৩০ মার্চ ২০২০, সোমবার, ১:০৫

রাজধানীতে বেড়েছে গাড়ি চলাচল!

প্রথম তিন দিন গাড়ি কম থাকলেও চতুর্থ দিন বেড়েছে * জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি বের করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে -পুলিশ

টানা দশ দিন ছুটির চতুর্থ দিন রাজধানীতে গাড়ি চলাচল কিছুটা বেড়েছে। রোববার ঢাকায় বাস চলেনি। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, ভাড়ায় চালিত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো।

গণপরিবহনের ওপর লকডাউন আরোপের প্রথম তিন দিনের তুলনায় গতকাল এসব গাড়ি বেশি ছিল। রাজধানীর বনানী, মগবাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলেছে।

এর চালকদের ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন চলাচল বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গাড়ি চলাচল বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে মানুষের যাতায়াত বেড়ে গেছে। এতে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাও বেড়েছে।

যে উদ্দেশ্যে সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ করা হয়েছে, গণপরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। তারা বলেন, আওতামুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্যগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত।

প্রসঙ্গত, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরিসেবা, সংবাদকর্মী, চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত এবং পণ্যবাহী গাড়ি আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশে গণপরিবহন লকডাউন করা হয়েছে। শুধু পণ্যবাহী গাড়ি চলার কথা।

গণপরিবহনের ওপর আমরা নজরদারি করছি। তবে ব্যক্তিগত বা অন্যান্য গাড়ি চলার বিষয়টি সরকারের সামগ্রিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কর্মকর্তারা।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি বের করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে। হয়তো জরুরি কাজে অনেকেই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন। রাজধানীতে আমাদের ৬৪টি চেকপোস্ট রয়েছে।

ওইসব চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে কী কারণে বের হয়েছে তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। কেউ অকারণে বের হলে তাকে অনুরোধ করে বাসায় ফেরত দেয়া হচ্ছে।

তবে গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন রোগ বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়ে গেলে ধরে নিতে হবে মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। এতে ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কাও বাড়ছে। সরকারের উচিত গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের ওপরও বিধি-নিষেধ আরোপ করা।

রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, গত তিন দিনের তুলনায় রোববার রাজধানীর সড়কগুলোতে তুলনামূলক গাড়ি বেড়েছে। বেশিরভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি।

এছাড়া কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে ভাড়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা ও প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসা থেকে বের হওয়ায় মানুষ ভাড়ায় এসব পরিবহনে নিজের গন্তব্যে যাচ্ছেন। রাজধানীর বনানীতে কয়েকটি মোটরসাইকেল অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। কেউ হেঁটে গেলে ডাক দিয়ে যাত্রী তুলছে।

মো. রফিক পরিচয় দেয়া একজন মোটরসাইকেল চালক বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে উবার ও পাঠাও অ্যাপ বন্ধ রয়েছে। বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই ভাবলাম দু’-একটি ট্রিপ দিয়ে যা আয় করতে পারি।

তিনি বলেন, আমাদের সাহায্য করার কেউ নেই। টাকা না থাকলে সংসারও চলে না। ফার্মগেটে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত আবদুর রহমান বলেন, পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। পরিবারের খরচ তো বন্ধ নেই। তিনি বলেন, সকাল ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত খেটে ৪০০ টাকা পেয়েছি। আরেকটি ট্রিপ দিয়েই যা আয় হবে তা দিয়ে বাজার করে বাসায় ফিরব।

গত তিন দিনের তুলনায় রোববার সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা বেড়েছে স্বীকার করে বাংলাদেশ অটো রিকশা টেম্পো পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, বেশিরভাগই সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ। আমরা সবাইকে রাস্তায় নামতে নিষেধ করেছি। তবুও গুটিকয়েক সিএনজি অটোরিকশা রাস্তায় নেমেছে। এদের বেশিরভাগই সিএনজি অটোরিকশার মালিক। দু’-চারটি ট্রিপ দিয়ে কিছু আয়ের আশায় তারা বের হন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/293888/