৫ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:০৩

ইইএফ অফিসের অবিশ্বাস্য ব্যয়

এক টাকাও ছাড় হয়নি, খরচ ২২ কোটি টাকা!

আপ্যায়ন-সম্মানীতে দৈনিক ব্যয় ৮৫ হাজার টাকা, প্রতি বৈঠকে গড়ে ১৭ হাজার টাকার আপ্যায়ন

সম্ভাবনাময় উদ্যোগে সহায়তা করতে সরকারি তহবিল ইইএফ নিয়ে দুর্নীতি হওয়ার পর নতুন করে সাজানো তহবিল 'ইএসএফ' থেকে অর্থ ছাড়ের আগেই দুর্নীতি হয়েছে। তহবিল পরিচালনায় গঠিত উইং বা অফিস থেকে সম্মানী ও আপ্যায়ন ভাতার নামে অবিশ্বাস্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। দেড় বছরে বিভিন্ন কমিটির বৈঠকে সম্মানী ও আপ্যায়নে প্রতি কার্যদিবসে খরচ হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। এমন প্রতিষ্ঠানের প্যাডে স্যুপ এবং অন্থন ক্রয় দেখানো হয়েছে, যা তারা বিক্রিই করে না। পত্রিকার বিল যাচাই করে দেখা গেছে, ওই টাকায় প্রতিদিন অন্তত ৫০টি দৈনিক পত্রিকা কেনা সম্ভব।

সম্মানী ও আপ্যায়ন ছাড়া যাতায়াত, মোটরগাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, পত্রিকা বিলসহ ২৩টি খাতের নামে দেড় বছরে দেখানো হয়েছে ২২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ব্যয়। খরচের বিভিন্ন হিসাব দেখলে যে কারও মনে প্রশ্ন জাগবে। অথচ কোনো জিজ্ঞাসা ছাড়াই উদার হস্তে টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইক্যুইটি এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড বা ইইএফ থেকে ইক্যুইটি সাপোর্ট ফান্ড বা ইএসএফ নামকরণ করা হলেও এর অফিস 'ইইএফ উইং'-এর নাম অপরিবর্তিত রয়েছে। একসময় এ তহবিলের সব দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে ২০০৯ সালে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিকে সাব-এজেন্সি নিয়োগ করে তহবিলের পরিচালনা তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তহবিল ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে পুরানা পল্টনের এনএসই ভবনের ১৩ ও ১৪ নম্বর ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ইইএফ উইংয়ের কার্যক্রম চলছে। এখানকার যাবতীয় খরচের বিল ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের বিপরীতে টাকা দিয়ে দেয়।

আপ্যায়ন ব্যয়ের কিছু নমুনা ভাউচার সংগ্রহ করেছে সমকাল। এসব ভাউচার বিভিন্ন দোকানের নামে অথচ হাতের লেখা একই। এসব ভাউচার দেখে যে কেউ বুঝতে পারবেন, এই ব্যয়ে ঘাপলা আছে। ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর আইসিবিতে কৃষিবিষয়ক প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির ৭৭তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির ১০ সদস্যের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নয়জন। বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের জন্য ঝিগাতলার সেবা ক্যাটারিংয়ের প্যাডে নয়টি লাঞ্চ বক্স কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৯ হাজার ৪৫০ টাকা। আর নয়টি স্যুপ কেনা হয়েছে চার হাজার ৯৫০ টাকায়। এসবকে ছাপিয়ে গেছে ফল কেনার খরচ। ওই বৈঠকে শুধু ফল খাওয়ানোর খরচ দেখানো হয়েছে চার হাজার ৩৪০ টাকার। চা, বিস্কুট ও চিনি কেনায় গেছে আরও ১১শ' টাকা। এভাবেই নয়জনের আপ্যায়নে খরচ হয়েছে ১৬ হাজার ৩০০ টাকা। বিস্ময়কর তথ্য হলো, সেবা ক্যাটারিংয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তারা স্যুপই বিক্রি করে না।

হিসাব করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় বছরে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি ছিল ১৮২ দিন। এ সময়ে মোট কর্মদিবস ছিল ৩৬৭টি। দেড় বছরে ৪০৩টি বৈঠকের সম্মানীর নামে নেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আপ্যায়নে খরচ হয়েছে ৭২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সম্মানী ও আপ্যায়নে মোট খরচ হয়েছে তিন কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এর মানে প্রতি কর্মদিবসে আপ্যায়ন ও সম্মানী বাবদ খরচ হয়েছে ৮৫ হাজার ২৩৪ টাকা। প্রতিদিন গড়ে বৈঠক হয়েছে একটির বেশি। বৈঠকপ্রতি সম্মানীতে গড় খরচ হয়েছে ৫৯ হাজার ৬৬৭ টাকা। আপ্যায়নে গড়ে খরচ হয়েছে ১৭ হাজার ৯৫২ টাকা।

আইসিবির অফিস পুরানা পল্টনে হলেও দুপুর ও রাতের খাবারের অধিকাংশ বিল করা হয়েছে ধানমন্ডির ঝিগাতলার 'সেবা ক্যাটারিং লিমিটেড' নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে। আর চা-বিস্কুট, পানির ভাউচার করা হয়েছে ফকিরাপুলের 'মেসার্স সিরাজ স্টোর'-এর প্যাডে। ভিন্ন জায়গার দোকান হলেও দুটি ভাউচারের হাতের লেখা একই। আর ফল কেনায় সাদা কাগজে ভাউচার করা হয়েছে। ফলের কয়েকটি ভাউচারে একই হাতের লেখা পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইসিবির সুপারভাইজার আব্দুছ ছবুর আপ্যায়নের এসব বিল তৈরি করেছেন। প্রতিটি বিলে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন জিএম মো. রিফাত হাসান। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে খরচের হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হওয়ার পর কোনো প্রশ্ন ছাড়াই দ্রুত ছাড়ের জন্য সহায়তা করেছে ইইএফ ইউনিটের একটি চক্র।

পুরানা পল্টন এলাকায় এত সব নামিদামি হোটেল থাকতে ধানমন্ডির ক্যাটারিং সার্ভিসের প্যাডে ভাউচার করার কারণ খুঁজতে গিয়ে মিলেছে ভিন্ন তথ্য। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে সেবা ক্যাটারিংয়ে যোগাযোগ করে এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তপন রায় জানান, তারা স্যুপ বা অন্থন বিক্রি করেন না। তাদের এখানে কাচ্চি, পোলাও ও বাংলা খাবার পাওয়া যায়। অর্ডার দিলে মেন্যুর আলোকে খাবার সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কোনো লাঞ্চ বক্স নেই।

২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে সম্মানী ভাতায় খরচ দেখানো হয়েছে ৯৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং আপ্যায়নে ২১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ওই তিন মাসে মোট কর্মদিবস ছিল ৫৯টি। এর মানে সম্মানী বাবদ দৈনিক গড়ে খরচ হয়েছে এক লাখ ৬৩ হাজার ১০১ টাকা এবং আপ্যায়নে গেছে ৩৬ হাজার ৫৪৯ টাকা। বৈঠকের একজনের সম্মানী দেখানো হয়েছে ছয় হাজার টাকা। শুধু সম্মানীতে যে পরিমাণ খরচ দেখানো হয়েছে, তাতে প্রতিটি কর্মদিবসেই অন্তত ৩৩ জন বৈঠকে উপস্থিত থাকতে হবে।

এসব বিষয়ে আইসিবির ইইএফ উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. রিফাত হাসান সমকালকে বলেন, ইইএফের প্রকল্প মূল্যায়ন, মঞ্জুরিসহ অনেক কমিটি আছে। এসব বৈঠকের আপ্যায়ন ও সম্মানিতে খরচ হয়েছে। ভাউচার দেখে প্রতিটি খরচের অনুমোদন করেন তিনি।

খরচের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে বেতন-ভাতায়। দেড় বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় ১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতায় গেছে আরও ২৯ লাখ টাকা। এর বাইরে মহাব্যবস্থাপকের ড্রাইভারের বেতন-ভাতার নামে প্রতি মাসে তোলা হয় ৪১ হাজার ৭১২ টাকা। এ ছাড়া অফিসের জন্য নেওয়া দুটি ফ্লোর ভাড়ায় গেছে দুই কোটি ৬২ লাখ টাকা। আইসিবির ইইএফ উইংয়ের এসব খরচে প্রতি ত্রৈমাসিকেই তারতম্য দেখা গেছে। যেমন- ২০১৮ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেতন-ভাতায় এক কোটি ৭৭ লাখ এবং বাড়ি ভাড়ায় ২৯ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়। পরের ত্রৈমাসিকে বেতন-ভাতায় গেছে ২ কোটি ৮৪ লাখ এবং বাড়ি ভাড়ায় ৫৯ লাখ টাকা। আবার ২০১৯ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বেতন-ভাতায় এক কোটি ৯৯ লাখ এবং বাড়ি ভাড়ায় ৪৮ লাখ টাকা। বেতন-ভাতা ও বাড়ি ভাড়ার মতো নির্দিষ্ট খরচেও প্রতি ত্রৈমাসিকে এত তারতম্য কেন- জানতে চাইলে রিফাত হাসান বলেন, ঈদের মাসে বেতন বেশি হয়। এ ছাড়া লোকবল কখনও বাড়ে, কখনও কমে। আর ভাড়ায় তারতম্যের প্রশ্নে বলেন, কখনও হয়তো একটি ফ্লোর ছিল, পরে দুটি হয়েছে। তবে কোনো ত্রৈমাসিকের সঙ্গে মিল না থাকার কারণ জানতে চাইলে এর কোনো জবাব তিনি দিতে পারেননি।

আইসিবির পত্রিকা বিল দেখে মনে হবে, শুধু খাবার-দাবারে নয়, পত্রিকা পড়েই সময় পার করেছেন তারা। দেড় বছরে দুই লাখ ৬১ হাজার টাকার পত্রিকা কেনা হয়েছে। এ পরিমাণ অর্থে দৈনিক গড়ে ৫০টির বেশি পত্রিকা কেনা সম্ভব। পত্রিকা বিলের বাইরে টেলিফোন ও ইন্টারনেট বিলে খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৭০ টাকা। গ্রাহক সহায়তায় ব্যয় দেখানো হয়েছে নয় লাখ ১১ হাজার টাকা। ভ্রমণ, যাতায়াত ও মোটরকার রক্ষণাবেক্ষণে গেছে তিন কোটি ৮১ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মোটরকার রক্ষণাবেক্ষণে গেছে এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ভ্রমণ ভাতা বাবদ ৯৮ লাখ টাকা। স্টাফ যানবাহনে ২২ লাখ ও স্থানীয় যাতায়াতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ লাখ টাকা। প্রিন্টিং ও মনিহারিতে ১৮ লাখ ৮০ হাজার এবং ইউটিলিটি বিল দেওয়া হয়েছে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর বাইরে স্থায়ী সম্পদ কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা। লিগ্যাল খাতে ৬৮ লাখ, অফিস সরঞ্জাম মেরামতে ৭ লাখ ৯০ হাজার, ক্রোকারিজ কেনায় এক লাখ এবং প্রশিক্ষণে গেছে ১১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এত ব্যয়ের পরও বিবিধ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে আরও তিন লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

এসব বিষয়ে রিফাত হাসান বলেন, তাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। তবে মোটরকার রক্ষণাবেক্ষণে কর্মকর্তাদের টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া যখন কেউ প্রকল্প দেখতে যান, তিনিও ভাতা পান। আর অনলাইনে যেসব আবেদন আসে, তা প্রিন্ট করতে হয়। এসব কারণে খরচ হয়ে থাকে।

জানা গেছে, বিভিন্ন বিলের নামে শুধু সরকারি টাকার নয়ছয় হচ্ছে তা নয়। প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইইএফের সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে। আবেদন করা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ঘুষ ও তদবিরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এখান থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির কেউ কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঋণের জন্য তদবির করেন। যে কারণে সত্যিকারের প্রকল্পে টাকা যায় না বললেই চলে। ফলে সরকার যে মহতী উদ্দেশ্যে কম সুদের এ প্রকল্প চালু করেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ব্যাহত হচ্ছে।

ইইএফ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বেতন-ভাতা ও বাড়ি ভাড়ার ব্যয়ে তারতম্য হওয়ার কথা নয়। আইসিবির ইইএফ উইংয়ে এমনটি হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া মোট কর্মদিবসের চেয়ে বেশি বৈঠক কেন হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। কোনো অসঙ্গতি পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারের এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের আগেই এর খরচের বিষয়ে কোনো অনিয়ম হলে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। যাতে করে দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

আগের ঋণের কী অবস্থা :ইএসএফে রূপান্তরের আগে পর্যন্ত মূলধন ভাগাভাগির ভিত্তিতে এ তহবিলের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এ তহবিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে দুই হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতের ৯২১টি প্রকল্প পেয়েছে এক হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। আর আইসিটি খাতের ১০৩টি প্রকল্পে গেছে ৫১২ কোটি টাকা। তবে সব মিলিয়ে ফেরত এসেছে মাত্র ৩৫৪ কোটি টাকা। আর আইসিটি খাতের আটটি প্রকল্পের হদিস পাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়া হয়েছে চার কোটি ১২ লাখ টাকা। নানা অনিয়মের অভিযোগ, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ, তহবিল গঠনের ১৮ বছরেও কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন তহবিলের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর মূলধন সহায়তার পরিবর্তে ঋণ সহায়তার ভিত্তিতে তহবিল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইএসএফ থেকে মাত্র দুই শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তহবিল থেকে ছাড় হয়নি এক টাকাও :ব্যাপক সুবিধার এ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। তবে ছাড় হয়নি এক টাকাও। ইএসএফের অগ্রগতি বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে গত বছরের ১৮ নভেম্বর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উত্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ইএসএফ থেকে ঋণ নিতে পাঁচ হাজার টাকার অফেরতযোগ্য পে-অর্ডারসহ তিন হাজার ৯০টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১৪টি শুধু আইসিটি খাতের। বাকি সব খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষি খাতের। যাচাই-বাছাই করে কৃষি খাতের ৮৭০টি এবং আইসিটি খাতের চারটি প্রকল্পের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। যার মধ্যে ১১টি প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা হয়েছে। অথচ আজ অবধি এক টাকাও ছাড় করা হয়নি। সম্মানী, আপ্যায়নসহ বিভিন্ন নামে টাকা নিতে অর্থ ছাড় না করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আইসিবির মহাব্যবস্থাপক রিফাত হাসান বলেন, অর্থ ছাড়ের আগে প্রকল্প মূল্যায়নসহ কিছু প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়। যে কারণে দেড় বছরে এক টাকাও ছাড় হয়নি। তবে দু-একটি মঞ্জুরিপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

https://samakal.com/economics/article/200314462