১০ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:০৮

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজারের কাছাকাছি

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৮৩০ জন। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত ৬২ হাজার ২৭৬ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০৯টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৩৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১২০ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের।

চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। দেশটিতে একদিনেই ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬৬ জনে। এদিকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭,৩৭৫ জনে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইতালি সরকার। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৬৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৯৪ জন।

জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। জার্মানিতে এই ভাইরাসে ১ হাজার ৪০ জন আক্রান্ত হয়েছে। ফ্রান্সে ১ হাজার ২০৯ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৯ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছে ৫০২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের।
স্পেনে আক্রান্ত ৬৭৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৫৪০, মৃত্যু ২২। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ৩৩২ এবং মারা গেছে ২ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২৭৮ মৃত্যু ৩। ইরাকে আক্রান্ত ৬০, মৃত্যু ৬। ভারতে ৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর প্রাণহানি ঘটেনি।

এ ছাড়া সুইডেন আক্রান্ত ২০৩, সিঙ্গাপুরে ১৫০, নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ২৬৫ এবং মৃত্যু ৩, নরওয়েতে আক্রান্ত ১৭৬, বেলজিয়ামে ২০০, হংকংয়ে আক্রান্ত ১১৫ এবং মৃত্যু ৩, মালয়েশিয়ায় ৯৯, অস্ট্রিয়ায় ১০৪, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ৮০, মৃত্যু ৩, বাহরাইনে ৮৫, কুয়েতে ৬১, কানাডায় ৬৪, থাইল্যান্ডে ৫০ এবং মৃত্যু ১, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৫ এবং মৃত্যু ১, গ্রিসে ৭৩, আমিরাতে ৪৫, আইসল্যান্ডে ৫৮, সান মারিনোতে ৩৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ১, ডেনমার্কে আক্রান্ত ৩৫, লেবাননে ৩২, ইসরাইলে ৩৯, চেক রিপাবলিকে ৩২, আয়ারল্যান্ডে ২১, আলজেরিয়াতে ২০ এবং ভিয়েতনামে ৩০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

অপরদিকে ওমানে ১৬, ফিলিস্তিনে ১৯, মিসরে ১৫, ফিনল্যান্ডে ২৫, ব্রাজিলে ২৫, ইকুয়েডরে ১৪, পর্তুগালে ৩০, রাশিয়াতে ১৭, ক্রোয়েশিয়ায় ১২, কাতারে ১৫, ম্যাকাউতে ১০, এস্তোনিয়ায় ১০, জর্জিয়ায় ১৩, রোমানিয়ায় ১৫, আর্জেন্টিনায় ১২, স্লোভেনিয়ায় ১৬, আজারবাইজানে ৯, বেলারুশে ৬, মেক্সিকোতে ৭, পাকিস্তানে ৭, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ১০ এবং মৃত্যু ১, সৌদি আরবে ১৫, চিলিতে ১০, পোল্যান্ডে ১১, স্লোভাকিয়ায় ৫, পেরু ৭, ইন্দোনেশিয়ায় ৬, নিউজিল্যান্ডে ৫, সেনেগালে ৪ ও হাঙ্গেরিতে ৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়া লুক্সেমবার্গে ৫, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ৩, বসনিয়ায় ৩, ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রে ৫, মরক্কোতে ২, আফগানিস্তান ৪, কম্বোডিয়া ২, বুলগেরিয়া ৪, ক্যামেরুন ২, মালদ্বীপ ৪, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩, লাটভিয়ায় ৩, বাংলাদেশে ৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে, আন্দোরা, আর্মেনিয়া, জর্ডান, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, গিব্রালটার, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং টোগোতে একজন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

আক্রান্ত ৬ দেশ থেকে প্রতিদিন আসছে সহস্রাধিক যাত্রী
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ছয়টি দেশ থেকে আকাশপথে এখনও প্রতিদিন দেড় সহস্রাধিক দেশি-বিদেশী যাত্রী বাংলাদেশে আসছেন। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, থাইল্যান্ড ও ইরান থেকে সরাসরি কিংবা কানেকটিং ফ্লাইটে আগত এ সকল যাত্রীর কেউ করোনা আক্রান্ত কিনা তা জানতে বিমানবন্দরে থার্মাল ও হ্যান্ড স্ক্যানারে জ্বর মাপা (হেলথ স্ক্রিনিং) হচ্ছে।

তবে রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পেতে দুই থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ফলে এসব যাত্রীর সিংহভাগ আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হলেও তাদের মাধ্যমে দেশে করোনা ভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ ছয়টি দেশের একটি ইতালি থেকে ফেরত আসা দুজনসহ দেশে মোট তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে শাহজালালসহ তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা। শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ আজ জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিমানবন্দরে এ ছয়টি দেশ থেকে আগত প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তাদের কমপক্ষে ১৫ দিন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকার অনুরোধ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ যাত্রীই অনুরোধ রক্ষা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোগতত্ত্ববিদ বলেন, করোনার ঝুঁকি এড়াতে অনেক আগে থেকেই আক্রান্ত এ ছয়টি দেশ থেকে গমনাগমন বন্ধ রাখার প্রয়োজন ছিল। যারা ফিরে এসেছেন তারা যদি ১৫ দিন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি না থেকে তথ্য গোপন করেন তাহলে করোনাভাইরাস দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আইইডিসিআির থেকে এ ছয়টি দেশের নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দাবি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাসের প্রকোপের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না। এসব দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরাই বলছেন, তাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
জুন মাস পর্যন্ত থাকবে করোনা

সংক্রমণ শুরুর তিন মাস পরেও তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। তবে, খুব শিগগিরই করোনার প্রকোপ কমার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন চীনের অন্যতম প্রধান রোগবিশেষজ্ঞ ঝং নানশান।

২০০২-০৩ সালের সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) ভাইরাসের আবিষ্কারক এই বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, অন্তত আগামী জুন মাস পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলবে। রোববার চীনা গণমাধ্যম গুয়াংডং টেলিভশনকে তিনি এ কথা বলেন। ঝং নানশানের মতে, চীনের এখন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের চেয়ে বরং বিদেশ থেকে ভাইরাস আক্রান্তদের প্রবেশ বন্ধ করায় বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিশেষ করে দেশটির অন্যতম প্রধান ভ্রমণকেন্দ্র গুয়াংডং প্রদেশে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা দরকার। তিনি বলেন, সীমান্তে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার এবং বিদেশের ভাইরাস সংক্রমিত অঞ্চল ভ্রমণকারীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন নীতি নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়া, গুয়াংডংয়ের মতো বেশি সংক্রমিত অঞ্চলগুলোতে ভাইরাস প্রতিরোধের সরঞ্জাম, পরীক্ষার উপকরণ, চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো যেতে পারে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর দ্রুতই তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির উৎস চীনে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৮০ হাজার ৭৩৮ জন। এছাড়া, দেশটিতে ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫৮ হাজার ৬৭৭ জন।
ইতালির এক চতুথাংশ লোক অবরুদ্ধ

ইতালির এক চতুথাংশ লোক করোনার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এদিকে রোববার দেশটির সরকার ভাইরাসটিতে আরো মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে।

দেশটিতে আক্রান্তের এ সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়াকেও ছাড়িয়ে গেছে। চীনের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়। কভিড-১৯ নামে পরিচিত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা এক লাফে ১৩৩ থেকে বেড়ে ৩৬৬ হয়েছে। অর্থাৎ তিন গুণ বেড়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে ১ হাজার ৪৯২ থেকে রেকর্ড সংখ্যক বেড়ে ৭ হাজার ৩৭৫ জনে পৌঁছেছে।

অনলাইনে প্রকাশিত কর্তৃপক্ষের ডিক্রিতে বলা হয়েছে, ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ভাইরাস মোকাবিলার যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে দেশটির উত্তরের বিশাল অঞ্চলসমূহে ঢোকা ও বেরুনো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রোববার রেনেসাঁ শিল্পী রাফায়েলের মৃত্যুর ৫শ’ বছরপূর্তি উদ্যাপনে আয়োজিত ব্লক ব্লাস্টার এক্সিবিশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ পুগলিয়ার আঞ্চলিক প্রধান ওই অঞ্চলে ভাইরাস বয়ে না আনতে ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে পুগলিয়ায় আসার চিন্তা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া এলাকায় থাকা পর্যটকসহ অন্যান্যদের বাড়ি ফিরে আসার অনুমোদন রয়েছে।

http://dailysangram.info/post/409447