৩০ মার্চ ২০২০, সোমবার, ১:০৭

বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ

করোনা ঠেকাতে অঘোষিত লকডাউন

যাত্রাবাড়ীর পাইকারী বাজারে দিনমজুরের কাজ করেন সোবহান মিয়া। খুচরা বিক্রেতাদের ভ্যান বা রিকশায় মালামাল তুলে দিয়ে ১০/১৫ টাকা করে সারাদিনে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। করোনার কারণে ঢাকা এখন অঘোষিত লকডাউন। পাইকারী বাজার খোলা থাকলেও মালামাল কেনার মানুষ কম। সেজন্য কাজও নেই। সোবহান মিয়া বলেন, পাইকাররা কিছু সাহায্য করছেন। তাতে নিজের খাওয়ার টাকা জোগাড় হলেও সংসার চলে না। কয়েকদিন কোনমতে চলেছি। সামনের দিনগুলো কিভাবে যে কাটবে আল্লাহই জানে।

গতকাল রোববার তপ্ত দুপুরে জুরাইনে কথা হয় রিকশাচালক লিয়াকতের সাথে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও দুপুরের ভাত খাওয়ার টাকা জোগাড় হয়নি বলে জানালেন পঞ্চাশোর্ধ রিকশাচালক লিয়াকত। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম রাস্তায় মানুষজনের দেখা মিলবেই। ভাড়াও পাবো। কিন্তু রিকশায় ওঠার মানুষই পাচ্ছি না। যারা বাইরে বেরুচ্ছেন তাদের অধিকাংশই পায়ে হেঁটে চলছেন। লিয়াকত বলেন, একবেলায় যা পেয়েছি তাতে নাস্তার টাকাও হয়নি। গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ভুল করেছি। এখন যাওয়ারও উপায় নেই। সোবহান মিয়া ও লিয়াকতের মতো রাজধানীতে বহু ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ এখন বিপাকে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাণঘাতী থাবায় আতঙ্কিত মানুষ। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে বাসা-বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। যাদের ঘরই নেই, তারা কিভাবে ঘরে থাকবে এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতরে সপরিবারে বসবাস করতেন ভ্যানচালক ফয়সাল। স্টেডিয়াম বন্ধ করে দেওয়ার কারণে রমনা মার্কেটের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু এখানেও তারা থাকতে পারছেন না পুলিশের ভয়ে। তিনি বলেন, ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কাজ নাই। খাবারের জোগানও নাই। বাচ্চারা চাইয়া যা পাচ্ছে তাই খাচ্ছে।

পল্টনে কথা হয় ছিন্নমূল মালেকের সাথে। তিনি বলেন, আগে সারাদিন কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে যা পাইতাম, তাই দিয়ে ডাল ভাত খাইতাম। রাতে স্টেডিয়াম বা আশ-পাশের মার্কেটে যেখানে পারতাম ঘুমাইতাম। কারও কাছ থেকে কিছু চেয়ে খাবো, সেই অবস্থাও নাই। শাহবাগ, কাওরান বাজারসহ আরও কিছু এলাকার শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে তাদের একদিকে যেমন রাতে থাকার সমস্যা, আরেকদিকে আয় রোজগার না থাকায় খাবারের সমস্যাও দেখা দিয়েছে। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফুটপাতের দোকানদার থেকে শুরু করে ভিক্ষুক পর্যন্ত সবাই বিপাকে পড়েছে। তাদের না আছে রোজগার না আছে কাজের সংস্থান। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতো রয়েছেই। এসব মানুষের সরকারের কাছে আবেদন, যদি তাদের জন্য কোনো থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সাহায্য সহযোগিতা করতো তাহলে তারা এই কষ্ট থেকে বেঁচে যায়।

অবশ্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান দুঃখি এসব মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। গত দুদিন ধরে রাতে গুলশান এলাকার রাস্তায় খাবার সরবরাহ করছেন একদল যুবক। ধানমন্ডিতেও দেখা গেছে রাতে খাবার বিতরণের দৃশ্য। সদরঘাট নৌবন্দরে কর্মহীন হয়ে পড়া কর্মীদের মধ্যে গতকাল রোববার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ)। সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর) এ কে আরিফ উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া সদরঘাটের দরিদ্র মাঝি, কুলি-শ্রমিক-দিনমজুরদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/279287