১৮ মার্চ ২০২০, বুধবার, ১২:০৪

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৫৩ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলতি অর্থবছরের সাড়ে আট মাসে নিয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা

বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হওয়ায় বাড়ছে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ। গত এক বছরে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের ৮ মাস ৫ দিনে ঋণ নিয়েছে সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে রাজস্ব আয় কমে গেছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আয় আরও কমে যেতে পারে। তখন সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের ৫ মার্চ সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের স্থিতি ছিল ৮৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে হয়েছে ৭১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা বা প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের হিসাবে, গত অর্থবছরের শেষ দিনে অর্থাৎ ৩০ জুনে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের গত ৫ মার্চ পর্যন্ত ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের ৮ মাস ৫ দিনে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়েই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি এই সাত মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৪৪ দশমকি ১২ শতাংশ- যা গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৪ দশমকি ২৪ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ।

সরকার বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় সরকারের অর্থের চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদার জোগান দিতে প্রত্যাশিত হারে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। উল্টা ঘাটতি হচ্ছে। এসব কারণে উন্নয়ন ব্যয় ও চলতি ব্যয় মেটাতে সরকারকে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ২১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন কোনো ঋণ নেয়নি। উল্টো আগে নেয়া ঋণ পরিশোধ করেছিল ২ হাজার ৫০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট থাকায় সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বেশি ঋণ নিতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই বেশি ঋণ নিচ্ছে। আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ৬৪ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিলে এর বিপরীতে একটি ট্রেজারি বিল ইস্যু করে তা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে দিত। এতে ওই ঋণ আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাঁধে থাকত না। চলে যেত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাঁধে। এর পরিমাণ বাড়িয়ে এখন ১০০ কোটি টাকা করেছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিলেই তারা এর বিপরীতে একটি ট্রেজারি বিল ইস্যু করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে তা বিক্রি করে দেয়ার কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারের ঋণ কমাতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকার কারণে ট্রেজারি বিলগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করতে পারছে না।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাকে বলা হয় ‘হাই পাওয়ার্ড মানি’ বা ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাকা’। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ বাজারে এলে সেগুলো আরও দ্বিগুণ টাকার সৃষ্টি করে। ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায়। এ কারণে মূল্যস্ফীতির হারে চাপ সৃষ্টি হয়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/290214/