৫ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:০৮

বস্তা বস্তা টাকা

দেশ জাতি রাষ্ট্র

তারা ক্ষমতায় গিয়েছিল বস্তা বস্তা টাকার বিনিময়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচন শেষে লন্ডনের ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ আওয়ামী লীগের বিজয় বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এ মন্তব্য করেছিল। যারা বস্তা বস্তা টাকা খরচ করে নির্বাচনে জিতেছেন, তারা শত শত বস্তা টাকা উপার্জন করে তার শোধ তুলবেন এটাই স্বাভাবিক। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে জনগণ কিছু পায়। কথাটি এক শ’ ভাগ সত্য। তবে তা আওয়ামী জনগণ। সাধারণ মানুষ সরকারের টাকা পাওয়ার চিন্তাই করতে পারে না। বরং জনগণের পকেটের টাকা কী করে কেড়ে নিতে হয়, বিরোধীদের ব্যবসাবাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা-চ্যানেল ও সহায়-সম্পত্তি কিভাবে দখল নিয়ে বস্তা বস্তা টাকা বানাতে হয় তা বিগত যুগে তারা প্রমাণ করেছেন। বাংলাদেশের ৫৫ হাজার ১২৬ বর্গমাইলের মানচিত্রের মালিক তারা। এটা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। তাই তারা বাংলাদেশের নদী-বিল-খাল দখল করেছে। আর সরকারি অর্থ! এটা একান্তই তাদের। সরকারি ত্রাণসামগ্রী তাদের। গ্রাম-গঞ্জে বা শহর-বন্দরে যেখানেই যে সহায়তা দেয়া হোকÑ সবই প্রাপ্য দলীয় লোকদের। সরকারি ব্যয় বরাদ্দ তাদের। বড় বড় মেগা প্রকল্পের জন্য বিদেশের তুলনায় ঢের বেশি বস্তা বস্তা টাকা খরচ করা হয় ‘তাদের জন্য, তাদের দ্বারা, তাদের কল্যাণে’। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সময় কোটি কোটি টাকা বেরিয়ে এসেছে তাদের নেতাদের ঘর থেকে, অফিস থেকে, আড্ডা থেকেÑ সবই তাদের, সবাই তাদের লোক। যখন ধরা পড়ে, ছয় হাজার টাকা হয় বালিশের দাম তখন তারা বলে, সে তো তাদের লোক।

বস্তা বস্তা টাকার লোভে দুর্নীতিতে ছেয়ে আছে দেশ। অফিস-আদালত, চাকরিবাকরি, ব্যবসাবাণিজ্য কোনো কিছুই চলে না ঘুষ ছাড়া। এমন কোনো অফিস নেই যেখানে ঘুষ নেই। আগের তুলনায় ঘুষ বেড়েছে দশ গুণ। পিয়নের ২০ টাকা এখন ২০০ টাকা হয়েছে। এভাবেই বস্তা বস্তা টাকা কামাই করে তারা আঙুুল ফলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছে। আপনার আশপাশে ক্ষমতাসীন লোকদের দিকে তাকালেই আপনি টাকার খেলা দেখতে পাবেন। এই সে দিন যাদের ঠিকমতো খাওন-পরন জুটত না, এখন তারা অনেক অনেক বিত্তবৈভবের মালিক। তাদের কোনো নীতি নেই। আদর্শ নেই। দেশপ্রেম নেই। আছে শুধু দলপ্রেম। সে প্রেম বস্তা বস্তা টাকার জন্য একচেটিয়া দলপ্রেম। চাকরি চাই! ব্যবসা চাই! লোন চাই! ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’।

সাম্প্রতিক সময়ে এমনই সব টাকার কাহিনী বেরুচ্ছে যা বাংলাদেশের প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে বিরল। তারা এ ব্যাপারে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক। ১. ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধার করে র্যাব। এ অভিযানে তখন পর্যন্ত ১৫ বস্তা এক হাজার টাকার নোট বিভিন্ন ভল্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ টাকার পরিমাণ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ। আরো পাওয়া গেছে এক কেজি স্বর্ণ ও ৯ হাজার ইউএস ডলার। এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা ২০০০ সালের পর থেকে ১৫৬ টি ফ্ল্যাট ও ২২টি বাড়ির মালিক হয়েছেন। সিআইডির কাছে তারা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। পুলিশের সিআইডি বিভাগ জানিয়েছে, ঢাকাতেই তাদের ছোট-বড় ৭০টি জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে তারা এই বস্তা বস্তা টাকার মালিক হন। তাদের এতই দাপট যে, তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। সরকারি দলের দাপটে জুয়া ও ক্যাসিনো নির্বিঘেœ চালিয়ে তারা এই বস্তা বস্তা টাকার মালিক হন। ২. এই দুই নেতা এনামুল-রুপনের টাকার আরো ৩০টি গুদামের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা দল। ২৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক এ খবর পরিবেশন করে। ৩. নরসিংদীর যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার বস্তা বস্তা টাকা বানানোর কাহিনী আরব্য রজনীর রোমাঞ্চকেও হার মানিয়েছে। আওয়ামী রাজনীতিকে ব্যবহার করে মাদক ও নারীদের নিয়ে ব্যবসা করত পাপিয়া। বিদেশে টাকা পাচারসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধের খবর প্রকাশিত হচ্ছে পাপিয়ার গ্রেফতারের পর। র্যাবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানীর তেজগাঁও এফডিসি-সংলগ্ন এলাকায় পাপিয়ার যৌথ মালিকানাধীন গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলুশন নামে গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে। এসব ব্যবসার আড়ালে সে অবৈধ অস্ত্র, মাদক কারবার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বস্তা বস্তা টাকা রোজগার করছিল। চাঁদাবাজির জন্য তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এসবের মাধ্যমে পাপিয়া ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটসহ প্রচুর পরিমাণ সম্পত্তি ও বিপুল টাকার মালিক হয়েছে। পাপিয়ার স্বামীর থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসা রয়েছে। র্যাব সূত্র আরো জানায় যে, তাদের মূল ব্যবসা ছিল সমাজের উঁচু স্তরের লোকদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়। শুধু তাই নয়, দলের দাপট দেখিয়ে সে চাকরিবাকরি ও বিভিন্ন লাইসেন্স দেয়ার নাম করেও বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে পাপিয়ার বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে র্যাব। ৪. স্মরণ করা যেতে পারে যে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ক্যাসিনো ক্লাবগুলোতে র্যাব অভিযান শুরু করে। সে সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুলশানের বাসাসহ বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময়ে ওই সব ক্লাব ও বাড়ি থেকে বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধার করা হয়। খালিদের বাসা থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, দু’টি মেয়াদ উত্তীর্ণ পিস্তল, ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, পাঁচ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার এবং ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা মো: কাওছারের মালিকানাধীন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে এবং তার বাসায় তল্লাশি করে অস্ত্র, ইয়াবা ও টাকা উদ্ধার করে। একই সময়ে রাজধানীর ফকিরেরপুল ইয়াং ম্যানস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও শাহজাহানপুর মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাবে যুবলীগের কিছু নেতার পরিচালিত ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময়ে ইয়াং ম্যানস ক্লাব থেকে বস্তা বস্তা টাকা জব্দ করা হয়। এর পরিমাণ ২৪ লাখ ২৯ হাজার। র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম তখন বলেছিলেন, ‘সব ক্লাবের ভেতর থেকে বিপুল টাকা জব্দ করা হয়েছে।’ ফকিরেরপুলের ইয়াং ম্যানস ক্লাবটি ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার জন্য ক্রীড়ামোদীদের কাছে পরিচিত হলেও এ ক্লাবে ক্যাসিনোর আদলে জুয়ার আসর চলছিল। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই ক্লাবের সমিতিতে যুবলীগের কয়েকজন নেতা অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর থেকে ওই নেতারা টাকা বানানোর নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন। ওই একই সময়ে আওয়ামী নেতাদের বস্তা বস্তা টাকা বানানোর নানা সরস কাহিনী পত্রপত্রিকায় স্থান পায়। ৫. ক্ষমতাসীন দলের কোনো সহযোগী সংগঠন বস্তা বস্তা টাকা বানানোর কায়দা-কৌশল থেকে নিবৃত্ত থাকেনি। ছাত্রলীগের প্রধান উপার্জন হয়ে দাঁড়ায় সন্ত্রাসের মাধ্যমে চাঁদাবাজি। বাংলাদেশের এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই, যা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিপর্যস্ত হয়নি। ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা বরখাস্ত হয়েছেন চাঁদাবাজির অভিযোগে। অভিযোগ রয়েছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকের থেকে ছাত্রলীগ নিয়মিত চাঁদা গ্রহণ করে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের বাইরেও তাদের হাত সম্প্রসারিত। প্রায়ই ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের নেতারা হামলা চালায় পাশের দোকান ও মার্কেটগুলোতে। এ নিয়ে কেলেঙ্কারি কম হয়নি। ৬. গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে যখন ঢাকায় বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছিল তখন বগুড়ার শাজাহানপুরের জালশুকা এলাকায় সড়ক ও সড়কের পাশের ডোবায় বিপুল বস্তা বস্তা কুচি কুচি করা টাকা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, ক্যাসিনো অভিযানের কারণে ভীত হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা টাকা কুচি কুচি করে কেটে দায়মুক্ত হতে চেয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে ব্যাখ্যা ছিল বাতিল নোটগুলো কুচি কুচি করা হয়েছে।

যা হোক এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত এক যুগ ধরে ক্ষমতাসীনরা বাংলাদেশকে টাকা বানানোর কারখানায় পরিণত করেছে। বলতে গেলে এরা টাকার নেশায় উন্মাদ হয়ে পড়েছে। বৈধ-অবৈধভাবে বস্তা বস্তা টাকা বানানোর অভিজ্ঞতার কথা বলা হলো। পরোক্ষ ঘুষ ও দুর্নীতি সীমাহীনভাবে সমাজকে গ্রাস করেছে। এর সাথে অতি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে খোদ সরকারের ধান্ধা। আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশ সরকারের বড় আয়ের উৎস রেমিট্যান্স বা বিদেশে কর্মরত মানুষের পাঠানো অর্থ। মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিদেশে টাকা উপার্জন করে। সেই টাকা সে বাড়ি পাঠায়। পরোক্ষভাবে পাঠানো সব টাকাই জমা হয় বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে। এই টাকার সদ্ব্যবহার না করে সরকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলপ্রীতির মাধ্যমে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। যেমনÑ একজন সৎ পিতা সৎ উপার্জনের মাধ্যমে বিপুল অর্থ রেখে যায়, আর তার অসৎ, নেশাখোর ও লম্পট পুত্র যথেচ্ছা টাকা বরবাদ করে দেয়। টাকার কী পরিমাণ লুটপাট হয় তার লোমহর্ষক কাহিনীর অতি সামান্য অংশ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পর্দা, বালিশ, যন্ত্রপাতি ও ভ্রমণ বিলের আজব কাহিনী আপনারা জানেন। এসব করে করে সরকারের তহবিলে এখন লালবাত্তি জ্বলার উপক্রম হয়েছে। সরকার ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ধার করে অর্থনীতি সচল রেখেছে। আওয়ামী লীগের লোকেরা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এগুলো এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। বেসিক ব্যাংক বা ফার্মার্স ব্যাংক এর উদাহরণ সবারই জানা। বস্তা বস্তা টাকা লুটপাটের আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে শেয়ারবাজার। বেশ কয়েক বছর আগে এসব ক্ষমতাধর কোটি কোটি টাকা লোপাট করে। এরা এতই শক্তিধর ও সরকারের নিকটতম মানুষ যে আওয়ামী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাদের নাম বলতে সাহস পাননি। এই মুহূর্তে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে এমন অবস্থা চলছে। সরকারের টাকায় এতটাই টান পড়েছে যে, অবশেষে তারা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ নিয়েও টান ধরেছে। যেমনÑ বোর্ড, করপোরেশন ও অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা আইনানুগভাবে হজম করার জন্য সরকার কয়েক সপ্তাহ আগে কেবিনেটে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। তাদের সর্বশেষ লুটপাটের ক্ষেত্র হচ্ছে দুটোÑ প্রথমত, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। একটি সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছেÑ ‘কারণ ছাড়াই বাড়ছে চালের দাম’। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে চার পাঁচ টাকা। অজুহাতের অভাব নেই তাদের। কিন্তু ভালোভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এর পেছনে রয়েছে আওয়ামী লোভাতুর দৃষ্টি। যখনই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে তখন মলম লাগানোর ব্যবস্থা হয়। আপাত উপশম ঘটে। স্থায়ী বা টেকসই বা আনুপাতিকভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা যেন সরকারের নেই। তাদের দ্বিতীয় লুটপাটের ক্ষেত্র হচ্ছে সরাসরি সার্ভিস সেক্টর বা সেবা খাত। গত সপ্তাহে পানির দাম বেড়েছে। আবাসিকে প্রতি লিটার ১১.৫৭ টাকা থেকে বেড়ে ১৪.৫৬ টাকা হয়েছে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এর মাত্রা ৩৭.০৪ থেকে ৪০ টাকা। আবার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। এতে শিল্প উৎপাদন, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যের খরচ বাড়বে। খরচ বাড়বে সব খাতে। প্রতি ইউনিটের খুচরা দাম ৩৬ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এতে জনগণের বাড়তি খরচ হবে দুই হাজার কোটি টাকা। ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় তা অতি সামান্য। রবীন্দ্রনাথের সামান্য ক্ষতি কবিতার কথা মনে পড়ে! কাশীর মহিষী করুণা গরিবের কুঁড়েঘর জ্বালিয়ে দিয়ে সামান্য ক্ষতির কথা বলেছিলেন। আর ক্ষমতাসীনরা আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলে সামান্য মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছেন। অথচ দফায় দফায় অযৌক্তিকভাবে যেভাবে বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে তা বহনের ক্ষমতা জনগণের নেই। এই মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে আওয়ামী পুঁজিপতিরা মিলিয়ন ডলার কামিয়ে নেবে। বস্তা বস্তা টাকায় স্ফীত হবে তাদের অ্যাকাউন্ট।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেছিলেন- ‘অর্থস্য পুরোষো দাসঃ’। অর্থাৎ মানুষ পয়সার গোলাম। এখন তারা পয়সার গোলামে পরিণত হয়েছেন। আরো বলা হয়, অর্থই অনর্থের কারণ। শাসকগোষ্ঠী অর্থকে সর্বস্ব ভেবে অনর্থের কারণ ঘটিয়েছে। অর্থের জন্য তারা হেন কাজ নেই যে না করতে পারে। তাদের ছেলেরা চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগে হাতেনাতে ধরা পড়ে। প্রতিদিন সংবাদপত্রে তাদের চোটপাট, লুটপাট ও দখলদারির খবর থাকে। সবারই একই উদ্দেশ্য বস্তা বস্তা টাকা উপার্জন করা। অপরাধে যে বা যারা যত পারঙ্গম তাদের বিত্তের বৈভব ততটাই উঁচু। জি কে শামীম বা পাপিয়ারা তার নিকৃষ্ট উদাহরণ। এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এটি ব্যক্তিগত অর্জন বা অভিলাষ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া একই চিত্র দৃশ্যমান হবে। মানুষ মনে করে এসব চুনোপুঁটি ধরে তেমন লাভ নেই। ধরতে হবে রাঘব বোয়ালদের। এই সে দিন দেখলাম একজন রাঘব বোয়াল যিনি একসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পাপিয়াকে কষে গালি দিলেন। লোকেরা তাকে বলতে চায় ‘লুক ইনটু দ্য মিররÑ নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন’। যদি সত্যি সত্যি তারা নিজের চেহারা আয়নায় দেখেন তাহলে নিজেদের একেকজন শামীম বা পাপিয়া হিসেবে দেখতে পাবেন। অবশ্য এভাবে দেখলে ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’ হওয়ার আশঙ্কা। ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দেবো কোথা?’ সুতরাং অস্ত্রোপচার ছাড়া রোগমুক্তির কোনো কারণ দেখি না। 

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/485502/