২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১:৪৫

জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে রফতানি আয়

চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ে ভাটা পড়েছে। নগদ প্রণোদনা ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও রফতানি আয় কমছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সপ্তম মাস জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে রফতানি আয়। অর্জিত আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমকি ২১ শতাংশ কম। নানামুখী পদক্ষেপের পরও রফতানি আয় বাড়াতে পারছে না সরকার। রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস দেশের তৈরি পোশাক খাতও রফতানির লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। ফলে আগের অর্থবছরের মতোই ধারাবাহিকভাবে কমছে রফতানি আয়।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে পণ্য রফতানি আয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১৩ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসাবে জানুয়ারিতে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২১ কোটি ৮ লাখ ডলার।

ইপিবি’র তথ্য বলছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছর প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রফতানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এই সাত মাসে রফতানি আয় এসেছে ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ শতাংশ কম।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসাবে জানুয়ারিতে রফতানি আয় ও লক্ষ্যমাত্রা কোনটাই পূরণ হয়নি। জানুয়ারিতে মোট রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২১ কোটি ৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। একই সঙ্গে ১ দশমিক ৭০ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে জানুয়ারি মাসে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিকসহ বড় বড় খাতগুলোর রফতানি কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে পুরো রফতানি আয়ে। এ ছাড়া দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে পোশাকের চাহিদা কম, তাই অর্ডারও কম। এর সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। পাশাপাশি দেশের অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা রয়েছে। রফতানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমা মানে এর প্রভাব পুরো রফতানি খাতে পড়েছে। আলোচিত সময়ে কমেছে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়। অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ কম। একই সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।

জানা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয় এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে আয় এসেছিল ১ হাজার ৭০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ছয় মাসে নিট পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৮২০ কোটি ৫ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রফতানিতে আয় হয়েছে ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ কম।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, এখন আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা, কিন্ত তা না হয়ে কমছে। কারণ বিশ্ব বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। ফলে আমাদের রফতানি অর্ডার কমে গেছে। এর মূল কারণ আমরা যে সব কটন দিয়ে পণ্য তৈরি করছি, এর চাহিদা এখন কমছে। পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি ও বেতন-ভাতা বাড়ানোর কারণে কম দামে অর্ডার নেয়ার সক্ষমতা আগের চেয়ে কমেছে।

রফতানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি পণ্যের বৈচিত্র আনতে হবে। একই সঙ্গে শুধু পোশাকের ওপর নির্ভরশীলতা না হয়ে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।

চলতি অর্থবছরের বড় খাতগুলোতেও রফতানি আয় কমেছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম হয়েছে। সাত মাসে কৃষিপণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি কমেছে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ। ৭ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ সময় প্লাস্টিক খাতে রফতানি আয় হয়েছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, যার লক্ষ্য ছিল ৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত ৭ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি কমেছে, অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। প্রথম ৭ মাসে চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে রফতানির টার্গেট সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

http://dailysangram.info/post/407715