২৫ মার্চ ২০২০, বুধবার, ১২:৪০

করোনার প্রভাব ব্যাংক খাতে

কর্মঘন্টা কমছে, ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করা হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামের দাবি

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মধ্যেও ব্যাংক খোলা থাকবে। তবে লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান থাকবে। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকগুলোতে নগদ উত্তোলন ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে চাপ নেই বললেই চলে। আর তাই ব্যাংকগুলোও শুরু থেকেই এ দাবি জানিয়ে আসছিল। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো নিজ উদ্যোগে কর্মী কমিয়ে এনেছে। বেশির ভাগ ব্যাংকেই কর্মীদের দুই ভাগে ভাগ করে অফিস করতে বলা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার সাথে সাথে সিটি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ অনেকগুলো ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের কর্মী কমিয়ে এনে দুই ভাগে ভাগ করে অফিস চালু রেখেছে। অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তারা আবার বাসায় বসে অনলাইনে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা করোনা ঝুঁকি এড়ানোর পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন। ব্যাংকে লেনদেন করতে আসা গ্রাহক থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে সাধারণ ছুঁটি ঘোষণার পর থেকে ব্যাংকে নগদ টাকার জন্য গ্রাহকদের ভীড় বেড়েছে। কারণ অনেকদিনের ছুঁটি, বাসায় থাকার নির্দেশ এবং দেশের বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় সবাই নগদ টাকা হাতে রাখছেন। আর এ কারণে ব্যাংকে গ্রাহকদের ভীড় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। যদিও ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের অন্যতম ঝুঁকিতে আছেন তারা। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ ব্যাংকে আসছেন। এদের মধ্যে বিদেশ ফেরতরাও আছেন। টাকার লেনদেন করছেন। তাই টাকার মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে। একই সঙ্গে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যদিও ব্যাংক লেনদেন একেবারে বন্ধ রাখা সম্ভব নয়; তারপরও ঈদের সময়ের মতো সপ্তাহে ১ দিন ২ দিন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লেনদেন চালু রাখার কথা জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, সাধারণ ছুটির মধ্যে দপুর ১২টা পর্যন্ত ক্যাশ লেনদেন চলবে। ব্যাংক বন্ধ হবে দেড়টায়। এ সময় ব্যাংকের ক্যাশ সংশ্লিষ্ট কর্মীরাই কেবল কর্মস্থলে থাকবেন। এ ব্যাপারে বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে আজ বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হবে বলেও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।

সূত্র মতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ থেকে টানা ১০ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, খাবারের দোকান ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রির দোকান ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গণপরিবহন সীমিতভাবে চলাচল করলেও তা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ঝুঁকির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর সরকারি অফিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লেনদেনের সুবিধার্থে সীমিত আকারে ব্যাংক চালু থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তাকে করোনা ঝুঁকি এড়ানোর পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। ব্যাংকে লেনদেন করতে আসা গ্রাহক থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।

সূত্র জানায়, করোনা ঝুঁকি এড়াতে প্রতিটি ব্যাংক হেক্সাসল ও মাস্ক দিয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় জানিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকদের জন্য প্রবেশ পথে হেক্সাসলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকে হেক্সাসল না নিয়ে ব্যাংকে প্রবেশ করছে। লেনদেনের সময় সীমিত করায় ব্যাংকের গ্রাহকের ভীড় বেড়েছে। গাঁদাগাদি করে লেনদেন চলছে। এতে টাকার মাধ্যমে করোনা ছাড়ানো বা অন্যের মাধ্যম থেকে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তাঁদের মতে, অনলাইনে বদৌলতে লেনদেন এখন অনেক সহজ হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং কিংবা কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহক টাকা তুলতে পারেন। কাজেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের করোনা ঝুঁকি এড়াতে ব্যাংক বন্ধ রাখা উচিত। আর ব্যাংক বন্ধ না করলেও কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে।

একটি সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার রেজা ফরহাদ বলেন, প্রয়োজনে সপ্তাহে দুই দিন সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখা যেতে পারে। লেনদেন সীমিত করার ঘোষনায় ব্যাংকে গ্রাহকের ভীড় বেড়েছে। গ্রাহককে নির্দিষ্ট দুরত্বে দাঁড়িয়ে সেবা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও শুনছেন না। ব্যাংক চালু রাখার ঘোষনা আসলেও এখনো কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। হেক্সাসল বা মাস্ক দেওয়া হলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। যাতে ব্যাংক কর্মকর্তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শওকত হোসেন সজল বলেন, সরকারি সব অফিস বন্ধ রেখে ব্যাংক খোলা রাখলে মানুষ লেনদেনে ব্যাংকমুখী হবে। লেনদেন সীমিত করায় লেনদেনে ভীড় বাড়বে ব্যাংকে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারাও করোনার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনোর সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। একজন ডাক্তার নিজে সুরক্ষিত হয়ে রোগী দেখতে পারেন কিন্তু ব্যাংকাররা নিজে সুরক্ষিত নয়। করোনা ঝুঁকি এড়াতে ব্যাংক বন্ধ রাখাই ভালো। তবে চালু রাখতে হলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত¡ সোনালী ব্যাংকের সিইও এন্ড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও বিস্তার প্রতিদিনই বাড়ছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ও সাংবাদিকদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন ব্যাংকাররা। বিশেষ করে ব্যাংকের ক্যাশ শাখায় যারা আছেন তারা। কারণ প্রতিনিয়তই বিদেশ ফেরত মানুষ টাকার জন্য আসছে ব্যাংকে। তবে আইটিসহ অন্যান্য সেকশনে যারা কাজ করছেন তারা বাসায় বসে অনলাইনে কাজ করছেন। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে ক্যাশ চালু রাখতে হচ্ছে। তবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে এটাও সংক্ষিপ্ত পরিসরে রাখার চেষ্টা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ছুটি থাকায় গ্রাহকরাও চাইছেন নগদ টাকা হাতে রাখতে। তাই ব্যাংকে গ্রাহকের অতিরিক্ত ভিড় বলে জানান আতাউর রহমান প্রধান।

https://www.dailyinqilab.com/article/277917