২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১:৫৭

চীন মৈত্রী সেতুর টোল আদায়ের কারণে তীব্র যানজট-ভোগান্তি

ব্রিজকে টোলমুক্ত করার দাবি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর; ৬ মাসের মধ্যে টোলবক্স ডিজিটালাইজ করার ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর

রাজধানীর বুড়িগঙ্গা সেতুর উপর ১৯৮৮ সালে নির্মিত হয়েছে চীন মৈত্রী সেতু। স্থানীয়দের কাছে যা ‘প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু’ হিসেবেই পরিচিত। সেতু নির্মাণের ৩১ বছর অতিবাহিত হলেও এ পথে চলাচলকারী যানবাহন থেকে এখনো টোল আদায় করা হচ্ছে। সেতুর ঠিক মাঝখানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কোম্পানির লোকজন ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহনের কাছ থেকে আদায় করছে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোলের টাকা। এ নিয়ে এই সেতুর উভয় পাড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। ভোগান্তির শিকার হতে হয় এ পথে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষকে।

তবে, আশার কথা হলো আগামী ৬ মাসের মধ্যে বুড়িগঙ্গা সেতুসহ দেশের অন্যান্য টোল সেতুগুলোকে ডিজিটালাইজড করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, মানুষের ভোগান্তি দূর করতে টোলবক্সগুলো যদি ডিজিটালাইজড হয়, তাহলে মানুষের কষ্ট হবে না। যদি এই সময়ের মধ্যে তা করতে না পারি তাহলে বুড়িগঙ্গা সেতুতে আর টোল আদায় হবে না, কথা দিলাম।

বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুটি (চীন মৈত্রী সেতু) রাজধানীর পোস্তগোলা ও কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। পদ্মা সেতুর ফলে এই সেতুটি আরো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন পাড়ি দেয় এই সেতু দিয়ে। সেতুটি চালু হওয়ার ৩১ বছর কেটে গেছে; কিন্তু এত বছর পরও সেতুটি টোলমুক্ত না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যদিও ২০০১ সালে নির্মিত বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু (বাবুবাজার সেতু) ২০১৩ সালে টোলমুক্ত হয়।

জানা যায়, বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুটি টোলমুক্ত করার দাবিতে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ২০১৫ সালে নতুন টোলনীতি অনুসারে পোস্তগোলা সেতুর টোল আদায়ের হার আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হয়। এতে ওই সময় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পরিবহন শ্রমিক-মালিক ও চালকরা। বর্ধিত হারে টোল দিতে তারা অস্বীকার করেন এবং সেতু টোলমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে নামে। শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে তখন সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর থেকে নতুন ইজারাদার বর্ধিত হারে টোল আদায় শুরু করলে পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আবারো আন্দোলনে নামেন তারা। ২৬ অক্টোবর আন্দোলনের একপর্যায়ে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক প্রাণ হারান। এ ঘটনার পর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্দেশে টোল আদায় বন্ধ রাখে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান আলম শিপিং লাইনস; কিন্তু প্রায় ৯ মাস বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১ জুলাই থেকে আবারো বর্ধিত হারে টোল আদায় শুরু করেন ইজারাদার। এ নিয়ে নতুন করে ক্ষোভে ফুঁসছেন পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

গতকাল শনিবার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে ‘বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টে’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে এই প্রতিবেদকসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা সেখানে যান। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে পোস্তগোলায় নামার পরই পড়তে হয় যানজটে। কেরানীগঞ্জের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় টোল আদায়কেন্দ্রিক ওই ব্রিজে তীব্র যানজট দেখা যায়।

বসুন্ধরা গ্রুপের বিটুমিন প্ল্যান্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শুরুতেই বুড়িগঙ্গা সেতুর টোল আদায় নিয়ে এলাকাবাসীর দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। এরপর বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সেতুতে টোল আদায়ের কারণে মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি থেকে রক্ষায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু টোলমুক্ত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, এই ব্রিজটি ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। ২০ বছরেরও বেশি সময় হলো এই ব্রিজের অর্থ উঠে গেছে; কিন্তু এখনো টোলমুক্ত হয়নি। আমি ব্রিজটিকে টোলমুক্ত করার অনেক চেষ্টা করেছি; কিন্তু এখনো টোল রয়েই গেছে।

নসরুল হামিদ বলেন, বুড়িগঙ্গায় আরো দু’টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলোতে টোল নেই। অথচ এই ব্রিজটিতে এখনো টোল বিড়ম্বনা রয়েই গেছে। এই অনুষ্ঠানে যেসব অতিথি এসেছেন তারাও ২০ থেকে ৩০ মিনিট এই টোল বিড়ম্বনায় ভুগেছেন।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, টোল আদায় নিয়ে আপনারা যে দাবি করেছেন, আমি অবশ্যই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাবো, কথা দিলাম। প্রধানমন্ত্রী নিজেও চান প্রত্যেকটি টোলবক্স যেন ডিজিটালাইজড হয়। ডিজিটাল হলে কষ্ট না করে, সময় নষ্ট না করে টোল আদায় সম্ভব হবে। বিদেশে আমরা দেখিÑ গাড়ি চলমান অবস্থায়ই টোল ফি কেটে নেয়া হয়। গাড়ি থামাতে বা স্লো করতে হয় না। আমরা এমন একটা ব্যবস্থার দিকে যাবো। আগামী ৬ মাসের মধ্যে যদি এটা করে দিতে না পারি তাহলে আপনারা যে দাবি করেছেন, সে অনুযায়ী এখানে কোনো টোল আদায় করা হবে না; কিন্তু মনে রাখতে হবে অনন্তকাল পর্যন্ত এই ব্রিজটিকে ধরে রাখতে হবে। ব্রিজ একবার করে দিয়েছে সরকার, এর মেইনটেনেন্স খরচটা, যারা বেনিফিসিয়ারি তাদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। আমরা সেটি আদায় করেই খরচটা তুলব। তবে, এর মানে এই নয় যে, মানুষ এ জন্য কষ্ট করবে। শেখ হাসিনার সরকার কখনো মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য ক্ষমতায় আসেনি। আপনাদের কষ্টের কথা জেনে গেলাম। কষ্ট লাঘবের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/482686/