৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৫৪

করোনায় ‘লকডাউনের’ প্রভাব: দূষণে ঢাকা বিশ্বে ২৩ নম্বরে

বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান এখন ২৩ নম্বরে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদনে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ২১ মার্চও ঢাকা বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল।

করোনাভাইরাসের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে রাজধানী শহরের বায়ুর মানের এমন উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা আতঙ্কে যান চলাচল ও নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ শিল্পকারখানায় চলছে ছুটি। এ কারণেই বাতাসের দূষণ অনেক কমে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ গবেষক ড. আবদুস সালাম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ ছুটি থাকায় শিল্পকারখানা, নির্মাণ কাজ ও যানবাহন কম চলায় বাতাসের এমন উন্নতি। ঢাকার বাতাসের দূষণের প্রধান কারণ চারটি।

এগুলো হচ্ছে- যানবাহন, বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ইটভাটা। চলমান সাধারণ ছুটিতে ঢাকায় সাধারণ জীবনযাত্রা নেই বললেই চলে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বায়ুর মানে। ঢাকা আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলে হয়তো বৈশ্বিক হিসাবে এ শহরের বায়ুর মান আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তবে বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকরা সচেতন ও আন্তরিক হলে অপেক্ষাকৃত মানসম্মত বায়ু নগরবাসীর পক্ষে পাওয়া সম্ভব।

করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। বন্ধ আছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কার্যত ‘লকডাউনে’ আছে দেশ। মানুষের চলাচল একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। যে কারণে একিউএয়ারের লাইভ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে বেলা ৩টায় দূষণের দিক থেকে বিশ্বে ঢাকার অবস্থান ছিল ২৯ নম্বরে। বিকালের দিকে শহরে যানবাহনের চলাচল বেড়ে যায়। ফলে বিকাল ৫টায় ইনডেক্সে ঢাকার অবস্থান নেমে ২৫ আর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ২৩ হয়।

পরিবেশবিজ্ঞানী ও গবেষকদের মতে, বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস ধুলোবালি। এছাড়া আছে অপরিকল্পিত-অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ। মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ভারি ধাতু ধুলার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে প্রাপ্ত ধুলায় সর্বোচ্চ মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে মাটিতে যে মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকার কথা, ধুলায় তার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। আর নিকেল ও সিসার মাত্রা দ্বিগুণের বেশি। খুব সহজেই এসব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ত্বকের সংস্পর্শে আসছে। শ্বাসপ্রশ্বাস, খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে। টানা ১০ দিনের ছুটি শুরুর পর থেকে গণপরিবহন, শিল্পকারখানা ও নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় উন্নতি ঘটছে বায়ুর মান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বায়ুর দূষণ যদি সাধারণ মাত্রায় থাকে তাহলে শ্বাসনালির নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, নানা রকম ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাজমা, চর্মরোগ, পেটের পীড়া পর্যন্ত হতে পারে এ কারণে। এ ধরনের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বৃদ্ধরা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/294226/