৩০ মার্চ ২০২০, সোমবার, ১২:৪৮

রোগী কমে গেছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে

ইবরাহীম খলিল : নেই যাত্রী, নেই শ্রমিকদের কোলাহল। একটু পর পর বেজে উঠছে না হুইসেল, নেই ট্রেনের ঝকঝক শব্দ। দিন-রাত ব্যস্ত স্টেশনের চারদিকে এখন শুধুই সুনসান নীরবতা। গতকাল রোববার এমনটাই ছিল রাজধানীর কমলাপুরের দৃশ্য। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ বিকেল থেকে দেশের সব রুটে ট্রেন চলাচলা বন্ধ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

অন্যদিনগুলোতে কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনের সড়কে যেখানে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভিড় লেগেই থাকত সেখানে এখন নেই কোনো যানবাহন। মানবশূন্য স্টেশনের সামনের গেটে ঝুলছে তালা। ভেতরে চার-পাঁচজন নিরাপত্তারক্ষী দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৪ মার্চ বিকেল থেকে রেল চলাচল বন্ধ হয়েছে। ২৫ মার্চ থেকে স্টেশন বন্ধ। রেলের কর্মী ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তায় থাকা এক আনসার কর্মী জানান, কয়েক বছর ধরে স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া এই স্টেশনে যাতায়াত করছি প্রায় ৩০ বছরের ওপরে। কিন্তু কোনো সময় এমন অবস্থা দেখি নাই, মানবশূন্য স্টেশন, সুনসান নীরবতা। এক সপ্তাহ আগের স্টেশনের কথা চিন্তা করলে অবাক লাগে। একটি অদৃশ্য ভাইরাস গোটা স্টেশন নয় শহরই প্রায় জনশূন্য করে দিয়েছে। আল্লাহ জানে আগামীতে কি হবে।

দায়িত্বপালনরত এক রেলকর্মী বলেন, আমাদের ছুটি নেই। ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে। কারণ রেল চলাচল বন্ধ থাকলেও রেলের ইঞ্জিন চালু রাখতে হয়। তা না হলে ইঞ্জিন বসে যাবে। এছাড়া ইঞ্জিনের কোনো সমস্যা আছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতিটি ইঞ্জিন চালানো হচ্ছে। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। তিনি জানান, প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ করছেন তারা। প্রতি শিফটে ৮ থেকে ৯ জন করে আছেন। ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়েছে তাদের ডিউটি চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এসময় তারা চারটি ট্রেনের ইঞ্জিন দেখভাল করবেন বলে জানান। এদিকে শুধু স্টেশন নয়, এর আশপাশ এলাকায়ও সব ধরনের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এলাকাজুড়ে সুনসান নীরবতা।

এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রাজধানীর হাসপাতালগুলোর চেনা চিত্র এখন আর নেই। ঢাকা মেডিকেল থেকে শুরু করে সরকারী বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ হাসপাতালে আসছেন না। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও রোগী কমেছে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। চেম্বারগুলোতে বসছেন না বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। হাসপাতালকর্মীরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা যেমন কমে গেছে, তেমনি চিকিৎসকরা চেম্বারে বসছেনও কম। করোনা ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটির পর বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশনায় সবাই এখন ঘরবন্দি।

রাজধানীর ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মাথায় এই হাসপাতালে ঢুকতেই যথারীতি স্যানেটাইজার দেওয়া হল। মুখে মাস্ক আর হ্যান্ড গ্লাভস পরা কাস্টমার কেয়ারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানালেন, রোগীর সংখ্যা অনেক নেমে এসেছে। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ রোগী হত, সেখানে মাত্র ৩৪ জন এসেছে। প্রতিদিন এই হাসপাতালে প্রায় ৩০জন চিকিৎসক বসেন। শনিবার বসেছেন মাত্র পাঁচজন। জরুরি রোগীর জন্য তারা ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতাল খোলা রেখেছেন বলে জানান হান্নান।

ধানমণ্ডি শংকরের পাশে অবস্থিত হাসপাতালের গেটে অনেকক্ষণ থাকার পরেও কোনো রোগী ঢুকতে দেখা গেল না। আশেপাশেও নেই আগের মতো জটলা। এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের নেই কোনো ছোটাছুটি, হৈ চৈ বা আড্ডা। চারদিক নিস্তব্ধ। তবে জরুরী বিভাগ খোলা আছে। নিরপত্তার কর্মীদের শুধু মুখে মাস্ক ছাড়া আর কোন কিছু দেখা গেলো না। ভেতরে হাত ধুয়ে ঢুকতে হল। চিকিসৎকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে একজন নিরাপত্তাকর্মী জরুরি বিভাগ দেখিয়ে দিলেন।

ধানমণ্ডি ২ নম্বর সড়কে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিরঞ্জীব নামের কর্মকর্তা জানালেন, তাদের প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ রোগী কমে গেছে। যারা আসছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই নিজেদের প্রয়োজনে পরীক্ষা করাতে আসছেন। চিরঞ্জীব জানান, তাদের এখানে যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বসতেন, তাদের অনেকে এখন আর বসেন না। তবে প্রয়োজন দেখা দিলে চিকিৎসক ডাকা হয়। তারা এসে রোগী দেখে চলে যান। তবে তা খুবই নগন্য। শনিবার তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া গেল পপুলারে। সেখানে প্রতিদিন ৩০ জনের বেশি চিকিৎসক বসেন। তবে সব পরীক্ষা চালু আছে বলে জানান চিরঞ্জীব।

মিরপুর রোডে আনোয়ার খান মর্ডাণ হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ারের মো. সবুজ জানালেন, “রোগী নাই, ৬০-৭০ ভাগ কমে গেছে। জরুরি বিভাগ খোলা আছে। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সে রকম নাই।” এই হাসপাতালে সবসময় শিক্ষার্থী এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক দেখা গেলেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও সে রকম কাউকে পাওয়া গেলো না।

http://dailysangram.info/post/411728