১৮ মার্চ ২০২০, বুধবার, ১১:৫৭

তৈরী পোশাকের অবদান কমে যাচ্ছে রফতানি আয়ে

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

রফতানিতে দেশের তৈরী পোশাক খাতের অবস্থান দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বছরখানেক আগেও যেখানে মোট রফতানিতে তৈরী পোশাক খাতের অবদান ছিল প্রায় ৮৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা কমে ৮২ শতাংশে নেমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন মাস অন্তর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ অবস্থাও সামনে ধরে রাখতে পারবে না। তৈরী পোশাক খাতের প্রধান বাজারগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের কারণে আরো কমে যাবে। ফলে সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

তৈরী পোশাক খাতের সামগ্রিক রফতানির অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন তৈরী করে থাকে। সর্বশেষ এ প্রতিবেদন তৈরী করা হয় গত সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে। ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশের মোট রফতানিতে তৈরী পোশাকের অবদান ছিল ৮৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর পরের প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুনে) তা কমে নামে ৮৪ দশমিক ৯৪ শতাংশে। এর পরের প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তা আরো কমে ৮৩ দশমিক ৫২ শতাংশে নামে। সর্বশেষ অর্থাৎ গত প্রান্তিকে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) তা আরো কমে ৮২ দশমিক ৫২ শতাংশে নেমে যায়।

রফতানিতে তৈরী পোশাক খাতের অবদান আরো নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, করোনার প্রভাবে রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, আমাদের তৈরী পোশাক খাতের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তারা পোশাক আমদানি কমিয়ে দেবে। কারণ, করোনার ধাক্কায় তাদের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেবে। বিশ্বব্যাপী ভোগ ব্যয় কমে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে আমাদের রফতানি আয়ে।

এ দিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো রফতানির আদেশ স্থগিত করে দিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষ তা বাতিল করে দিচ্ছে। নতুন করে রফতানির আদেশ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক খাত সামনে মহাসঙ্কটে পড়তে যাচ্ছেন এমন আশঙ্কা করছেন অনেক ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় পোশাক রফতানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।

বিকেএমইএ সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান পরিচালক ফজলে শামিম এহসান নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, নতুন করে রফতানি আদেশ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যমান যে আদেশগুলো ছিল তাও বাতিল করে দিচ্ছে। সামনে ঈদ। এ অবস্থায় শ্রমিকের বেতনভাতা দেয়াই দুষ্কর হয়ে পড়বে। এ নিয়ে তারা এখন মহাদুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করা হয় তার প্রায় ৮৯ শতাংশই তৈরী পোশাক। জার্মানিতে প্রায় ৯৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯০ শতাংশ, ফ্যান্সে ৯৩ শতাংশ, স্পেনে ৯৩ শতাংশ, ইতালিতে প্রায় ৯৪ শতাংশ, কানাডায় ৮৮ শতাংশ রফতানি হয় তৈরী পোশাক। অর্থাৎ এসব দেশ থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রফতানি আয় করে তার বেশির ভাগই আসে তৈরী পোশাক খাত থেকে। এসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ায় নতুন করে তারা পোশাক আমদানির আদেশ দিচ্ছে না। বিদ্যমান আদেশগুলোও বাতিল করে দিচ্ছে। ফলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে রফতানি আয়ে। এতে মোট রফতানি আয়েই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/489003/