দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় সর্বত্র বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ১০-২০ টাকার মাস্ক ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছবিটি পল্টন মোড় থেকে তোলা
১০ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৩২

বাজারে মাস্ক নিয়ে মাস্তি

৫০ গুণ দাম বৃদ্ধির পরও বাজার থেকে উধাও

করোনাভাইরাসের জীবাণু রোধে ব্যবহার্য মাস্ক নিয়ে বাজারে মাস্তি চলছে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ৫০ গুণ দাম বৃদ্ধির পরও তা বাজারে মিলছে না। সেই সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হেক্সিসলও বাজার থেকে উধাও করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়া আতঙ্কিত মানুষ কয়েকগুণ বেশি দামে এগুলো কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি ও পাইকারি মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমন ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময় দেখা যায়, পাইকারি বাজারে এক টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক ৫০ টাকা আর খুচরা দোকানে তা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর তোপখানায় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বিক্রির বৃহৎ পাইকারি মার্কেট ‘মেডিক্যাল অ্যান্ড সার্জিক্যাল ইকুইপমেন্ট’ মার্কেটে গতকাল গিয়ে একই চিত্র পাওয়া যায়। রাইজিং এন্টারপ্রাইজের মালিক ক্ষোভের সাথে জানান, আমদানিকারকরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় মাস্কের দাম বাড়াচ্ছেন। অর্ডার করতে ফোন দিলে তারা যে দাম বলেন; ডেলিভারি দেয়ার আগে ঘণ্টার মধ্যেই আবার দাম বাড়িয়ে দেন। এতে গতকাল এক দিনেই মাস্কের দাম বেড়েছে ৫০ গুণ। তিনি বলেন, আগে তারা ৫০ পিসের সার্জিক্যাল যে মাস্ক বক্স ৫০ টাকায় কিনতেন কখনো ৬০ টাকায় তা এখন ১ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। যার কারণে তাদের অনেকেই কোম্পানি কিংবা আমদানিকারকদের কাছ থেকে এ মাস্ক কিনছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি যদি পাইকারিভাবে এক টাকার মাস্ক ৫০ টাকায় কিনি তবে তা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে কত টাকায় বিক্রি করব। এমন দাম চাইলে ক্রেতা আমাকে পাগল বলে আক্রমণ করবে, না হয় পুলিশ ডাকবে। তাই আমি আপাতত তা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।’

একই মার্কেটের আলফা সার্জিক্যালের ম্যানেজার জানান, নিয়ন্ত্রণহীন দামের কারণে তারা সার্জিক্যাল মাস্ক কেনাবেচা করছেন না। তবে ওয়ানটাইম ছাড়া কাপড়ের কিছু মাস্ক তারা বিক্রি করছেন। যেগুলো আগে ছিল ৮০ টাকা এখন তা পাইকারি বিক্রি করছেন ২৫০ টাকায়। তিনি বলেন, জিআই কোম্পানিসহ একাধিক কোম্পানি দেশে মাস্ক তৈরি করে, কিন্তু তারা তা বিদেশে রফতানি করে দেন। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, আমদানিকারকরা সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেয়ায় তারাও অসহায়। ফলে খুচরা দোকানেও সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর অনেক ফার্মাসি ঘুরে কোথাও সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল পাওয়া যায়নি। শান্তিনগর লাজ ফার্মার বিক্রয় কর্মী রিনা খান জানান, দেশে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার খবর জানাজানি হওয়ার পরই মাস্কসহ জীবাণু রোধে ব্যবহার্য হেক্সিসল কিনতে ক্রেতারা ভিড় করেন। যার কারণে সংগ্রহে রাখা এক মাসের মাস্ক হেক্সিসল কয়েক ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায়। এরপর দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা তা আর ফার্মাসিতে রাখতে পারেননি। কারণ নির্দিষ্ট দামের পণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে তারা সুনাম নষ্ট করতে চান না।

এ ছাড়া একাধিক দোকানি জানান, মাস্কের সরবরাহ কম। যেসব কোম্পানির কাছ থেকে তারা নিয়ে আসেন, সেখান থেকে বলা হচ্ছে, নেই। তারা বলেন, কোম্পানি বাজারে পর্যাপ্ত ছাড়ছে না, তাই তারাও পাচ্ছেন না। একই অবস্থা সুপারশপ, পাড়ার দোকানগুলোতেও।

বাজারে বর্তমানে স্যাভলনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ডেটল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সেপনিল হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের সেনিটাইজার রয়েছে। এ ছাড়াও আলমের হ্যান্ড স্যানিটাইজার নামে আমদানিকৃত একটি স্যানিটাইজারও জনপ্রিয়। তবে পাইকারি বাজারে এদের কোনোটিই পাওয়া যায়নি। এর আগে গত বছর এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় ১৫০ টাকার মশার প্রতিরোধসামগ্রী ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

এদিকে বাজারে মাস্কের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়ানোতে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের তত্ত্বাবধানে মাঠে নামে পাঁচটি টিম। অভিযান পরিচালনায় ছিলেন সহকারী পরিচালক আব্দুল জাব্বার মণ্ডল, রোজিনা আক্তার, মো: মাগফুর রহমান ও মাহমুদা আক্তার। অন্যদিকে মাস্কের দাম বেশি নেয়ায় গুলশানে দুইটি ফার্মাসি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। গতকাল বিশেষ অভিযান চালিয়ে ফার্মাসি দুটি সিলগালা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো আল নূর ফার্মাসি ও সাফাবি ফার্মাসি। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে আল মদিনা ফার্মাসিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/486927