২৫ মার্চ ২০২০, বুধবার, ১২:৪১

আতঙ্কের কেনাকাটায় পণ্যের বাজার চড়া

পেঁয়াজে স্বস্তি ফিরলেও চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে জনমনে সৃষ্ট আতঙ্কের নেতিবাচক প্রভাব চলছে দেশের পণ্যবাজারে। স্বস্তি নেই চাল, ডাল, তেল, চিনিতে। মাছ, মাংস, ডিমও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। প্রশাসনের অভিযান আর জরিমানায় পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কমলেও চড়া রয়েছে সবজির বাজার। চাহিদা অনুসারে সবজির জোগানে ঘাটতি না হলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। অস্বাভাবিক বেড়েছে লেবুর দাম। তবে কিছু সবজির দাম আগের তুলনায় কমেছে।

বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ছুটি ঘোষণা হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ছুটছেন বাড়ির দিকে। অনেকে বিক্রিবাট্টা কম হওয়ায় দৈনন্দিন খরচ বিবেচনায় দোকান বন্ধ রাখছেন। আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একসঙ্গে বেশি লোকের অবস্থানকে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। এ জন্য বেশি কর্মচারীর দোকান বন্ধ রাখছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা বাজারে করোনা আতঙ্কের কেনাকাটার চাপ রয়েছে এখনো। একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পণ্য সংগ্রহে ব্যস্ত অনেক ক্রেতা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সরবরাহব্যবস্থায়। আর বিক্রেতারাও বেশি দাম আদায় করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একাধিক পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১৮ টাকা। ঢেঁড়স বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে করলার দাম ৪০ টাকায় নেমেছিল, যা উঠে গেছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। ১৫ থেকে ২০ টাকার টমেটো ২৫ থেকে ৩০ এবং বেগুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লাউ প্রতি পিস ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ১৫ থেকে ২০ টাকার শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

এ ছাড়া কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়ে কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৭০, শিম ৪০, কচুর লতি ৭০ ও পেঁপে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি প্রতিটি ৪০, বাঁধাকপি ৫০ ও মিষ্টি কুমড়া (ছোট) ৫০ টাকা হয়ে গেছে। কেপসিকাম প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লেবুর দাম। ছোট আকারের লেবুও ৪০ টাকা হালির নিচে মিলছে না।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনছি যে রাজধানীতে মানুষ কমে গেছে; কিন্তু কাঁচাবাজারে ক্রেতা কমেনি। আবার যার এক কেজি লাগে সে দুই কেজি কিনছে। পাইকারদের কাছেও মালের কোনো সংকট নেই। তবে কয়েক দিন ধরেই লেবুর সংকট দেখা দিয়েছে। আগে যে মানের লেবু আমরা সাধারণত দোকানে রাখতাম না, সেই লেবু ৫০ টাকা হালি বিক্রি করতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও ৬০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে।’

পেঁয়াজের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। গতকাল ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ দেখা গেছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। আর তা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা কেজি। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজও গতকাল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির মধ্যে ছিল। কমেছে রসুনের দামও। গতকাল দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। একই অবস্থা পাইকারি বাজারগুলোতেও।

গতকাল কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায় পেঁয়াজের অনেক পাইকারি দোকানই বন্ধ। রানা নামের এক দোকানির কাছে মোবাইল ফোনে কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ব্যবসা মন্দা। আগে দিনে ১০০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করতাম। গতকাল (সোমবার) ও তার আগের দিন মিলে মাত্র ১০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। তাতে দোকান ও কর্মচারীদের খরচই ওঠে না। তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও বলে গেছে যে একসঙ্গে পাঁচজন থাকা যাবে না। তাই ঢাকায় থেকে কী করব। জামালপুরে গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি।’

গত সপ্তাহের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। গতকালও খুচরায় ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা হালি এবং ডজন ১০০ থেকে ১০৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা হালি। মানিকনগর বাজারের বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ডিমের দাম এমন বাড়তি থাকার কথা না। কিন্তু মানুষ করোনা আতঙ্কে প্রয়োজনের অতিরিক্ত একসঙ্গে কেনায় দাম বেড়েছে। এই দাম বেশিদিন থাকবে না।’

এ ছাড়া গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। ছোট দানার দেশি মসুর ডালের দাম কিছুটা কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে বড় দানার ডাল।

বিভিন্ন মানের চাল গতকালও বিক্রি হয়েছে আগের বাড়তি দামেই। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ অন্যান্য চিকন চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা এবং মোটা বিআর-২৮ ও স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪৮ টাকা কেজি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2020/03/25/890278