২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১:০৬

নিত্যপণ্যের বাজারে আবারো অস্থিরতা

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারে আবারো অস্থিরতা শুরু হয়েছে। সবজিসহ বেশকিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই বাড়ছে চালের দাম। সেই সাথে ডাল, তেল ও চিনির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। তবে পেয়াঁজের দাম কিছুটা কমলেও এখনো একশ’র ঘরে বিক্রি হচ্ছে এ পণ্যটি। আর মসলার দামও চড়াই রয়ে গেছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রতি পেঁস ফুলকপি-বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। অথচ প্রতিবছর এই সময় শিম বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকায়। আর ফুলকপি-বাঁধাকপি পাওয়া যেত ১০ থেকে ১৫ টাকায়।

এদিকে বাজারে প্রতিটি তরতাজা দেশি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া গাজর ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। নতুন আলু ২০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শালগম ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা ও শিমের বিচি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে দেশী পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আগে প্রতি কেজি চীনা পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং পাকিস্তান ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১০০ টাকা ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে চীনা পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও আমদানি করা অন্য পেঁয়াজ ১১০ টাকা হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে আদা ও রসুনের দাম যেমন ঊর্ধ্বগতি ছিল তা এখনো কমেনি। চায়না থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুনের দাম ১৯০ টাকা, দেশি রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চায়না থকে আমদানিকৃত প্রতি কেজি আদা ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে চায়নার আদা-রসুনের দাম বাড়তি রয়েছে। দেশি রসুন বাজারে আসতে শুরু করেছে। এতে রসুনের দাম কিছুটা কমতে পারে।

বাজার করতে আসা আকবর আলী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি রাখতে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের কমতি নেই। প্রতিদিন হু হু করে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। এতে লাভবান হচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষজন।

এদিকে চালের বাজারে কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে চালের দাম। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পর্যাপ্ত চালের সরবরাহও আছে। তারপরও বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। বাজারে সব ধরনের চালের কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অসাধু চক্রের কব্জায় দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। এ চক্রের কারসাজিতে অতি প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম একের পর এক বাড়ছে। পেঁয়াজের বাজার বেসামাল করে রাখার পর চক্রটি এখন হাত দিয়েছে চালে। এদিকে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম কমছে। অথচ মিলারদের কারসাজিতে সব ধরনের চাল কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, চাল রপ্তানি শুরু হলে চালের দাম আরো বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি আছে। রপ্তানির অনুমতি নিতে আসা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত সরু ও সুগন্ধী চাল রপ্তানির অনুমোদন চেয়েছে। এমনিতেই বাজারে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে সরু চালের দাম বাড়ছিল। রপ্তানির অনুমোদন দেয়ার পর সরু চালের দাম কেজিতে হঠাৎ করে ৩-৪ টাকা বেড়ে গেছে।

এ পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের আয়ের সব টাকা চলে যাচ্ছে খাওয়া খরচে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন, চাল তো চীন থেকে আমদানি করতে হয় না। তাই চালের বাজারে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়ার কথা নয়। তারপরও কেন বাড়ছে? চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকদেরকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরনো সেই শক্তিশালী কারসাজি চক্রই এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় অধরাই থেকে গেছে চক্রটি। সরকারি নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় পণ্যের দাম বাড়ায় বলে তারা মনে করেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, গত এক মাসে শুধু সরু চালের দামই ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। সরু চালের কেজি ৫০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। মোটা চালের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকা ছিল এক মাস আগে। তা বেড়ে এখন ৩৫ টাকা হয়েছে। অন্যান্য চালের দামও কমবেশি বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল মজুত আছে।

এদিকে কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও দিনাজপুরে ধান-চালের দাম পাইকারি বাজারে প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে। কুষ্টিয়ার মোকামে মিনিকেট চালের দাম আবার বাড়ছে। ইতিমধ্যে গত দুই সপ্তাহে ২ টাকা বেড়েছে। মিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যমতে, গত রোববার কুষ্টিয়ার খাজানগরের মোকামে মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা দরে। মিলগেটেই ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে ৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

কাওরান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতারা জানান, মিনিকেট প্রতিকেজি বিক্রি করছি ৪৭ থেকে ৫৫ টাকা। নাজির শাইল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। আটাশ ৩৩ থেকে ৩৮ টাকা। পাইজাম ৩২ টাকা। আর গুটি স্বর্ণা (মোটা) ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে।

অন্যদিকে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট (সাধারণ) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকায়। মিনিকেট (উত্তম) বিক্রি হয়েছে ৫৬-৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪-৬০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা, এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩২-৩৫ টাকা।

গোশতের বাজারে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো গোশতের দাম একই রকম রয়েছে, বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫৫০ টাকা, খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কক মুরগি ১৮০ টাকা, পাকিস্তানী মুরগি ২১০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ ১৮০ টাকা, কৈ মাছ ২০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, সরপুঁটি ২০০ টাকা, রুই মাছ ২৫০ টাকা, ছোট মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, পাঙ্গাশ মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

http://dailysangram.info/post/407606