মিলমালিকদের কারসাজিতে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও সিন্ডিকেট করে দুই সপ্তাহ আগে সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩০-৩২ টাকা। এছাড়া সরু চাল কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছুটা দুর্ভোগে আছেন খেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষ। রাজধানীর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলমালিকদের কাছে চালের কোনো সংকট নেই। তারা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে চাল বাজারে ছাড়ছে। এরই প্রভাব পড়ছে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। মিলাররা হঠাৎ গুজব ছড়ায় যে কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে বাড়তি দরে ধান কিনতে হচ্ছে। অথচ কৃষককে তারা ন্যায্যমূল্য দিচ্ছে না। বরং কম দামে ধান ক্রয় করে তারা মজুদ করেছে। সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩০-৩২ টাকা। নাজিরশাল ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা। মিনিকেট ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪৬-৪৮ টাকা। মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সি মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মিলাররা এখনও সংকট দেখিয়ে বাড়তি দরেই চাল বিক্রি করছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়তি দরেই চাল বিক্রি হচ্ছে। তাই মোকামে সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে। নয়াবাজারে চাল কিনতে আসা মো. মাসুম যুগান্তরকে বলেন, একটি বেসরকারি অফিসে অল্প টাকা বেতনে চাকরি করি। বেতনের টাকা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। কিন্তু কিছুদিন পর পর নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে গত বছর নভেম্বরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। পরে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিল মালিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর দাম কমে আসে। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকার পর চলতি বছরের শুরুতে মিলাররা ফের তৎপর হয়ে ওঠায় বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। জানতে চাইলে দেশের চালের বৃহৎ পাইকারি বাজার বাদামতলি ও বাবুবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা চালকল মালিকদের দিকেই তাকিয়ে থাকি। তারা চালের যে দাম ঠিক করে আমরা সে দামেই কিনে বিক্রি করি। যদি দাম বাড়ে বা কমে মিলমালিকরাও বাড়ায় বা কমায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা সেই দামে কিনে বিক্রি করে। চালের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়। দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন জানান, সরকারিভাবে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। মিলাররাও চাল কিনছে। দেখা যাচ্ছে সরকারের বাড়তি দরের কারণে কৃষকরা আমাদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছে না। তাই আমাদেরও বাড়তি দরে ধান কিনতে হচ্ছে। ফলে চাল প্রক্রিয়াজাত করতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। এ জন্য চালের দাম বেড়েছে। জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, হঠাৎ করে চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক। কারণ দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।