১ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ৯:১৬

করোনা সন্দেহের ৬ জনের মৃত্যু

আরো ২ রোগী শনাক্ত , ১০ কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা, উপসর্গ নিয়ে মৃতের পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট

দেশে আরো দুইজনের শরীরের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫১ এবং মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নমুনায় এ ভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। এ দিকে গতকালও করোনা উপসর্গ নিয়ে ৬ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জের এক ব্যক্তি ১৬টি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা পাননি।

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আইইডিসিআরের পরীক্ষায় আরো দু’জন করোনাভারাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। নতুন আক্রান্ত দু’জনই পুরুষ। তাদের একজন সৌদি আরব থেকে এসেছেন। আরেকজনের বিদেশে যাওয়ার ইতিহাস নেই। তিনি কোথা থেকে আক্রান্ত হয়েছেন তা অজানা। আইইডিসিআরের অনুসন্ধানী দল তা বের করার চেষ্টা করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এর মধ্যে থেকে দু’জনের আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। আক্রান্ত দু’জনই সুস্থ, শরীরের তেমন উপসর্গ নেই। তাদের মধ্যে কোনো জটিলতাও নেই। তাদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৬০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনাভাাইরাসে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৫১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেহে করোনার কোনো জীবাণু না পাওয়ায় আরো ছয়জনকে করোনা মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই ছয়জনের চারজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা। তাদের একজনের বয়স ৭০ বছর। চারজনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে একজন নার্স রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার নিয়মিত অনলাইন অনলাইন প্রেস বিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদী সেবিনা ফ্লোরা এসব তথ্য দেন। তার সাথে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএসের পরিচালক ডা: হাবিবুর রহমান।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের করোনা সন্দেহে মৃত্যু বিষয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় করোনা সেন্দহে যে মৃত্যু হয়েছে সেগুলোর নমুনা পরীক্ষা করেছি। তাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের ১৪ দিন এবং এক মাসের মধ্যে আবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস নেই তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা: হাবিবুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে ঢাকায় সাতটি কেন্দ্রে এবং ঢাকার বাইরের তিনটি কেন্দ্রে করোনা নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকায় আরো তিনটি এবং ঢাকার বাইরে পাঁচটি কেন্দ্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকায় আরো চারটি কেন্দ্রে এবং ঢাকার বাইরে ছয়টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। দেশে তখন সর্বমোট ২৮টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাস পরীক্ষার করা হবে। তিনি জানান, সরকারের কাছে ৯২ হাজার পিসিআর কিট মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে তিন লাখ ৩৪ হাজার ২৭০টি পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পিপিই মজুদ রয়েছে বলে তিনি জানান। সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে আরো করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বৃদ্ধি করছি।

নবাবগঞ্জে একজনের মৃত্যু


দোহার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে পান্নু মিয়া (৫৮) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পান্নু মিয়া উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের খতিয়া মাছপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গত সোমবার মধ্যরাতে তিনি রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মকর্তা ডা: শহিদুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পান্নু মিয়া গত ৬-৭ দিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। সোমবার রাত ৮টার দিকে তাকে নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ইউনিটে করা হয়। কিছুক্ষণ পরই তার অবস্থার অবনতি দেখে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। মৃতের স্বজনরা জানান, সম্প্রতি পান্নু মিয়ার এক প্রতিবেশী ইতালি থেকে বাড়ি এসেছেন।

মধুপুরে যুবকের মৃত্যু

মধুপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মহিষমারা (টিক্কার বাজার) এলাকার হাসেন আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান (৩২) নামে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ঢাকায় হাবিবুরের পানের দোকান ছিল। গত এক সপ্তাহ আগে তিনি বাড়ি আসেন। এর পর থেকেই তার সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরিবারের লোক ভয়ে বিষয়টি গোপন রেখেছিল। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে গলা দিয়ে রক্ত পড়ায় হাবিবুরের মা হাসনা বেগম কান্নাকাটি শুরু করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বেলা ২টার দিকে হাবিবুরের মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ মৃতের নমুনা সংগ্রহ করেছে। উপজেলা মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে দাফন-কাফন করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে এবং বাইরের কোনো লোক ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

ভাণ্ডারিয়ায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু, বাড়ি লকডাউন

পিরোজপুর ও ভাণ্ডারিয়া সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব ধাওয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল আজিজ হাওলাদারের ছেলে সবুজ হাওলাদার (১৮) সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল দুপুরে নিজ বাড়িতে মারা গেছে। এ ঘটনায় করোনা সন্দেহে প্রশাসন মৃত ওই স্কুলছাত্রের বাড়ি ও আশপাশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে। তবে সে করোনা আক্রান্ত কি না তা নিশ্চিত হতে প্রশাসন নমুনা (ছোয়াব) সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালক ডা: এইচ এম জহিরুল ইসলাম জানান, সবুজ গত চার দিন আগে সর্দি-জ্বর ও কাঁশিতে আক্রান্ত হয়। তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়েছে। মৃতের বাড়িসহ আশপাশ থেকে যেন কেউ বের হতে বা ঢুকতে না পারে সে জন্যে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রাজাপুরে জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে দিনমজুরের মৃত্যু, এলাকায় করোনাভীতি

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির রাজাপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আবদুল হাকিম হাওলাদার (৬০) নামে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের সাউথপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। আবদুল হাকিম মৃত মৌজে আলী হাওলাদারের ছেলে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সকালে তার মৃত্যু হলেও বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত স্থানীয় বা প্রতিবেশীদের কাউকে বাড়িতে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা জানায়, গত এক সপ্তাহ আগে হাকিম হাওলাদারের জ্বর হয়। পরে স্বজনরা তাকে নিয়ে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি চলে আসে। চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ ছিল। এ অবস্থায় গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়। রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবুল খায়ের মাহমুদ ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে পরীক্ষার আগে কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি।

নলছিটিতে ভারত থেকে আসা ব্যক্তি জ¦রে আক্রান্ত, তিন বাড়িতে লাল নিশানা : ঝালকাঠির নলছিটি পৌর এলাকার অনুরাগ গ্রামের শ^শুর বাড়িতে ভারত থেকে আসা এক ব্যক্তি জ¦র, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হওয়ায় আশপাশের তিনটি বাড়িতে লাল নিশানা টাঙিয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বিদেশফেরত হাবিবুর রহমান নামে ওই ব্যক্তিসহ তিনটি বাড়িতে বসবাসকারী ২২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদারের নির্দেশে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে।

রাজবাড়ীর আইসোলেশন থেকে দুইজনকে ঢাকায় প্রেরণ

রাজবাড়ী ও বালিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে থাকা ৬০ বছর বয়সী এক সবজিবিক্রেতা ও সদরের চন্দনী ইউনিয়নের পূর্ব ডাউকী গ্রামের জনৈক নার্সের ছেলেকে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, শরীরব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এক সবজিবিক্রেতা। পরে একই সমস্যা নিয়ে আসেন আরো এক যবুক। এই যুবকের মা রুবি বেগম একজন নার্স। তিনি উখিয়ার এক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত। গত ২৫ মার্চ ওই নার্স বাড়িতে আসেন। এর পর থেকেই তার ছেলের জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে তার করোনা সংক্রমণ হয়েছে। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ছয়জনসহ রাজবাড়ীতে মোট ৬৩৩ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৮৩ জন।

রামেকে আজ করোনা শনাক্তের কাজ শুরু

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৫৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহী জেলায় গতকাল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৯৩ জন। তবে এখনো রাজশাহীতে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। গতকাল রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: এনামুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ অবস্থায় আজ বুধবার থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হবে। এখানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে ইতালিফেরত আরো সাত ব্যক্তিকে সুস্থতার ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। আজ ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরবেন তারা। গত ১৮ মার্চ ওই সাতজনকে গাজীপুর মহানগরের পূবাইলের মেঘডুবি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে পাবুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। এর আগে ১৬ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর সোমবার জেলা সদরের মেঘডুবি কেন্দ্র থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরে যান নারী ও শিশুসহ ইতালিফেরত ৩৬ জন। শরীরে জ্বর থাকায় গত ১৫ ও ১৬ মার্চ পূবাইলের মেঘডুবি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে আটজনকে দুই দফায় রাজধানীর উত্তরায় কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। যাদের একজনের মধ্যে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।

মানিকগঞ্জ ও ঘিওর সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বরইছড়া গ্রামকে গতকাল সকালে লকডাউন মুক্ত ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনাভাইরাসের লক্ষণ আছে এমন এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় রোববার বিকেলে ওই গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় কিন্তু ওই নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ায় লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। তবে ওই পরিবারের দুই শিশুর সর্দি ও কাশি রয়েছে। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের করোনা শনাক্ত হয়নি

রংপুর অফিস জানায়, করোনা আক্রান্ত সন্দেহে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি হওয়া ঢাকায় ক্যাসিনো ক্লাবের কর্মচারী ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশবাড়ির রুহুল আমিনসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে করোনার উপস্থিতি পায়নি আইইডিসিআর। রমেক হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির নোমান জানান, গতকাল সকালে ওই পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আইইডিসিআর থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে পৌঁছায়। সেখানে তাদের শরীরে করোনাভাইরাস না পাওয়ার কথা জানানো হয়। গত শনিবার রাতে তাদের ওই হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গত রোববার দুপুরে তাদের শরীরের নমুনা পাঠানো হয় আইইডিসিআরে।

এ দিকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন বিদেশফেরত আরও ১২০ জন। এ নিয়ে এ বিভাগে মোট হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন এক হাজার ১৬০ জন। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত এই বিভাগের আট জেলায় মোট তিন হাজার ৫৩ জন হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এর মধ্যে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে এক হাজার ৯৪২ জনকে। এখন আছেন এক হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে রংপুরের ৪২৮ জনের মধ্যে বর্তমানে ১১৪ জন, পঞ্চগড়ে ৬৯৪ জনের মধ্যে ৯৬ জন, নীলফামারীতে ২৬৭ জনের মধ্যে ১২৭ জন, লালমনিরহাটে ১৯২ জনের মধ্যে ১১৮ জন, কুড়িগ্রামে ৩৩১ জনের মধ্যে ৭১ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৬৫ জনের মধ্যে ১৩০ জন, দিনাজপুরে ৫৬৬ জনের মধ্যে ২৯২ জন এবং গাইবান্ধায় ৩৫০ জনের মধ্যে ২১২ জন বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। এর মধ্যে গাইবান্ধায় চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

গৌরনদীতে পুলিশ-ঢাকাফেরতদের লুকোচুরি খেলা

গৌরনদী (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ, সরিকল ও নলচিরাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে চলছে পুলিশ-ঢাকাফেরতদের লুকোচুরি খেলা। করোনার কারণে ছুটি ঘোষণা করায় ঢাকা থেকে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ গৌরনদীতে এসেছেন। এসব গ্রামের হাটবাজারসহ বিভিন্ন চা দোকানে চলছে তাদের অবাধ যাতায়াত। চলছে কুশলবিনিময়। অনেকটা ঈদের আমেজ বিরাজ করছে এসব গ্রামে। এতে স্থায়ীভাবে গ্রামে থাকা মানুষেরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। মসজিদের মাইকে ঢাকাফেরতদের সতর্ক করা হলেও আমলে নিচ্ছেন না তারা। থানা থেকে পুলিশ এলে কিছু সময়ের জন্য তারা আড়ালে চলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার জনসমাগম আগের মতোই হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সাথে যেন লুকোচুরি খেলা। এমন পরিস্থিতিতে এসব গ্রামে পুলিশি টহল জোরদারের দাবি উঠেছে।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, বিদেশফেরতদের অনেকেরই মেয়াদ শেষ হওয়ায় কুমিল্লায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সংখ্যা কমে এসেছে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে প্রবেশ করেছেন ১১ জন। বর্তমানে এ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭৯৩ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৭৮ জন।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামে পদ্মা সেতুর দুই শ্রমিককে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত রোববার বিকেলে নৌকায় তারা ভাটপাড়া গ্রামে আসেন। ওই দুই শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন গুজবে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো: শামসুজ্জোহা ও থানার ওসি আতাউর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই শ্রমিককে পৃথক কক্ষে পর্যবেক্ষণে রেখে আসেন। গতকাল একটি মেডিক্যাল টিম ওই দুই শ্রমিককের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। এ সময় তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ না পেলেও তাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেন।

আমতলীতে চিকিৎসক আইসোলেশনে

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা: মাহমুদ মোরশেদ আল মামুনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে ওই চিকিৎসকে গত সোমবার বিকেলে হাসপাতালে যান। বরগুনা সিভিল সার্জন ডা: হুমায়ূন শাহীন খান বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ডা: মাহমুদ মোরশেদ আল মামুন আইসোলেশনে ভর্তি হয়েছেন। তার নমুনা সংগ্রহ করে গত সোমবার বিকেলে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

মৃত্যুর আগে কেরানীগঞ্জের যুবক ঘুরেছেন ১৬ হাসপাতাল

ইউএনবি জানায়, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় সর্দি, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোমবার ফয়সাল (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার মান্দাইল এলাকার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী নাসির উদ্দিনের ছেলে ফয়সাল আহমেদ গত ২০ দিন ধরে জ্বর, ঠাণ্ডা ও কাশিতে ভুগছিলেন। সোমবার সকালে ফয়সারের কাশির সাথে নাক দিয়ে রক্তঝড়া শুরু হলে তার বড় ভাই জিগির আহমেদ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাজধানীর মিডফোর্ড, ঢাকা মেডিক্যালসহ উত্তরা পর্যন্ত ১৬টি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিকেলে তিনি মারা যান। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি কাজী মইনুল ইসলাম জানান, তারা ফয়সালের মৃত্যুর খবর শুনেছেন।

পঞ্চগড়ে সাত দিন পর হাসপাতালে ঠাঁই পেলেন স্টেশনে পড়ে থাকা নারী

ইউএনবি আরো জানায়, পঞ্চগড় রেলস্টেশনে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে থাকা এক নারী পুলিশের হস্তক্ষেপে সাত দিন পর হাসপাতালে ঠাঁই পেয়েছেন। করোনাভাইরাস আতঙ্কে এত দিন তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি কেউ। পুলিশ জানায়, মনোয়ারা বেগম (৪২) নামে ওই নারী ২৪ মার্চ ট্রেনে করে দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড়ে এসে নামেন। এরপর থেকে তিনি স্টেশনেই ছিলেন। তার কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। তিনি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে কেউ তার কাছে যাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ৩০ মার্চ রাতে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর নজরে বিষয়টি এলে তিনি তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাছ আহমদ জানান, মনোয়ারা বেগম দিনাজপুরের বালুবাড়ি থেকে পঞ্চগড়ে আসেন। তার স্বামীর নাম সেলিম বলে তিনি জানিয়েছেন কিন্তু কোথায় যাবেন তা বলতে পারছেন না। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা: সিরাজউদ্দৌলা পলিন বলেন, ‘হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে মনোয়ারা বেগমকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তার শরীরে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা পেয়ে তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন। তারপরও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’

সাতক্ষীরা মেডিক্যালে একজন আইসোলেশনে

ইউএনবি জানায়, সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গতকাল সকালে আমিরুল ইসলাম গাজী নামে এক ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এর আগে সোমবার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এলে তাকে প্রথমে সাধারণ ইনফ্লুয়েনজা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আমিরুল ইসলাম কালিগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের আবুল গাজীর ছেলে ও একজন এনজিওকর্মী। তার শরীরের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। নমুনা রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সিলেটে আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি হওয়া কিশোরীর মৃত্যু

ইউএনবি জানায়, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে গতকাল জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে ভর্তি হওয়া এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত জুলেফা বেগমের (১৬) বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার জালালপুর গ্রামে। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: হিমাংশু লাল রায়। তিনি জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই কিশোরী বেলা ২টা ৫ মিনিটে মারা যায়। তবে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: প্রেমানন্দ মণ্ডল জানান, জীবিত থাকা অবস্থায় ওই কিশোরীর গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। এর আগে শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কোয়ারেন্টাইনে থাকা এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীর মৃত্যু হয়েছিল। তবে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় দেখা গেছে তিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হলো এক হাজার ৬৯৫ জন প্রবাসীকে। বর্তমানে রয়েছেন ৫১৮ জন প্রবাসী। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান জানান, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এক হাজার ১৭৭ জনকে।

রাজশাহীতে পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নেয়া বাধ্যতামূলক

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, শিগগিরই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) ল্যাবে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু হবে। তবে যে কেউ চাইলেই সেখানে তিনি নিজের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবেন না। এ জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নেয়াটা হবে বাধ্যতামূলক। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখার পর তিনি কনফার্ম করলেই সাসপেক্টের নমুনা সংগ্রহ করে নির্ধারিত ল্যাবে টেস্ট করা হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য রামেক হাসপাতালের চিকিৎসা কমিটির আহ্বায়ক ডা: আজিজুল হক আজাদ গতকাল দুপুরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ থাকলে রোগীকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হচ্ছে। তবে কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যাথা ও জ্বর থাকা অর্থই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়। টেস্টের পরই সেটা কনফার্ম করে বলা যাবে। আর টেস্ট করানোর আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সুপারিশ নেয়া লাগবে।

ডা: আজিজুল হক বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা যাতে অন্য কোনো রোগীর সংস্পর্শে আসতে না পারে সেজন্য হাসপাতালের বার্ন ইউনিট (২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড) আলাদাভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানেই আক্রান্তদের রেখে চিকিৎসা দেয়া হবে। ১ এপ্রিল থেকে এটি চালু হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/492608/