণ মেগাপ্রকল্প, মহেশখালীতে সিঙ্গেল পয়েন্ট ডবল মুরিং (এসপিএম) জ্বালানি প্রকল্প, এলএনজি সরবরাহ সম্প্রসারণ প্রকল্প, মহেশখালী-চট্টগ্রাম-পতেঙ্গা হয়ে ঢাকায় ও কুর্মিটলায় (বিমানবন্দর পর্যন্ত জেট ফুয়েল) সরাসরি জ্বালানি তেল সরবরাহে অত্যাধুনিক পাইপলাইন মেগাপ্রকল্প, টেকনাফ ও সোনাদিয়া দ্বীপে বিদেশিদের জন্য স্বতন্ত্র সুবিধাসমৃদ্ধ পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্র, মেরিন পার্ক, আইটি সিটি স্থাপন প্রকল্প ইত্যাদি।

এরমধ্যে চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার ৬৩টি শিল্প-বাণিজ্যিক প্রকল্প। কক্সবাজারে চলমান ডজন সংখ্যক দেশি-বিদেশি কোম্পানির ২২টি মেগা ও গুচ্ছপ্রকল্প। বিনিয়োগের অঙ্ক সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি। এর পেছেনে ভ‚মি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কয়েক হাজার একর। এ অবস্থায় লাখ লাখ

এ প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। অবস্থা মূল্যায়ণ করার সময় আসেনি। বেজার আওতায় চলমান বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোতে যিিন্ত্রক ও প্রযুক্তি-নির্ভর কাজ চলছে। সেখানে বিদেশি যারা এখনও আছেন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শ্রমিক বা কর্মী নির্ভর সব কর্মকান্ড বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই কাজ সচল হবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রামের দেশি-বিদেশি শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পবহরের জন্য সমুদ্রবন্দর দিয়ে জাহাজে যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন সামগ্রী আসা অব্যাহত রয়েছে। আছে আগের মজুদও। কিন্তু করোনা সংক্রমণরোধে দেশে কার্যত অনির্দিষ্টকাল ছুটি, বন্ধ কিংবা লকডাউন ও শাটডাউন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকছে। এতে করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ওইসব মেগা বিনিয়োগ প্রকল্প ও উন্নয়ন প্রকল্পস্থলে আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি, সামগ্রী, নানা উপকরণ পরিবহন, স্থানান্তর এবং সংযোজন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া প্রকল্পবহরে কর্মরত চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর ও বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলী, কারিগর ও কর্মীরা বেশিরভাগই প্রকল্পস্থলে এখন অনুপস্থিত। হয় দেশে দেশে আটকা পড়েছেন। অথবা এসে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে বসবাসসহ নানাবিধ বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন।

https://www.dailyinqilab.com/article/280081