১৯ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:১১

এডিপির ১৫ প্রকল্প: অর্থ ব্যয় হলেও বাস্তব অগ্রগতি শূন্য

বিস্মিত পরিকল্পনামন্ত্রী * আইএমইডির প্রতিবেদন এনইসিতে উপস্থাপন আজ * প্রকল্পগুলোয় ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা * একটি প্রকল্পের বিষয়ে ভুল হতে পারে -মহাপরিচালক

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১৫ প্রকল্পে ১ হাজার ৫৩৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা খরচ করা হলেও বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। প্রকল্পগুলোর অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ঘটেছে এমন ঘটনা। তবে কী কারণে এরকম হয়েছে তা বলতে পারছে না কোনো পক্ষই। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অর্থবছরে বাস্তব অগ্রগতি শূন্যের প্রকল্প ছিল ১২১টি। এর একটি তালিকাও যুক্ত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এটি আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। বুধবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি নিয়ে আমারও জানার আগ্রহ আছে। আমি খতিয়ে দেখব।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা ওয়াসার পদ্মা (যশোলদিয়া) ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ফেজ-১) শীর্ষক প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এ প্রকল্পের অনুকূলে এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৪৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

পুরো অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৪৫১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। তবে এ প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে গত বছরের অক্টোবরে সমাপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্থ ব্যয় এবং শূন্য বাস্তব অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেসব আমি কিছুই জানি না। আমি শুধু জানি প্রকল্প শেষ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না। এ ক্ষেত্রে এমন হতে পারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের টাকা খরচ হলেও হয়তো বাস্তব অগ্রগতি শূন্যই ছিল। যা কাজ হওয়ার আগেই হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে পরিষ্কার করতে তিনি দায়িত্ব দেন সিনিয়র প্রোগ্রামার মুহম্মদ মশিউর রহমানকে।

তিনি আইএমইডির সংশ্লিষ্ট সেক্টরে তথ্য চেয়েছেন বলে জানান। প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সেক্টরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীর কবীরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। তবে আমাদের ভুল হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ঢাকা ওয়াসার প্রিপারেটরি অ্যাকটিভিটিজ অব ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৮ কোটি টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্য।

এ বিষয়ে আইএমইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে হয়তো খরচ হলেও বাস্তব অগ্রগতি শূন্যই থাকতে পারে। এ ছাড়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় দাদাভাই স্যাটেলাইট টাউন কমার্শিয়াল এবং রেসিডেন্সিয়াল জোন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি টাকা আর ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। লক্ষ্য ছিল ৩০ শতাংশ অগ্রগতি করার। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি ছিল শূন্য।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের স্কিলস-২১ ইমপাওয়ারিং সিটিজেনস ফর ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাসটেইনেবল গ্রোথ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে বাস্তব অগ্রগতির লক্ষ্য ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবায়ন অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য শতাংশ। একই বিভাগের ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৬৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ব্যয় হয় ১ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার টাকা। ওই অর্থবছরে অগ্রগতির লক্ষ্য ছিল ২০ শতাংশ। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। অর্থ ব্যয় হলেও শূন্য বাস্তব অগ্রগতির কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনায় একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন এবং সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৪টি মহলিা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন প্রকল্প।

এ ছাড়া বিটিইবি বিল্ডিং-২-এর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ, রংপুর বিভাগের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিইডি পার্ট), বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০ তলা নতুন অফিস ভবন নির্মাণ এবং চট্টগ্রামে ৩৬টি সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্লট তৈরি প্রকল্প। আরও যেসব প্রকল্পে একই ঘটনা ঘটেছে তা হল এস্টাবলিশমেন্ট অব ২৫০ বেডেড ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অপটোমোলজি অ্যান্ড হসপিটাল, থিম্পুতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি বিল্ডিং ও রাষ্ট্রদূতের আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের পর জিইডির পরিকল্পনা তৈরির সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্প।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/290564/