চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক তৈরি করতে কাটা হয়েছে পাহাড় - মো. রাশেদ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার, ১২:২১

পাহাড় ধ্বংসের ঠিকাদারি নিয়েছে চউক!

১০ কোটি টাকা জরিমানার পর ফের নোটিশ

পাহাড় কাটার অভিযোগে গত ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক) ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। এবার কেঁচো খুঁড়তে সাপই বেরিয়ে এসেছে। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের সঙ্গে ফৌজদারহাটের সংযোগ সড়ক করতে ১৮ পাহাড়ের ১৫টিতেই কোপ বসিয়েছে এ সংস্থা। নিয়ম না মেনে পাহাড় কাটায় সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আবারও নোটিশ দেওয়া হয়েছে চউককে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ফৌজদারহাট-বায়েজিদের সংযোগ সড়ক তৈরি করতে গিয়ে ১৮টি পাহাড়ের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছে চউক। পরিবেশ ও আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি এ সংস্থাটি নির্বিচারে পাহাড় কাটছে। তাদের কিছু শর্ত দেওয়া হলেও তার কোনোটিই মান্য করেনি তারা। ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি কোণে পাহাড় কাটার নির্দেশনা থাকলেও ১৮টি পাহাড়ের মধ্যে অন্তত ১৫টি খাড়াভাবে ৯০ ডিগ্রি কোণে কেটেছে চউক।

এদিকে শুধু পাহাড় কাটাই নয়, প্রাকৃতিক লেক ভরাট করারও প্রমাণ পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড চউকের অগোচরেই দেয়াল দিয়ে ভরাট করেছে লেক। পাহাড় কাটা ও লেক ভরাটের এ মহোৎসবে যোগ দিয়েছে স্থানীয়রাও। ছিন্নমূল আবাসনের নামে আরেকটি সংস্থা সেই সড়কের পাশে সাবাড় করেছে আরেকটি পাহাড়। আগে চউককে জরিমানা করলেও নতুন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ছিন্নমূল আবাসনকে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নোটিশ দেওয়া হয়েছে বায়েজিদ থানা পুলিশের এক এসআইকেও। তাদের সশরীরে হাজির হয়ে অধিদপ্তরের শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে।

স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্সের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা জঙ্গল সলিমপুর মৌজার এক নম্বর খাস খতিয়ানের ৩৫৯ নম্বর দাগের আনুমানিক সোয়া এক একর পাহাড় কেটেছে। তারা সবার চোখ ফাঁকি দিতে চারপাশে ১৫ ফুট উচ্চতার ইটের প্রাচীর নির্মাণ করে। এরপর শুরু করে পাহাড় কাটা ও লেক ভরাটের কাজ। প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার পাহাড় সাবাড় করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

ছিন্নমূল আবাসনের ২নং সমাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা এক নং খাস খতিয়ানের ৩৫৯ নং দাগে আনুমানিক তিন হাজার বর্গফুট পাহাড় কেটেছে। স্থানীয় বকু চৌধুরীর ছেলে আবুল কাশেম ছিন্নমূল আবাসন প্রকল্পের নামে এভাবে পাহাড় কাটে। বায়েজিদ থানার এসআই মো. নাছিমও একই প্রক্রিয়ায় পাহাড় কেটেছেন। কাটা পাহাড়ে টিনের ঘরও নির্মাণ করেছেন তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, 'সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য সিডিএকে পাহাড় কাটতে বলিনি আমরা। শর্ত অনুযায়ী আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড়ের মাটি কাটার কথা থাকলেও কাটা হয়েছে ১০ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ ঘনফুট। 'হিল কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান' অনুযায়ী পাহাড়ের ঢাল ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি কোণে কাটার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ পাহাড় কাটা হয় ৯০ ডিগ্রি কোণে খাড়াখাড়িভাবে। আবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনগণ আলাদাভাবে প্রকল্পের স্থানে পাহাড় কেটেছে। লেকও ভরাট করেছে। নতুন করে এটি প্রমাণ হওয়ায় তাদেরকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।'

চউকের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজিব দাশ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রার বিরুদ্ধে লেক ভরাটের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা আমাদের অবহিত না করেই লেক ভরাট করেছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর চউককে যে জরিমানা করেছে, তার বিরুদ্ধে আপিল করব আমরা।

লেক ভরাটের অভিযোগের ব্যাপারে স্পেকট্রার প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল হক বলেন, আমরা যথাযথভাবে অনুমতি নিয়েই প্রকল্পের কাজ করেছি। তারপরও কেন নোটিশ দেওয়া হলো বুঝতে পারছি না। অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে বুধবার (আজ) পরিবেশ অধিদপ্তরে যাব।

https://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/200225782/