পানির পাম্প সংস্কার। ছবি: যুগান্তর
১৭ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৫০

পানির অভাবে বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন রাজধানীর শ্যামপুরবাসী

রাজধানীর শ্যামপুরে ২০ দিন ধরে পানির হাহাকার চলছে। পানি সংকটের কারণে গোসল ও পানি পান করতে না পেরে নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা। এ কারণে এখানকার বাসিন্দারা বাসাবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িসহ অন্যত্র।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব শ্যামপুর, নামা শ্যামপুর, কপি ক্ষেত, মাদবর বাজার সলিমুল্যাহ রোড এলাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে।

সরেজমিন জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের (সাবেক শ্যামপুর ইউপি) নামা শ্যামপুর এলাকায় ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৭-এর আওতায় নামা শ্যামপুর সালাউদ্দিন স্কুল পানির পাম্প রয়েছে। এ পাম্পের পানিতে বালু উঠত।

দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকাবাসী পানির সমস্যার কথা জানিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ জানান। ২০ দিন যাবৎ পাম্পটির সংস্কার কাজ ধীরগতিতে করছে ঢাকা ওয়াসা।

এ দিকে পূর্বে পাম্পের পাইপ ছিল ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের। এখন ৮ ইঞ্চি থেকে কমিয়ে ৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপ স্থাপন করা হচ্ছে। এ সংবাদ এলাকায় জানাজানি হলে বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।

মঙ্গলবার সকালে বাসিন্দারা পাম্পে এসে জোরালো আপত্তি জানান। তারা বলেন, ২০০৩ সালে যখন পাম্পটি স্থাপন করা হয়েছিল তখন এ এলাকায় লোকজনের তেমন চাপ ছিল না। তখনই পাম্পটিতে ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপ বসিয়েছে। আর এখন সে তুলনায় জনগণ ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সে তুলনায় এখন পাম্পের পাইপের ব্যাসার্ধ বাড়িয়ে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি করা দরকার। তা না করে পূর্বের ৮ ইঞ্চি থেকে কমিয়ে ৪ ইঞ্চি পাইপ বসানো হচ্ছে। যা জনগণের চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ওয়াসার পানি পুনর্বাসন বিভাগ-১-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জয়ন্ত সাহা।

নামা শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা সাবেক জাতীয় ফুটবলার শামীম আহমেদ শামু যুগান্তরকে বলেন, গত ২০ দিন ধরে এলাকায় পানির হাহাকার চলছে। বাসিন্দারা স্থানীয় মসজিদ ও ব্যক্তিগত পাম্প থেকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন ধরে কলস, ড্রাম দিয়ে পানি সরবরাহ করে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছেন।

এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা মোতাবেক আরেকটি পানির পাম্প স্থাপন করা প্রয়োজন এবং পাশের সবুজবাগ পানির পাম্পের সঙ্গে নামা শ্যামপুর পাম্পের সঙ্গে সংযোগ দেয়া হলে এ এলাকায় পানির সংকট কমে আসবে।

৫৮ নম্বর ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি খোকন মাতবর বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ নামা শ্যামপুর সালাউদ্দিন স্কুল পানির পাম্পের পানির সঙ্গে বালি উঠত। এ পানি ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। এ বিষয়ে আমরা বাসিন্দারা ওয়াসা বরাবরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।

যার ফলে বিলম্বে হলেও পাম্পটির সংস্কার কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। এ পাম্পের উপর নির্ভর প্রায় ৪০ হাজারেরও অধিক বাসিন্দা। গত ২০ দিন যাবৎ এলাকার মানুষ পানির হাহাকারে ভুগছে।

নামা শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা ওমর আলী মাস্টার যুগান্তরকে বলেন, যেখানে পাম্পের পাইপ পূর্বে ছিল ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের। সেখানে তা কমিয়ে ৪ ইঞ্চি পাইপ বসানো হচ্ছে। যখন ৮ ইঞ্চি পাইপ ছিল তখনই তো পানির সংকট থাকত। এখন তো আরও বেশি সমস্যা দেখা দিবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতানা আহমেদ লিপি যুগান্তরকে বলেন, যেখানে আগের তুলনায় লোকজন বেড়ে গেছে। সে তুলনায় পাম্পের পাইপ ৮ ইঞ্চি থেকে কমিয়ে ৪ ইঞ্চি পাইপ স্থাপন করা অযৌক্তিক।

ঢাকা ওয়াসার পানি পুনর্বাসন বিভাগ-১-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জয়ন্ত সাহা যুগান্তরকে বলেন, পূর্বে এ পাম্পে পানিতে বালু ওঠে। সে কারণে পাইপটির সংস্কার করা হচ্ছে। আগে পাম্পটি ছিল ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের। এখন ৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপ বসানো হচ্ছে। অফিস যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে। এ কাজ শেষ হতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে বলেও তিনি জানান।

ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৭-এর নির্বাহী পরিচালক আবিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গোবিন্দপুর এলাকার পানির সমস্যার বিষয়ে জানা নেই। তারপরও কোনো এলাকার গ্রাহকদের পানি সংকট দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করি।

https://www.jugantor.com/capital/290112/