৮ মার্চ ২০২০, রবিবার, ১:২৬

সড়কে ঝরে পড়ল ২৬ প্রাণ

কনে দেখতে গিয়ে নিহত ৯; মাজার জিয়ারতের পথে প্রাণ গেল ৬ যুবকের; সারা দেশ যেন রক্তাক্ত; জেলায় জেলায় শোকের মাতম

কনে দেখা হলো না বাবা, বোন ও ভাইসহ ৯ স্বজনের। হজরত শাহজালালের মাজার জিয়ারত করা হলো না ছয় যুবকের। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে গিয়ে ফিরে এলো না দুই বন্ধু। এমনি ১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল ছুটির দিনে রাজপথে ঝরে পড়েছে ২৬ জনের প্রাণ। এতে আহত হয়েছেন আরো ১৪ জন। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহের ভালুকা, সাভারের আশুলিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, ফেনী, কুমিল্লা ও পটুয়াখালীতে ঘটেছে এসব দুর্ঘটনা। যেন রক্তাক্ত সারা দেশ। জেলায় জেলায় চলছে শোকের মাতম।

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, পাত্র দেখাদেখিও শেষ। বিয়ের দিন তারিখও শেষের পথে। শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল। সেই আনুষ্ঠানিকতা সারতেই সুনামগঞ্জের দিকে রওনা হয়েছিলেন নারায়াণগঞ্জের বর ও তার পরিবারের লোকজন। সব ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু সড়ক কেড়ে নিলো সবই। আনন্দটা বিষাদে রূপ নিয়েছে এক সাথে তিন জেলায়। দুর্ঘটনাস্থল হবিগঞ্জ, বরের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ আর কনের বাড়ি সুনামগঞ্জ।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকার ইমন খানের সাথে বিয়ের কথা ঠিক ছিল সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার জগদল গ্রামের একটি পরিবারের। ইমনের পরিবারের স্থায়ী বাড়ি বরিশাল জেলায় হলেও তারা বসবাস করছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায়। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে এবং হবু কনেকে স্বর্ণের আংটি পড়াতে ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে রওনা হন হবু বর ইমন খান, বাবা আব্বাস উদ্দিনসহ নিকটাত্মীয়রা। যে মাইক্রোবাসে সাতজন যাত্রী বহনের কথা সেখানে বসেন ১৩ জন। ভোর ৬টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাসটি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার কান্দিগাঁও এলাকায় একটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাস। ভেতরে থাকা বর ইমন খান, বাবা আব্বাস উদ্দিন, রাজিব হোসেন, মহসিন মিয়া, রাব্বী হোসেন, আসমা আক্তারসহ আটজনের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। আহত সুমনা পরে মারা যান সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে। আহত নাদিম মাহমুদ, রফিকুল ইসলাম, আবুল হোসেন ও শিশু খাদিজাকে ওসমানী মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ দিকে আহত রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তার শ্যালক ইমন খাঁ কাতার প্রবাসী। হবু কনের সাথে ইমন খানের দীর্ঘ দিনের পরিচয়। কাতার থেকে দেশে এসেছে ইমন বিয়ে করার জন্য। সেই বিয়ের আংটি পরাতেই তারা সুনামগঞ্জে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় প্রায় সবাই ঘুমে ছিলেন বলে জানান তিনি। এ দিকে ঘটনাস্থল থেকে বুলবুল আহমদ ও ছনি চৌধুরী জানান, নিহত ও আহতরা হবিগঞ্জের স্থায়ী কেউ না হলেও এমন একটি দুর্ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দুর্ঘটনার পরপরই আহত ও নিহতদের উদ্ধার করেন নবীগঞ্জ থানা পুলিশ, হাইওয়ে থানা পুলিশ, নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও কান্দিগাঁও এলাকার লোকজন।

মায়ের পর মারা গেল খাদিজাও : পাঁচ বছরের শিশু খাদিজাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যখন আনা হয়, তখন তার মাথা ও মুখমণ্ডল থেকে রক্ত ঝরছিল। ব্যথায় কাতরাচ্ছিল শিশুটি। সেই মুহূর্তে ওয়ার্ডের বাইরে সাদা কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় স্ট্রেচারে পড়ে ছিল শিশুটির মা সুমনা বেগমের (৩৫) নিথর দেহ। তবে খাদিজাও খুব বেশি দেরি করেনি। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর সে-ও বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে।

হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল খাদিজা। গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সকাল ৯টায় মারা যান খাদিজার মা সুমনা বেগম। সুমনা বরিশাল বিমানবন্দর থানার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী আবুল হোসেনের স্ত্রী। শুক্রবার কনে দেখতে মাইক্রোবাসে সুনামগঞ্জে যাচ্ছিলেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, জেলার বিজয়নগর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শুক্রবার ভোরে বাসের সাথে বিপরীতমুখী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের ছয় যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো চারজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

বিশ^রোডের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাইনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় এ মহাসড়কের বিজয়নগর উপজেলার রামপুরার ভাটি কালিসীমা এলাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস ও সুনামগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা লিমন পরিবহনের ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরে যায়। মাইক্রোবাসে থাকা ১০ যাত্রীর মধ্যে ৬জন পুড়ে মারা যান। নিহতরা হলেন, মাইক্রোবাসের চালক সোহান (২০), যাত্রী হারুন মিয়া (৪০), শাকিল মিয়া (২৫), সাগর (২২), রিফাত (১৬) ও ইমন মিয়া (১৯)। গুরুতর আহত অপর ৪ যাত্রীকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তারা হলেনÑ শাহিন (৩০), বিজয় (২২), আবির (৩৫) ও জিসান (২৫)। পরে তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হতাহতরা সবাই নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার চৌপাড়ার দেউলি গ্রামের বাসিন্দা। তারা মাইক্রোবাসে করে মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে সিলেটে যাচ্ছিলেন। পুলিশ জানায়, বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পর গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটলে পুরো গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে পাঁচজন নিহত হন এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো একজন মারা যান।

ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ভালুকায় মাছভর্তি দুই পিকআপের সংঘর্ষে চালক ও হেলপার নিহত হয়েছেন এবং এ সময় অপর দুই যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার মেহেরাবাড়ি নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ঘটনার সময় মাছভর্তি একটি পিকআপ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার মেহেরাবাড়ি নামক স্থানে বিকল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে। এ সময় ঢাকাগামী অপর একটি মাছভর্তি পিকআক দাঁড়িয়ে থাকা ওই পিকআপকে পেছন থেকে থাক্কা দেয়। এতে পিকআপের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই চালক নেত্রকোনা জেলার ঠাকুরকোনা গ্রামের মানিক রবি দাসের ছেলে রাজন রবি দাস (২৫) মারা যান এবং তিনজন আহত হন। আহতদের ভালুকা ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর পিকআপের হেলপার নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার আব্দুস সালামের ছেলে আজিম উদ্দিন (৩০) মারা যান। আহত অপর দুইজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ভালুকার ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করেছেন।

ভালুকার ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ জানায়, দুই পিকআপের সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পিকআপ দু’টি জব্দ করা হয়েছে এবং লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়েছে।

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উলাইল এলাকায় ট্রাকচাপায় শিল্প পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। তার নাম আকাশ আহমেদ (২২)। তিনি আশুলিয়ার শ্রীপুরের আব্দুল মালেকের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার সময় নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশলাইনে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে ওই পুলিশ সদস্য নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশলাইলে যাচ্ছিলেন। তার মোটরসাইকেলটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের উলাইল এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির একটি পণ্যবাহী ট্রাক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। এ সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ট্রাকটি আটক করলেও চালক পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনেরই বাড়ি-কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জে

কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, পৃথক চারটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের নারীসহ ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন আরো আটজন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত এবং শুক্রবার ভোরে পৃথক চার জেলাতে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা সবাই নারায়ণগঞ্জের বন্দর, রূপগঞ্জ ও ফতুল্লার বাসিন্দা।

সূত্র জানায়, ৫ মার্চ রাতে বন্দর থেকে দশ যুবক মিলে একটি মাইক্রোবাসে করে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে রাত আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলায় একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে পাঁচজন এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো একজন নিহত হন। আহত হনআরো চারজন।

নিহতরা হলেনÑ বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের দিলারবাড়ি এলাকার চায়ের দোকানি আবুল হোসেনের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী সাগর (২০), আবুল হোসেনের কর্মচারী শাহিন (১৬) ও আরেক কর্মচারী হারুন (৪২), নবীগঞ্জের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার মসলার ব্যবসায়ী নুরুল হকের ছেলে রিফাত (১৮), একই এলাকার রাজমিস্ত্রী তাওলাদ হোসেনের ছেলে ইমন (১৭), খোরশেদ আলমের ছেলে গাড়িচালক সোহান (২২)।

আহতরা হলেনÑ নবীগঞ্জের কদমতলী এলাকার শাহীন আহমেদ শান্ত (৩০), জিসান (২৪), নবীগঞ্জের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার স্যানেটারি মিস্ত্রী আফজাল হোসেনের ছেলে বিজয় (১৯), একই এলাকার আবিদ (১৯)। হতাহত সকলেই এদিন রাতে সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ:) মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে বন্দর থেকে একটি মাইক্রোবাসে রওনা হয়েছিলেন।

দুর্ঘটনায় আহত জিসান জানান, তিনি ও তার বন্ধু সাগর একসাথে বসেছিলেন। বাসের সাথে তাদের মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার পর তিনি মাইক্রোবাস থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান। সাগরসহ অন্য আরোহীরা মাইক্রোবাসের ভেতরই ছিলেন। সাগর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

দুর্ঘটনায় বাসটিও মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। তবে বাসের কোনো যাত্রী তেমন আহত হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাইক্রোবাসটিতে আগুন জ্বলতে থাকার সময় ভেতরে থাকা আরোহীরা সাহায্যের জন্য আকুতি জানালেও আগুনের ভয়ে কেউই এগিয়ে আসেনি।

আগুন নেভার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক এক করে পাঁচজনের অগ্নিদগ্ধ লাশ বের করেন মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে। আর জীবিত উদ্ধার হওয়া পাঁচজনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান একজন। এ দিকে নিহতের বাড়ি বন্দরের দেউলি চৌরাপাড়া এলাকায় চলছে শোকের মাতাম। বারবার মূর্ছা যাচ্ছে নিহত সোহানের মা সখি বেগম। ছেলের জন্য কান্না করছে নিহতদের পরিবার।

অন্য দিকে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলা মুসলিমপাগা থেকে ১৩ জনের একটি দল মাইক্রোবাসযোগে সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকায় যচ্ছিলেন বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে। পথিমধ্যে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কান্দিরগাঁও এলাকায় মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়ে মুচড়ে নিহত হয়েছেন বরের বাবা, বোন, ভাইসহ ৯ জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চারজন।

অপর দিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়ার শ্রীপুরের নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জে কর্মস্থলে আসছিলেন শিল্প পুলিশের কনস্টেবল আকাশ আহমেদ (২২)। পথিমধ্যে রাত একটার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলসহ তাকে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান আকাশ।

২০১৮ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেন। এ ছাড়াও শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে ময়নসিংহের ভালুকা উপজেলার মেহরাবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি বড় পিকআপের সাথে ধাক্কা খায় মাছভর্তি আরেকটি ছোট পিকআপ। এতে ছোট পিকআপের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় পিকআপচালক রাজনসহ নিহত হন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী মো: আজিম। তিনি উপজেলার তালাশ কোর্ট এলাকার আবদুস সালামের ছেলে।

ইউএনবি জানায়, ফেনীর সোনাগাজী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতবাড়িয়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নির্মাণাধীন সেতুর সাথে ধাক্কা লেগে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, আজিজুল হক সাহেদ (৩২) ও মোহাম্মদ বাবুল মিঞা (২৮ )। দুইজনেই চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার বাসিন্দা। নির্মাণাধীন সেতুর দারোয়ান মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফেনী থেকে সোনাগাজী যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নির্মাণাধীন সেতুর সাথে ধাক্কা লেগে গর্তে পড়ে যায়। এতে চালক ও আরোহী মাথায় মারাত্মক জখম হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসক সাহেদকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবলুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মারা যান।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, নির্মাণাধীন সেতুর আগে-পিছে সতর্কতার চিহ্ন ছিল না বলে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।

পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নুরুল আবছার সিকদার (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। গতকাল ৫ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার আলেকদিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। বাঁশখালী থানা পুলিশ জানায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে ওই বৃদ্ধ মারা যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক আনোয়ারুল ইসলাম ও আরোহী মামুনুর রশীদ নামে দুইজন আহত হলেও হতাহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মো: চুন্নু মোল্লা (৪০) নামে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সোহেল (২২) ও সুরা মনি জান্নাতি ( ৬) নামে দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাকেরগঞ্জ-চান্দুখালী মহাসড়কের মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী রাড়ীবাড়ির বটতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি গ্রামের রহমান মোল্লার ছেলে। জানা জায়, মোটরসাইকেলে চুন্নু মোল্লা, তার স্ত্রী, ছেলে ও নাতনীসহ বরগুনা যাচ্ছিলেন। এমন সময় বিপরীত দিক আসা একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে চাকার নিচে মোটরসাইকেলসহ চাপা পড়লে ঘটনাস্থলেই চুন্নু নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ ও স্থানীয়রা মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাদের বরিশাল প্রেরণ করেন।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী নামক স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী একটি বাসের চাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। তবে তার লাশ দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখা আছে।

পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী ফেরিঘাটে রাস্তা পারাপারের সময় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় পটুয়াখালী শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মো: সুলতান আহমদ (৫৬) নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লেবুখালী ফেরিঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুলতান বাউফলের নাজিরপুর ছোট ডালিমা এলাকার বাসিন্দা আজিজ তালুকদারের ছেলে। নিহত সুলতান আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালী শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন।
পঞ্চগড়ে প্রাণ গেল শিশু ও কিশোরীর

ইউএনবি জানায়, পঞ্চগড়ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল এক শিশু ও এক কিশোরী নিহত হয়েছে। পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের ভজনপুরে এবং জগদল-দেবনগর সড়কের জগদল বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা দু’টি ঘটে।

নিহতরা হলোÑ তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের প্রধানগছ এলাকার মানিক হোসেনের ছেলে রাজিউল ইসলাম (৫) ও একই উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের পাঠানপাড়া এলাকার আনারুল ইসলামের মেয়ে ময়ুরী আক্তার (১৬)।

সদর থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাছ আহমেদ জানান, রাজিউল বিকেলে বাড়ির সামনের সড়কে খেলছিল। এ সময় একটি ইজিবাইক তাকে ধাক্কা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অন্য দিকে ময়ুরী তার বোনের স্বামীর সাথে মোটরসাইকেলে করে জেলা শহরে যাচ্ছিল। পথে সে মোটরসাইকেল থেকে সড়কে ছিটকে পড়ে। এ সময় একটি ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/486094/